ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫টি অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে ভারত

৭৪ অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন ॥ লক্ষ্য ১০০ অঞ্চলে ১ কোটি কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৭৪ অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন ॥ লক্ষ্য ১০০ অঞ্চলে ১ কোটি কর্মসংস্থান

এম শাহজাহান ॥ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। গত আট বছরে জমি পাওয়া সাপেক্ষে ৭৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সরকারী-বেসরকারী খাতের ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিদেশীদের মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এছাড়া চীন, জাপানসহ উন্নত দেশগুলো থেকে এ খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এমন ব্যাপক আগ্রহ দেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারী খাতের সবচেয়ে বড় মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে ২৫০টি শিল্প প্লট তৈরির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এই এসইজেডে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারী খাতের দুটো ইজেড থেকে পণ্য রফতানি শুরু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ তথ্য। সূত্র মতে, বিশ্বব্যাপী ইজেডগুলোতে বিনিয়োগ ধারণা জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরের বছর ২০১০ সালে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দেয়। সরকারের এই ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা। মূলত এরপর থেকে ইজেড নিয়ে দেশের সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বাড়ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্নস্থানে ৮০ হাজার একরেরও বেশি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে ৭৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার মধ্যে বেসরকারী খাতের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে ২০টি। গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রাক-যোগ্যতা নিবন্ধন পাওয়া অঞ্চলগুলোর প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতেই ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। আর এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ হাজার ৯৯৫ জনের। গত কয়েক বছর ধরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সরকারের এই প্রচেষ্টা সফল করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসইজেডগুলোতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, বেজা এখন পর্যন্ত ১৮টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় প্রাক-যোগ্যতা লাইসেন্স দিয়েছে। যার মধ্যে ছয়টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল পেয়েছে চূড়ান্ত লাইসেন্স। চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে বে ইকোনমিক জোন ও মেঘনা ইকোনমিক জোন থেকে রফতানি শুরু হয়েছে। বাকিগুলোও ধীরে ধীরে এ প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে বর্তমানে ২৮টি এসইজেডের উন্নয়নের কাজ চলছে। ১৫ বছরের মধ্যে সরকার ১০০টি এসইজেড গড়ে তুলতে চায়। এখানে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর ৪০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ভারত ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে ॥ বিনিয়োগ বাড়াতে ভারত এদেশে প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে যাচ্ছে। বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনে আরও কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করবে ভারত। বাংলাদেশের মংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে দেশটির হিরানান্দানি গ্রুপ। ইতোমধ্যে ওই গ্রুপের উর্ধতন কর্মকর্তারা মংলায় প্রস্তাবিত ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) প্রক্রিয়াকরণ কমিটির সভায় হিরানান্দানি গ্রুপকে বাছাই করা হয়েছে। এছাড়াও সভায় ভারতের মোট তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় জানানো হয়, হিরানান্দানি গ্রুপ প্রতিনিধিরা মংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় কয়েকটি অবকাঠামো নির্মাণের অনুরোধ করেছে। বাকি দুটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে কুষ্টিয়ায় ভেড়ামারা ও চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জে ভারতের জন্য দুটি আইসিটিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সূত্র মতে, বাংলাদেশে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভারত মোট ২৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। যার মধ্যে আইসিটিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব বিনিয়োগকারীদের জন্য খোলা থাকবে। ওই সভায় আরও বলা হয়, মংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে হিরানান্দানি গ্রুপের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করা হবে। এ জন্য একটি খসড়া সমঝোতা স্মারক ওই গ্রুপ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়া গেলে প্রসেসিং কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। পরে এ বিষয়ে ভারতীয় ওই গ্রুপটির সঙ্গে একটি চুক্তি সই করবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় চীন, ভারত, জাপানসহ উন্নত দেশগুলো থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এমন ব্যাপক আগ্রহ দেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৫ বছরের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় এবং ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, এসইজেডগুলোতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। জমি একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এসইজেড করায় সেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে। এ কারণে বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারা এসইজেডগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। জানা গেছে, মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ডেভেলপার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল (প্রথম পর্যায়) ডেভেলপার নিয়োগের জন্য নির্বাচিত ডেভেলপারকে লেটার অব এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। নাফ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের ২১২ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৪৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মীরসরাই ও নৌ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এ অঞ্চল দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জিডিপি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
×