ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খেলোয়াড়দেরই কৃতিত্ব দিলেন কোচ ছোটন

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খেলোয়াড়দেরই কৃতিত্ব দিলেন কোচ ছোটন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞ যে আমরা মূলপর্বে যাওয়ার পথে প্রথম ধাপ ভালভাবে অতিক্রম করেছি। মেয়েদের জানাচ্ছি স্যালুট।’ কথাগুলো বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের সফল কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। রবিবার তার শিষ্যারা ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ভিয়েতনামকে এবং এএফসি অনুর্ধ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কমলাপুর স্টেডিয়ামে খেলা শেষে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ছোটন আরও বলেন, ‘এই মেয়েদের নিয়ে আসলে আমি কি বলব। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আসলে কঠোর পরিশ্রম করলে যে ফল আসে সেটা আবারও প্রমাণ হলো। আমাদের মেয়েরা নিজেদের খেলা খেলেছে। ৯০ মিনিট পর্যন্ত তারা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছিল। একটা সময় দেখা গিয়েছিল প্রথমার্ধে ভিয়েতনাম একটু লড়াই করেছে। কিন্তু বিরতির পর ফিটনেসের কাছে তারা হার মেনেছে।’ মহিলা ফুটবলে এটা ছোটনের ষষ্ঠ সাফল্য। তিনি আরও যোগ করেনÑ ‘আমাদের এখানেই বসে থাকলে চলবে না। সামনে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ধরে রাখতে হবে।’ পরবর্তী রাউন্ডে আরও কী কী কাজ করতে হবে? ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যাচ্ছি। প্রথম ম্যাচে আমাদের মেয়েরা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেনি। এরপর ভুলত্রুটিগুলো কাটিয়ে ওঠে। আসলে প্রত্যেক ম্যাচেই মেয়েরা উন্নতি করেছে। শেষ ম্যাচে ভিয়েতনামকে দেখুন, তারা শক্তিশালী। কিন্তু পুরো ৯০ মিনিটই আমাদের মেয়েরা আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। তাদের কোন সুযোগই দেয়নি।’ ম্যাচের আগে মেয়েদের কি বলে উজ্জীবিত করেছিলেন? ‘ম্যাচের আগে সবাই বলেছি তোমরা খেলবে, ভুলত্রুটিগুলো শুধরাবে। কারণ ভুটানে সাফের ফাইনালে মেয়েরা ভালভাবে খেলতে পারেনি। আজকে বারবার ওই ম্যাচের কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি ভুটান থেকে অনেক কিছু শিখেছে মেয়েরা। আজকে তারা আর ভুল করেনি।’ ছোটনের জবাব। ম্যাচে জিতলেও প্রচুর গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘খেলায় মিস তো হবেই। তবে মেয়েদের অবশ্যই কৃতিত্ব দেব সুযোগগুলো তো তারাই তৈরি করেছে। আবার সুযোগগুলো তারাও মিস করেছে। আজকে দেখেন কম সুযোগ পেয়েছে, যেটাই পেয়েছে তা কিন্তু কাজে লাগিয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে তারা উন্নতি করেছে। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের মূল স্তম্ভ আঁখি খাতুন। ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে এক গোল করেছে সে। জয়ের পর তার প্রতিক্রিয়া ছিল এরকম, ‘দর্শকদের ধন্যবাদ জানাই মাঠে এসে আমাদের সমর্থন দেয়ার জন্য। আমরা খুবই খুশি যে ভিয়েতনামকে গোলে হারিয়েছি। সামনে যেন আরও ভাল করতে পারি সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাচ্ছি।’ ম্যাচের অপর গোলদাতা তহুরা খাতুনের ভাষ্য, ‘প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই করেছি। ছোটন স্যার বলেছিল যে তোমরা নিজেদের মতো করে খেল। আমরা অনেক কষ্ট করছি। সকাল ৬টা, আবার দুপুর ১২টায় অনুশীলন করেছি। ভুটান থেকে আসার পরে বাসাই গিয়ে এক সপ্তাহের মতো বিশ্রাম নিয়েছি। এরপর আমরা অনুশীলন শুরু করি। সাফে হারের পর আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। তবে স্যাররা আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। আসলে ওই হারের পর আমাদের মাঝে একটা জেদ কাজ করে, যে এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বে জিততেই হবে। সাফের ব্যর্থতা ভুলে আমরা কঠোর পরিশ্রম করি, তার ফল এখন পেয়েছি।’ হ্যাটট্রিক না হওয়া প্রসঙ্গে তহুরার মন্তব্য, ‘আসলে আমি একটা গোল করছি, আরেকটা আঁখি করছে। আমাদের দু’জনের গোলেই জিতেছি। দল জিতেছে এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। ভুটানে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছিলাম। কিন্তু দল জিততে পারেনি, তখন অনেক কষ্ট পেয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি পেয়েছি, কিন্তু দল তো কিছু পায়নি। আর এবার আমি গোল করেছি, আবার দল জিতেছি, এতেই বেশি খুশি। হ্যাটট্রিক করতে পারিনি বলে আক্ষেপ নেই।’ কোচ ছোটন জানান, পরবর্তী রাউন্ড নিশ্চিত করলেও কোন বড় উদযাপন করবেন না তারা। এখন তাদের পরবর্তী মিশন সাফ অনুর্ধ-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ। যেখানে অংশ নিতে ২৬ অক্টোবর ভুটানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে ছোটনের শিষ্যারা। এই দলের ১৩ ফুটবলার আছে সাফ দলে। আর তাই এখন রিকভারি প্রয়োজন দলটির। আপাতত সেদিকেই নজর দিচ্ছেন ছোটন।
×