ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাসনিম তামান্না হক

যৌনবাহিত রোগ প্রয়োজন সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 যৌনবাহিত রোগ প্রয়োজন সচেতনতা

নারী-পুরষের মাঝের জৈবিক সম্পর্ক একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে এ সম্পর্ক যদি অনিরাপদ হয় তবে তা হতে পারে আত্মঘাতী। একদিকে যেমন তা অনিচ্ছাকৃত গর্ভ ধারণের কারণ তেমনি তা হতে পারে ভয়ঙ্কর কিছু অসুখের কারণ। যেগুলোকে আমরা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা সংক্ষেপে এসটিডি বলি। কাজেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরী। এসটিডি মূলত বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশাস ডিজিজ যা অনিরাপদ শারীরিক সংসর্গের ফলে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। এসটিডি-এর বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। যার মাঝে কিছু প্রচলিত বা পরিচিত নাম হচ্ছে- জেনিটাল হারপিস/ গনোরিয়া/ সিফিলিস/ ক্ল্যামাইডিয়া/ এইচআইভি/ এইডস/ এইচপিভি/ হেপাটাইটিস বি/সি এইচআইভি এবং এইডস নামটির সঙ্গে কমবেশি অনেকেই পরিচিত। এইচআইভি মূলত একটি ভাইরাস (হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস) আর এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার পর অসুখের লাস্ট স্টেইজ-এর নামই এইডস (এ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি সিন্ড্রোম)। এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হবার দীর্ঘ সময় পর সাধারণত তা এইডস-এর রূপ নেয়। তবে একবার যদি আপনি এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হন তবে এই ভাইরাস আজীবনের জন্য আপনার দেহে রয়ে যায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতে থাকে। ফলে সহজেই যক্ষ্মা, ফাংগাল ইনফেকশন এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বহুগুণে বেড়ে যায়। সিফিলিস শারীরিক সম্পর্ক থেকে ছড়াতে পারে এমন আরেকটি ছোঁয়াচে রোগ সিফিলিস। এটি মূলত একটি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন যা সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে টারশিয়ারি সিফিলিসের রূপ নিতে পারে। বাতের সমস্যা, ব্রেন ড্যামেজ, অন্ধত্ব এমনকি স্ট্রোক এবং হৃদরোগেরও কারণ হতে পারে। গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে সিফিলিস রক্তের মাধ্যমে অনাগত সন্তানের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। গনোরিয়া সিফিলিসের মতোই আরেকটি ব্যাকটেরিয়াজনিত এসটিডি হচ্ছে গনোরিয়া, যা অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে অন্যের দেহে ছড়ায় এবং নারী দেহে তা অনাগত শিশুর অন্ধত্বের জন্যও দায়ী হতে পারে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে প্রায় এক দশমাংশ পুরুষ এবং প্রায় ৫০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রেই এই অসুখের কোন উপসর্গ প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়ে না। তাই সবসময় প্রোটেকশন গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। এইচপিভি ইউটেরাস বা জরায়ু ক্যানসার যা ব্রেস্ট ক্যান্সারের পরই সারাবিশ্বে নারীর সবচেয়ে কমন ক্যান্সার, এর জন্য দায়ী এইচপিভি বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ছড়ানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিও কিন্তু অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক। জরায়ু ক্যান্সারের পাশাপাশি গলা, পায়ুপথ ইত্যাদির ক্যান্সারের জন্যও দায়ী এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। হেপাটাইটিস বি হেপাটাইটিস বি নামটির সঙ্গে কমবেশি সবাই পরিচিত। এর ভয়াবহ পরিণতি লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিউর এবং ক্যান্সারের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। প্রতিরোধে করণীয় অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে না জড়ানো এ অসুখগুলো থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায়। তাই প্রতিবার সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখা জরুরী যে, এসটিডি-এর উপস্থিতি কিন্তু খালি চোখে বোঝা প্রায় অসম্ভব এবং অনেক সময়ই তা নীরব ঘাতক সেজে আপনার পার্টনারের দেহে উপস্থিত থাকতে পারে, যা আপনার অজান্তেই আপনার দেহেও বাসা বাঁধতে পারে। হতে পারে আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটিকে বিশ্বাস করেন। তবে মনে রাখা জরুরী, যে কোন ইনফেক্টেড ব্যক্তির রক্ত গ্রহণের মাধ্যমে, এমনকি ইনফেক্টেড ব্যক্তির ব্যবহৃত ক্ষুর/ব্লেড দিয়ে কোথাও কেটে গেলেও কিন্তু এই ইনফেকশন আপনার পার্টনারের দেহে বাসা বাঁধতে পারে। এমতাবস্থায় কনডম ব্যবহার না করার ফলে তা আপনার ও আপনার শিশুর জন্য মরণঘাতী হতে পারে। কাজেই সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে নিয়মিত কনডম ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। সাবধান হোন এবং নিজেকে ও আপন মানুষগুলোকে নিরাপদ রাখুন।
×