ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে ১৯ একর জমি বিরোধে ৬০ পরিবারের মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০২:৪৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দিনাজপুরে ১৯ একর জমি বিরোধে ৬০ পরিবারের মানবেতর জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ ৩ বছর ৮ মাস অতিবাহিত হলেও দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হাবিবপুর চিরাকোটা গ্রামের আদিবাসীদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ আজও মিমাংসা না হওয়ায় আদিবাসীদের ৬০টি পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সোমবার চিরাকোটা গ্রামের আদিবাসী নেত্রী ও মামলার বাদী নিলিমা হেমব্রম জানান, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারী সকাল ১০টায় জহুরুল ও জিয়াউল গং শতাধিক ভুমিদস্যুদেরকে নিয়ে আদিবাসীদের ভোগদখলীয় সাড়ে ১৯ একর জমিতে জবর দখল ও বোরো ধান ক্ষতিসাধন করে। এসময় আদিবাসীরা বাধা দিলে ভুমিদস্যুরা আদিবাসী মহিলা ও পুরুষদের উপর চরম নির্যাতন চালায়। তাদের ঘর-বাড়ী অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালায়। এই ঘটনার পর ওই এলাকার সংসদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মেজবাহউদ্দীন কামাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। তারা আশ্বাস দিয়েছিল এই এলাকায় শাস্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। অস্থায়ীভাবে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। তারা বলেছিল আদিবাসীদের শান্তিপূর্ণ বসবাসে যারা বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। আদিবাসীদের ভোগদখলীয় সাড়ে ১৯ একর জমি তারাই চাষাবাদ করবে। এতে কেউ বাধা সৃষ্টি যাতে না করতে পারে সে জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজও পর্যন্ত আদিবাসীদের ভোগদখলীয় সাড়ে ১৯ একর জমি তারা ভোগ দখল করতে পারছেন না। সাড়ে ১৯ একর জমি সিএস খতিয়ানের মালিক জমিদার বোরকা কান্ত গাঙ্গুলীর নিকট থেকে ভুয়া জাল দলিল সৃষ্টি করে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভলিউম পুড়া বালামের দলিল দেখিয়ে জহুরুল, জিয়াউল গং মালিক সেজেছে। সাড়ে ১৯ একর জমির মধ্যে সাড়ে ৩ একর জমি জহুরুল, জিয়াউল গং জোর করে দখল করে চাষাবাদ করছে। অবশিষ্ট ১৬ একর জমি ঘটনার পর থেকে পতিত পড়ে রয়েছে। আদিবাসীরা ভুমিদস্যুদের ভয়ে ওই জমিতে চাষাবাদের জন্য যেতে পারে না। যারা আগে সারা বছর ঘরের ভাত খেত তারা এখন দিন মজুরের কাজ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাস ছিল যে পর্যন্ত ওই সাড়ে ১৯ একর জমির কোন সুরাহা না হয় সে পর্যন্ত উভয় পক্ষ জমিতে কোন চাষাবাদ করতে পারবেন না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ৭ মাস পুলিশ ক্যাম্প থাকার পর সরিয়ে নিলে ভুমিদস্যু জহুরুল ও জিয়াউল গংরা জোরপূর্বক চাষাবাদ শুরু করে। এসময় ভয়ে আদিবাসী সম্প্রদায় স্থানীয় মারথা সরেন, সাবিনা হেমরম, রুপালি হেমরম, সনতি সরেন, জসেব টুডু, মারথা সরেনসহ স্থানীয় আদিবাসী পরিবাররা তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে জিয়াউল গংরা নানা বিধি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ফলে তারা ওই গংদের আতঙ্কে সন্তান-সন্তন্তি নিয়ে বড় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে ওই এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা অবনতি ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কাবোধ করছে। এছাড়াও তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠিয়েও প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। আদিবাসী নেত্রী নিলিমা হেমরম ১১৭ জনের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি অভিযোগ পেশ করেন। মামলাটি অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান সাবিনুর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি। বিভিন্ন সংগঠনের সহায়তা ও সামাজিক প্রতিকারের মাধ্যমে তাদের জমি ফিরে পাওয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
×