ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে ওঠার রসদ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফাইনালে ওঠার রসদ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ হঠাৎ করেই ছন্দপতন ঘটেছিল। হতচ্ছারা দলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এবার এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে উড়িয়ে দিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করেছিল টাইগাররা। সেই দলটি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ক্রমবর্ধমান ক্রিকেট শক্তিতে পরিণত হওয়া আফগানিস্তানের কাছে ১৩৬ রানের লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করে এবং সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচেও ভারতের কাছে ৭ উইকেটে বিধ্বস্ত হয়ে পুরনো যুগের বাংলাদেশ দলের চেহারাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। একটি জয়ের প্রয়োজন ছিল, ডু অর ডাই ম্যাচে আফগানিস্তানকে সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ রানে হারিয়ে আবার জয়ের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ দল। মরুর দেশ আরব আমিরাতে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা, গড়ে ৪৪ ডিগ্রী তাপমাত্রার তীব্র গরমে ৪ দিনে ৩ ম্যাচ দুই ভেন্যুতে খেলাটাই হয় তো কাল হয়ে উঠেছিল। অবশেষে রবিবার রাতের এই জয়ে এখন ফাইনালে ওঠার আত্মবিশ্বাসও পেয়ে গেছে। বুধবার চলমান এশিয়া কাপের অঘোষিত সেমিফাইনালে আবুধাবিতে পাকিস্তানের মুখোমুখি বাংলাদেশ। জিততে পারলেই তৃতীয় বারের মতো ফাইনাল খেলবে টাইগাররা। এশিয়া কাপের এবার সময়সূচীটা বেশ আশ্চর্যজনক! গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছিল আবুধাবিতে গত বৃহস্পতিবার। পরদিনই দুবাইয়ে এসে তাদের খেলতে হয়েছে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে। এমনিতেই প্রথম ম্যাচে অপরিহার্য ওপেনার ও অন্যতম ব্যাটিং শক্তি তামিম ইকবালের ইনজুরি দলকে অগোছাল করে তুলেছিল। তার অভাব আর পূরণ হয়নি। তামিমের সঙ্গী লিটন দাস ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী থাকলেও তাকে নিয়মিত খেলাতে হয়েছে এবং টানা তিন ম্যাচে অনভিজ্ঞ নাজমুল হোসেন শান্ত তার সঙ্গী হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে তিন ম্যাচেই উদ্বোধনী জুটি হয়েছে ব্যর্থ। সেই প্রভাবটা পরবর্তীতে ব্যাটিং অর্ডারেও পড়েছে। ইনজুরির কবলে পড়েও মিডলঅর্ডারের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীম খেলেছেন। এমনকি দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও ইনজুরি নিয়ে খেলছেন। সবমিলিয়ে একেবারে অসহায় একটি দলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। যা ম্যাচের ফলাফলেও নগ্নভাবে ফুটে ওঠে। রবিবার এমন পরিস্থিতিতে শুধু চলতি আসরের লড়াইয়ে টিকে থাকার লড়াই নয়, নিজেদের মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামও ছিল বাংলাদেশের। সেই লড়াইয়ে অনেক জুয়া খেলতে হয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারে নতুন করে অদল-বদল করা হয়। তিন নম্বরে নামেন প্রথম ম্যাচে চমক দেখানো মোহাম্মদ মিঠুন। সাকিব দুই ধাপ পিছিয়ে ৫ নম্বরে এবং মাত্র একদিন আগে বাংলাদেশ থেকে উড়ে গিয়ে ওপেনার হিসেবে পরিচিত ইমরুল কায়েস প্রথমবারের মতো ৬ নম্বরে। এটাও মরণঘাতী হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, তাকে অপরিচিত পজিশনে নেমেও দারুণ সঙ্গ দেন ইমরুল। ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশ দলের বিপর্যস্ত ব্যাটিংকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যান তারা। লড়াই করার মতো পুঁজি নিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে টাইগাররা। আগে অনেকবার শেষ কয়েকটি ওভারে পরিকল্পনার ব্যর্থতা এবং নিজেদের মেলে ধরার ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ। তাই বরাবরই ম্যাচের ভাগ্য ডেথ ওভারে গড়ালে একেবারে অগোছাল হয়ে যাওয়া চিরাচরিত হয়ে গিয়েছিল। তীব্র ¯œায়ুচাপ কাটিয়ে ওঠার জন্যও আফগানদের বিপক্ষে এ জয়টি নতুন মানসিক শক্তি দিয়েছে দলকে। মরুভূমির দেশ আরব আমিরাতে আগে কখনও এই দলটি খেলেনি। এবার হুট করে সেখানে গিয়ে টানা ম্যাচ খেলার চাপেও পড়তে হয়েছে অসহনীয় গরমে। হয়তো সেটিও ঠিক ছিল, কিন্তু ৪ দিনে ৩ ম্যাচ খেলার জন্য দুইবার ভ্রমণ করাটাও ক্রিকেটারদের ফিটনেসে প্রভাব ফেলেছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে রবিবারের ম্যাচে। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার হাত, পায়ে টান ধরেছে এবং অনেকেই ডিহাইড্রেশনে ভুগেছেন। তবে সবকিছুই জয় করে এখন আবার নিজেদের ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। জয়ের ধারায় ফেরার ব্যবধান যেমনই হোক এটা পুরো দলের মধ্যে আবার আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। শেষ ওভারে হেরে যাওয়ার বৃত্ত ভেঙ্গে গেছে, আক্ষেপ কেটেছে এবং এর ফলে ডেথ ওভারে নিজেদের ¯œায়ুর চাপ অনেকখানিই কমে যাবে পরবর্তী সময়ে। এখন এই নতুন করে ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে আরেকটি লড়াইয়ে নামতে পারবে বাংলাদেশ দল। এবার এশিয়া কাপে খেলার জন্য দেশ ছাড়ার আগে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারই ফাইনালে খেলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলেন। সেই আশা বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছিল টানা দুই ম্যাচের বাজে হারে। কিন্তু এরপরও সাকিব ও মাশরাফি প্রত্যয় জানিয়েছিলেন ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ করার সুযোগ আছে। একটি জয়ে সেটা সত্য হওয়ার পর্যায়ে এসেছে বাংলাদেশ দল। বুধবার আবুধাবিতেই পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। সে ম্যাচটি হয়ে গেছে এখন সেমিফাইনাল। ইতোমধ্যেই ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করায় এবং আফগানিস্তান আসর থেকে ছিটকে যাওয়াতে এই সমীকরণ দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ম্যাচে বিজয়ীরাই খেলবে ফাইনালে। অর্থাৎ আরেকটি ডু-অর-ডাই ম্যাচ টাইগারদের। সেই ম্যাচে লড়াইয়ের জন্য অনেক রসদই এখন আছে। ২০১২ এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ দল, সেবার পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে রানার্সআপ হয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপ ছিল টি২০ ফরমেটের। এবারও ফাইনালে ওঠে টাইগাররা। কিন্তু ভারতের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। আরেকটি ফাইনাল এবার হাতছানি দিচ্ছে। পাক বাধা পেরোতে পারলেই তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ দল।
×