ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিস জাপানের আদর্শ ওসাকা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মিস জাপানের আদর্শ ওসাকা

জিএম মোস্তফা ॥ মাত্র বিশ বছর বয়স। এই সময়ের মধ্যেই বিশ্ব টেনিস দুনিয়ার নজর কুড়িয়েছেন নাওমি ওসাকা। সদ্যসমাপ্ত ইউএস ওপেনের ফাইনালে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে দেন তিনি। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, জাপানের ইতিহাসেই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেজর কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন নাওমি ওসাকা। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব টেনিস দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচিত ওসাকা। তার প্রশংসায় এবার পঞ্চমুখ দুই বছর আগে মিস জাপানের মুকুট পরা প্রিয়াঙ্কা ইয়োশিকাওয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নাওমি নিঃসন্দেহে একজন রোল মডেল। তার জন্য জাপানের গর্ব করা উচিত...। সে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।’ ১৬ অক্টোবর, ১৯৯৭ সালে জাপানের ওসাকাতে জন্মগ্রহণ করেন ওসাকা। তার মা জাপানী আর বাবা হাইতির। ২০১৩ সালে পেশাদার টেনিস শুরু করেন নাওমি। তিন বছর বয়সেই নিউ ইয়র্কে চলে আসেন তিনি। এখন ফ্লোরিডার মিয়ামিতে প্রশিক্ষণ নেন। সাসচা বাজিনের কাছে টেনিসের পাঠ নেন নাওমি। এই সাসচাই সেরেনাকে আট বছর ট্রেনিং দিয়েছেন। নাওমি ২০১৪ সালে অকল্যান্ডের ওয়েস্ট ক্লাসিকে ডব্লিউটিএ ট্যুরের প্রথম মেইন-ড্র’তে আসেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম অভিষেক হয় কোয়ালিফায়ার হিসেব। টুর্নামেন্টের ১৮তম বাছাই এলিনা সিতোলিনার বিপক্ষে প্রথম রাউন্ডে জয় পান। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়া আজারিঙ্কার কাছে হেরে যান তিনি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রথমবার ক্যারিয়ারে প্রথম এক শ’র মধ্যে আসেন। এ বছরের মার্চে ইন্ডিয়ান ওয়েলস জিতে প্রথম ডব্লিউটিএ খেতাব পান তিনি। সেবার মারিয়া শারাপোভা, ক্যারোলিনা পিসকোভা ও সিমোনা হ্যালেপের মতো তারকাদের হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর সম্প্রতি ইউএস ওপেনেই বাজিমাত করেন ২০ বছরের এই তরুণী। শুধু তাই নয়, ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের পর সদ্যসমাপ্ত প্যান প্যাসিফিক ওপেনেও দুর্দান্ত খেলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ফাইনালে হেরে যান নিজের দেশের সমর্থকদের সামনে। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তিনি চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভার কাছে হার মানেন। এর আগে ২০১৬ সালেও এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের খুব দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন ওসাকা। সেবারও ফাইনালে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডুবেন তিনি। এদিকে, দুই বছর আগেই বর্ণবিদ্বেষকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘মিস জাপান’ খেতাব জিতেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রিয়াঙ্কা ইয়োশিকাওয়া। তার বাবা কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। মা একজন জাপানী। জাপানে প্রতিবছর সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিতে আসত শ্বেতাঙ্গ জাপানী সুন্দীরাই। অন্য বর্ণের বা শংকর বর্ণের কেউ তা কোনদিনই পায়নি। তবে ২০১৫ সালে কৃষ্ণাঙ্গ আরিয়ানা মিয়ামোতো মিস ইউনিভার্স জাপান খেতাব জেতার পর থেকেই সারাদেশে হৈচৈ শুরু হয়। একদলের ব্যাখ্যা ছিল, শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্য কোন বর্ণের বা মিশ্র বর্ণের কারও এই খেতাব পাওয়ার অধিকার নেই। শুধু খাঁটি জাপানীরাই এই খেতাব পাওয়ার যোগ্য। কোন ‘হাফু’ (জাপানী ভাষায় এর অর্থ মিশ্র বা শংকর বর্ণের কেউ) এই খেতাব পেতে পারে না। তবে আরিয়ানার খেতাব পাওয়া প্রিয়াঙ্কার সাহস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ বর্ণবিদ্বেষের কারণে জাপানে প্রতি পদে অসহনীয় অপমান সহ্য করতে হয়েছে তাকে। এ বিষয়ে প্রিয়াঙ্কা নিজে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘আমি জাপানী। কিন্তু তবুও আমার বিশুদ্ধতা নিয়ে আমাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। আমার বাবা ভারতীয়। এবং তার জন্য আমি গর্বিত। তবে তার মানে এই নয় যে আমি জাপানী নই।’
×