ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির আরেকটি মাইলফলক

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাশরাফির আরেকটি মাইলফলক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাঁচা মরার লড়াইয়ে দারুণ এক অর্জন। স্মরণীয় ম্যাচে অবিস্মরণীয় কীর্তি। বাংলাদেশী কোন বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে প্রথম ২৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পাকিস্তানী স্পিডস্টার শোয়েব আখতারকে আগেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে রবিবারের ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে এই কীর্তিময় অর্জনের মালিক হলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। ১৯৪ ম্যাচে এখন তার ৩০.৯৯ গড়ে উইকেট ২৫০! যদিও বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ২৪৯ উইকেট নিয়েছেন, অন্য উইকেটটি তিনি লাভ করেন এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে খেলে। আর কিছুদিন পরেই ৩৫ বছরে পা দেবেন মাশরাফি। ক্যারিয়ারের শেষ মুহূর্তে এসে নানা সময়েই তার দলে থাকা নিয়ে বেশ কিছু ক্রিকেটবোদ্ধা সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার এলোমেলো বোলিং নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন। যদিও গত এক বছরে বাংলাদেশের পক্ষে উইকেট শিকারে সবার ওপরে তিনিই। অবশেষে, সেই আফগানদের বিপক্ষেই ফিরতি ম্যাচে নিজেকে আরেকবার চেনালেন তিনি। আর সেই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য বাঁচা মরার। সাধারণত স্লগ ওভারগুলোতে বোলিং করেন না মাশরাফি। নিজের স্পেল শেষ করে ফেলেন আগেভাগেই। তবে রবিবার টানটান উত্তেজনার ম্যাচে তার বোলিং করতেই হয়েছে শেষদিকে। একাদশে পেসারের ঘাটতি থাকায় নিজের কাঁধেই দায়িত্বটা তুলে নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। তিন স্পেলে বোলিং করেছেন যার মধ্যে প্রথম দুই স্পেলে ৬ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে বাজে বোলিংয়ের প্রদর্শনীটাই নিশ্চিত হয়েছিল। তবে স্লগ ওভারে তিনি জ্বলে ওঠেন দলের চরম প্রয়োজনীয় মুহূর্তে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্পেলের ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে তুলে নেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেট। আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাই এবং অর্ধশতক হাঁকানো ব্যাটসম্যান হাশমতুল্লাহ শহিদী ক্রমেই বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয়ার হুমকি হয়ে উঠছিলেন। এ দু’জনকেই সাজঘরে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৭১ রান করা হাশমতুল্লাহকে বোল্ড করে দিয়েই অনন্য কীর্তির মালিক হন মাশরাফি। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অথচ সেজন্য অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে ‘নড়াইল এক্সপ্রেসকে’। ১৭ বছরের ক্যারিয়ার হলেও শুধুমাত্র ইনজুরির কারণে তিনি প্রায় ৫ বছর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে নামতে পারেননি। ৭ বার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করানোর পরও টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। তার ১০ বছর পর আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি খেলেছেন ২০ ওয়ানডে বেশি! ক্যারিয়ারজুড়ে অন্যতম অপরিহার্য বোলার ছিলেন তিনি বাংলাদেশের। পেসস্তম্ভ মাশরাফি পুরোটা সময় পূর্ণ ফিটনেসে খেলতে পারলে এখন হয়তো ২৫০ নয়, ৩৫০ কিংবা ৪০০ উইকেটও থাকতে পারত নামের পাশে। সেই আক্ষেপটা বাদ দিলেও এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা বোলার তিনি। মাশরাফির পরেই আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি ১৯২ ম্যাচে ২৯.৬২ গড়ে এখন পর্যন্ত শিকার করেছেন ২৪৪ উইকেট। সর্বকালের সবচেয়ে গতিধর পেসার শোয়েব আখতার অবশ্য ১৬৩ ম্যাচেই ২৪৭ উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি এখন মাশরাফির পেছনে। শুধু তাই নয়, মাশরাফির পেছনে পড়ে গেছেন অনেক কিংবদন্তি পেসারও। সে তালিকায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল জনসন (২৩৯), ইংল্যান্ডের ড্যারেন গাফ (২৩৫), ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ (২২৭) ও কার্টলি এ্যামব্রোস (২২৫), অস্ট্রেলিয়ার ক্রেইগ ম্যাকডারমট (২০৩), পাকিস্তানের ইমরান খান (১৮২)। এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাশরাফি ২৫তম বোলার। আর পেসারদের তালিকায় ১৭তম। আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই খেলবেন মাশরাফি। ততদিনে আরও ওপরে ওঠার সুযোগ রয়েছে তার। খুব কাছাকাছিই আছেন ভারতের কপিল দেব (২৫৩), দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া এনটিনি (২৬৬), পাকিস্তানের আব্দুর রাজ্জাক (২৬৯), ইংল্যান্ডের জেমস এ্যান্ডারসন (২৬৯), দক্ষিণ আফ্রিকার এ্যালান ডোনাল্ড (২৭২) ও জ্যাক ক্যালিস (২৭৩), ভারতের জহির খান (২৮২) ও অজিত আগারকারদের (২৮৮) মতো পেসাররা। মাশরাফি অবশ্য এ বয়সেও দেশের সব বোলারকে টেক্কা দিয়ে সামনে থেকে এগিয়ে চলেছেন। ২০১৭ থেকে শুরু করে ২৫ ম্যাচে তিনি ৩১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলিং পারফর্মার। ২৫০ উইকেটের মধ্যে বাংলাদেশের জার্সিতে ২৪৯ উইকেট পাওয়া মাশরাফি অচিরেই যে আরও অনেক কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে যাবেন সেটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
×