ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নন্দিত প্রযোজনা জাগরণী থিয়েটারের ‘আমি ও শ্যামা’

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নন্দিত প্রযোজনা জাগরণী থিয়েটারের ‘আমি ও শ্যামা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমি ও শ্যামা’ নামটি শুনে অনেকটাই রবীন্দ্রনাথের শ্যামার কথা মনে পড়ে যায়। সেই আগ্রহ বা কৌতূহল নিয়েও ২১ সেপ্টেম্বর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে দর্শকরা উপস্থিত হন। তবে নাটক দেখে অনেকটাই ঘোর কাটে আসলে এই শ্যামা সেই শ্যামা নয়। এ অন্য এক শ্যামা, যে কি না একজন শিল্পীর পরিপূর্ণতার জন্য নিজের ভালবাসাকে ত্যাগ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্যামা না হলেও জাগরণী থিয়েটারে ‘আমি ও শ্যামা’ নাটকের বর্ণনা শিল্পের মর্যাদা এবং বিষয়বস্তু উপস্থাপনের উদাহরণ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ এবং তার সৃষ্টিকর্ম নাটকে এসেছে একাধিকবার। নাটকে দেখা যায় পনেরো শতকের জার্মানির বিখ্যাত শিল্পী আলব্রেখট ডুরের শিল্পী হওয়ার কাহিনী পড়ে অমরের ফাইন আর্টস নিয়ে পড়ার ইচ্ছা জাগে। আলব্রেখটকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে ভাই আলবার্ট খনিতে কাজ করতে করতে যে হাত জোড়া ক্ষয়ে গিয়েছিল, ভাই আলবার্টের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আলব্রেখট ওই বিশেষ মুহূর্তটিকে ধরে রেখেছিলেন তার এক অমর শিল্পকর্মে। তার এই অসামান্য অঙ্কনকে তিনি কেবল হাত বলেই নাম রেখেছিলেন। শিল্পের জন্যে ভাই আলবার্টের কি অসাধারণ আত্মত্যাগ। আমরা যদি সবাই আত্মত্যাগের মানসিকতাই বড় হই, শুধু নিজের স্বার্থের কথা না ভাবি, তাহলে আমরা সমাজকে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। এমন ভাবনাকে জাগিয়ে তোলে নাট্যদর্শকদের মনে। যেমন এ বিশ্বাসকে ধারণ করে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে অনিল কাকুর মেয়ে শ্যামার সঙ্গে অমরের পরিচয়। শিল্পের প্রতি অসামান্য ভালবাসা ও অনুরাগ শ্যামাকে অমরের কাছে টানে। রূপ নেয় ভালবাসায়। ভালবাসার একপর্যায়ে শ্যামা প্রত্যাখ্যান করে অমরের বিয়ের প্রস্তাব। নিজেকে শ্যামার জন্য আত্মত্যাগী ভেবে পার করে একাকিত্ব জীবন। শ্যামার প্রত্যাখ্যানের সঠিক কারণ শ্যামার আত্মত্যাগ, অমর জানতে পারে আত্মত্যাগের বিরল দৃষ্টান্ত। আত্মত্যাগী এবং অনুপ্রেরণার গল্প নিয়ে এগিয়েছে নাটক ‘আমি ও শ্যামা’। নাটক শেষে দর্শকদের মনে একটু হলেও শ্যামার জন্য করুণা জাগে। সেই টুকুই নাট্যকারের সার্থকতা। তবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলে দর্শকের জন্য ভাল হয়। যেহেতু নাটক দর্শকের জন্য। ‘আমি ও শ্যামা’ নাটকের প্রথম প্রদর্শনীতে নাটকটি দর্শকদের বেশ আকৃষ্ট করেছে। নাটকটি দর্শকদের ভাল লাগার কারণ শিল্পীদের আত্মমর্যাদা এবং শিল্প সৃষ্টির পেছনে শিল্পীর যে ত্যাগ তা সুন্দরভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঢাকার মঞ্চে নতুন একটি গল্পকে দার করানো চেষ্টা এই প্রথম দেখা গেল। বিশেষ করে যে ধরনের গল্প সাধারণ আর মঞ্চে দেখা যায় না, সে ধরনের গল্পকে মঞ্চে নিয়ে আসায় নাট্যকার এবং অনিকেত পাল বাবু প্রশংসা পেতেই পারেন। নির্দেশক হিসেবে নাটকের গল্প বলা এবং এর উপস্থাপনা আরও একটু স্পষ্টিকরণের দাবি রাখে। তবে নাট্য কাহিনী, শিল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে দর্শকদের ভাবনার জায়গাটি উস্কে দিয়েছে সেটাই বা কম কিসে। এছাড়া ‘আমি ও শ্যামা’ নাটকে অমরের চরিত্রে স্মরণ সাহা এবং শ্যামা চরিত্রে মুনিরা অবনী চেষ্টা করেছেন নিজেদের চরিত্রকে ঠিক রেখে অভিনয় করতে। ‘আমি ও শ্যামা’ নাটকে আলোক নির্দেশক ঠা-ু রায়হান এবং আবহসঙ্গীতে সোয়েব হাসনাত মিতুল চমৎকারিত্ব দেখিয়েছেন। নাটকের অন্যান্য চরিত্রে সজীব ঘোষ, রফিকুল ইসলাম রনি, বাহারুল ইসলাম, জুলিয়েট সুপ্রিয়া সরকার, শাহনাজ শারমিন খান সিমু, ইয়াসীন শামীম, আরিফ খান এবং পল্লব সরকার নির্দেশককে অনুসরণ করেছেন। নাটকের মঞ্চসজ্জা আরও পরিপাটি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোরিওগ্রাফি আরও সমৃদ্ধ হতে পারে। অভিনয়শিল্পীদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আরও প্রাণবন্ত হওয়া উচিত। লাইট, সেট এবং আবহসঙ্গীতের সঙ্গে নিজের খাপ খাইয়ে নেয়ার সুযোগ তো রয়েছেই। সব মিলে আরও একটি সমৃদ্ধ প্রযোজনা ঢাকার দর্শকদের উপহার দিয়েছে জাগরণী থিয়েটার। এ জন্য দলটি বাহবা পেতেই পারে।
×