ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যান্ডউইথের দাম ৯০ শতাংশের বেশি কমলেও ইন্টারনেটের দাম কমেনি

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ব্যান্ডউইথের দাম ৯০ শতাংশের বেশি কমলেও ইন্টারনেটের দাম কমেনি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে গত ১০ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে ইন্টারনেটে। এই সময়ে ব্যান্ডউইথের দাম ৯০ শতাংশের বেশি কমলেও ইন্টারনেটের দাম কমেনি। তবে বেড়েছে গতি, ব্যবহার ও গ্রাহক। তবে দাম কমলেও ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে ১০ গুণ। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার। এরমধ্যে ৮ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজারই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। মোবাইল ইন্টারনেটে আগে উচ্চগতি না পাওয়া গেলেও থ্রিজি ও ফোরজি আসার পর গতি কিছুটা বেড়েছে। তবে সেই গতি নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসন্তোষও রয়েছে। ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট নিয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টি থাকলেও এখনও তা সারাদেশে পৌঁছায়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের মধ্যে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমরা ইন্টারনেটের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি। অবকাঠামো তৈরি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইন্টারনেট শুধু বাড়ি বাড়ি নয়, সবার হাতে পৌঁছাতে চাই। আগামী বছর ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছাতে পারলে এর বড় একটা অংশের কাজ শেষ হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা থ্রিজি ও ফোরজি পেয়েছি। ২০২১ সাল নাগাদ আমরা ফাইভজিতেও যাব। সে সময় ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট এবং ফাইভজি’র মাধ্যমে সবার হাতে হাতে থাকবে ইন্টারনেট। বাংলাদেশ সে সময় আরও উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।’ তবে এখন অনলাইনে দেশীয় কনটেন্টের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘গত ১০ বছরে এটা একটা অবস্থায় পৌঁছেছে কিন্তু তা মোটেও উল্লেখযোগ্য নয়। আমাদের আরও কনটেন্ট প্রয়োজন। কনটেন্ট না থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিদেশী কনটেন্টের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।’ ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও গত ১০ বছরে মাত্র একবারই দাম কমানো হয়েছে। ব্যান্ডউইথের দাম প্রায় ৯০ শতাংশ কমানো হলেও সেই তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ কমেছে খুবই কম। জানা গেছে, ২০০৪ সালে এক এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে এর মূল্য ৬০০ টাকারও কম। গত ১৪ বছরে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথে ৭১ হাজার ৪০০ টাকা দাম কমলেও ব্যবহারকারী পর্যায়ে সেই অনুপাতে ইন্টারনেটের দাম কমেছে খুবই কম। টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়ে ‘কস্ট মডেলিং’র উদ্যোগ নিলেও তার ফল এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, ইন্টারনেটের দাম সেই অর্থে খুব একটা না কমলেও গতি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকগুণ। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘২০০৮ সালে কোনও গ্রাহক যে টাকায় এক এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট পেতেন সেই একই পরিমাণ টাকায় এখন ১০ গুণ গতির (১০ এমবিপিএস) ইন্টারনেট পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবহারকারীদের খরচ সেই অনুপাতে কমাতে না পারলেও গতি বাড়িয়ে দিয়ে বিষয়টি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি।’ তিনি জানান, ১০ বছর আগের তুলনায় আইএসপিগুলোর অপারেটিং কস্ট বা পরিচলন ব্যয় ৩ গুণ বেড়েছে। আইএসপিগুলো ভ্যাটও রিবেট পাচ্ছে না। ফলে আইএসপিগুলোর ‘কস্ট অব সার্ভিস’ বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক আইএসপি বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব দিকে সরকারের নিবিড় মনোযোগ প্রয়োজন।’ ইমদাদুল হক জানান, ১০ বছর আগে দেশে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো ১২০ জিবিপিএস’র মতো। এখন হচ্ছে ৬০০-এরও বেশি। শুধু ব্যান্ডউইথের পরিমাণই বেড়েছে ৫০০ জিবিপিএস’র মতো। এই সময়ে দেশে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু হয়েছে। আইএসপিএবি’র এই সাধারণ সম্পাদকের দাবি, গতি যা বেড়েছে তা ওই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে। মোবাইল ইন্টারনেটে গতি থ্রিজি, ফোরজি চালু হওয়া সত্ত্বেও খুব একটা বাড়েনি। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ‘ক্যাশ’ বেশি পাচ্ছে। বেশি পাচ্ছে ফেসবুক ও ইউটিউব। ফলে ব্যবহারকারীরা মনে করছেন মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বেড়েছে।
×