ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব নেতাদের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার;###;জাতিসংঘের নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলনে ভাষণ

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ॥ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ॥ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা

আন্তর্জাতিক সকল বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল এসেম্বলি হলে সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি এখনও সুদূর পরাহত, ভবিষ্যত শান্তিপূর্ণ বিশ্ব নিশ্চিত করতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সকল বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বিদ্যমান সকল সংঘাতের অবসান ঘটাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা, রাজনৈতিক নেতা এবং মানবহিতৈষী বিশ্বব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। খবর বাসস’র শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, তাদের অস্ত্র সরবরাহের উৎস বন্ধ এবং তাদের আশ্রয়দান বন্ধের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মতো ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবশ্যই বিশ্বনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, অভিযোজন সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং যে কোন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে। শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংস লালন করতে হবে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, সহনশীলতা বাড়াতে হবে, বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে হবে, ধর্মীয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে বৈষম্য ও শোষণ থেকে রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি এখনও সুদূর পরাহত, সংঘাত অবসান, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে এখনও আমরা অনেক দূরে যার জন্য ম্যান্ডেলা লড়াই করেছেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বহু মানুষ অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগছে। জাতিগত সংঘাত, ভীতি এবং অসহিষ্ণুতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সমাজের লোক বৈষম্যের শিকার, ধর্ম ও নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয়ের কারণে তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হচ্ছে। শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের অনেক স্থানে মানুষের জীবন রক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সংঘাত প্রতিরোধ, উন্নয়ন ও মানবাধিকার উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি বলেন, বিগত দুই দশক আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ শান্তি প্রস্তাবের সংস্কৃতি চালু করেছে। এটি ক্ষুধা থেকে বৈষম্য নির্মূল করে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের এজেন্ডা। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রূপকল্প আমাদের সবাইকে পথ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগ দেশের জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত ও বৈষম্য হ্রাসে সহায়ক হয়েছে। আমরা উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে উন্নয়নের মধ্যদিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি। নেলসন ম্যান্ডেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি মানুষের নেতা হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পরে তাঁর আত্মত্যাগ, উৎসর্গ, মানুষের জন্য সহানুভূতি তাকে মানবতা শান্তি, স্বাধীনতা ও ঐক্যের নেতায় পরিণত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও আমাদের শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করতে গিয়ে তারা দুজনেই জীবনের বড় অংশ কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুকে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বারবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগারে বসেই তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলা রচিত ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’-এর মতো বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের ডায়েরি’তে শান্তি ও দেশের মানুষের জন্য তাঁর সংগ্রামের কথা উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর আত্মাকে শান্তিতে থাকতে দেই।’
×