ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে কাজ করছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে কাজ করছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে ‘অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়, সেজন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক জানান, জাতিসংঘ সদরদফতরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে জেরেমি হান্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক হয়। ‘আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেরেমি হান্ট বলেন, তারা বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করেন। ‘জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ ব্রিটিশ মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে সমস্যাটা কোথায়, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান জেরেমি হান্ট। রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে চুক্তি হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন তাকে বলেন, চুক্তি করলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ‘মিয়ানমারে গণহত্যা চলছে বলে অভিযোগ আছে, এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া উচিত হবে কিনা- তা জানতে চান জেরেমি হান্ট। ‘জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারলে তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।’ রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সহযোগিতা কামনা করেন। অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ট্রাম্পের অভ্যর্থনা ॥ বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় যোগ দেন। লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বিশ্বনেতাদের সম্মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অভ্যর্থনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্বনেতৃবর্গ এই অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএস চেম্বারের মধ্যাহ্নভোজ ॥ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউএস চেম্বার অফ কমার্সের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ ও গোলটেবিল বৈঠকে শেখ হাসিনা আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমি আপনাদের আপনার ব্যবসা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে আমরা দু’পক্ষই লাভবান হব। আমি আপনাদের সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।’ নিউ ইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে সোমবার দুপুরে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গত নয় বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর সাহায্য নির্ভর দেশ না। আমাদের অর্থনীতি এখন আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও শ্রম বাজারের সঙ্গে যুক্ত।’ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের একক বৃহত্তর বাণিজ্য অংশীদার উল্লেখ করে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ার কথাও বলেন তিনি। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শেখ হাসিনা বলেন, অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংযোগ, বিদেশী বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের উদীয়মান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ‘আমরা ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য যোগাযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ বাংলাদেশ এই অঞ্চলের চার শ’ কোটি মানুষের বাজারের একটি প্রবেশদ্বার হতে পারে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের একটি অভ্যন্তরীণ বাজারও রয়েছে। জল নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে নদী ভাঙ্গন ও বন্যা প্রতিরোধে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়নের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে ১০টি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি। সমুদ্র অর্থনীতি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নতুন শিল্প ও বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি অনুসরণ করছে। কর অবকাশ, যন্ত্রপাতি আমদানিতে করছাড়, কাঁচামালের শুল্কমুক্ত আমদানি, শতভাগ বৈদেশিক ইক্যুইটি এবং অবাধ প্রস্থান নীতির কথা বলেন তিনি। এছাড়া তরুণ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও প্রশিক্ষিত কর্মী, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার সুযোগ, বিদ্যুত ও পানির স্বল্পমূল্য এবং বাংলাদেশের ভাল ক্রেডিট রেটিংয়ের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল, মেটলাইফের ইন্টারন্যাশনাল গভর্নমেন্ট রিলেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন কাশমান, এক্সলেরেট এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্টিভেন কবোস, এওটি এনার্জির এলএনজি বিষয়ক প্রধান জেমস ও’ব্রায়ান, কোকা-কোলার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বি পেরেজ, জিই পাওয়ারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রেডারিখ রিবিয়ারেস, ম্যাকলার্টি এ্যাসোসিয়েটসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা টেরেসিটা শেফার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএস বাংলাদেশ গ্লোবাল চেম্বার অব কমার্সের সিইও আজিজ আহমেদ, কোকা-কোলা বাংলাদেশের কর্মকর্তা শামীমা আক্তার, অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপের মানপ্রিত আনন্দ, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, আইবিএমের মাইকেল ডিপওলা-কোয়েল, গুগলের অ্যান পেকহাম, বোয়িংয়ের ব্রায়ান লোপ, শেভরনের জে জে ওঞ্জ, ওয়ালমার্টের আনবিন ফান, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বাংলাদেশ ডেস্কের কর্মকর্তা আনন্দ কৃষ্ণা প্রমুখ।
×