ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট কেনার টাকা পাবেন সরকারী কর্মচারীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৫ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট কেনার টাকা পাবেন সরকারী কর্মচারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অধিকাংশ ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে (৯ শতাংশ) নামিয়ে আনতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা শীঘ্রই তারা বাস্তবায়ন করবে। এটা করা খুবই সহজ এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো মুনাফা একটু কম করলেই হয়। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারী কর্মচারীদের জন্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে পাঁচ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) গৃহনির্মাণ ঋণ বিষয়ে চারটি সরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আশাদুল ইসলাম, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন প্রমুখ। প্রসঙ্গত, সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট থেকে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৬ শতাংশে আমানত সংগ্রহ ও ৯ শতাংশ সুদ হারে শিল্পঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ব্যাংক এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি। তবে সরকারী কয়েকটি ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করেছে। ৫ শতাংশ সুদে গৃহনির্মাণ ঋণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগে একজন সরকারী কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চিন্তিত থাকত। এর মাধ্যমে সে অনিশ্চয়তা থাকবে না। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী একজন নাগরিকের অধিকার হচ্ছে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান। আমরা খাদ্যের বিষয়ে বর্তমানে ভাল অবস্থানে রয়েছি। এটা অর্জনে আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। কৃষি জমি অনেক কমে গেছে। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, শিক্ষার বিষয়ে আমাদের ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এই মুহূর্তে আমরা শিক্ষার নেটে যাদের আবদ্ধ করছি সেটা মোটামুটি সাড়ে ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশ। যদিও সার্বিকভাবে শিক্ষিতের হার কখনই শতভাগ হবে না। তবে যদি ৯০ শতাংশের উপরে যেতে পারি সেটাই আমাদের জন্য ভাল। স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা খুব একটা স্বীকৃত হয় না। তবে আমার মনে হয়, এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, আবাসনে আমরা এখনও একটু পিছিয়ে আছি। এখন আবাসনে জোর দেয়া হচ্ছে। শতভাগ জনগণকে আবাসনের আওতায় আনতে সময় লাগবে। এখন দেশে হয়তো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ আবাসনের আওতায় রয়েছে। সরকারী কর্মচারীরা ৫ শতাংশ সুদে ফ্ল্যাট কেনার ঋণ পাবেন ॥ বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সরকারী কর্মচারীদের ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণসুবিধা দিতে চার রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই ঋণের বিপরীতে সরকারী কর্মচারীদের সুদ দিতে হবে ৫ শতাংশ। প্রচলিত বাজার দরে সুদের হার যা-ই হোক না, ৫ শতাংশের বাইরের অংশটুকু রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেয়া হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ বিভাগ এই চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা এমওইউতে সই করেন। সরকারের দিক থেকে সই করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জাফরউদ্দীন। ভারপ্রাপ্ত অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আগামী ১ অক্টোবর থেকেই ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বেতন-ভাতা তোলার দিক থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, তারাই ঋণের আবেদন আগে করতে পারবে। অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, সব সরকারী কর্মচারীকে এ ঋণের আওতায় আনতে দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে। গত ৩০ জুলাই অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে ‘সরকারী কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণপ্রদান নীতিমালা-২০১৮’ জারি করে। এছাড়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারী কর্মচারীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে ৫৬ বছর বয়সী কর্মচারীরাও আবেদন করতে পারবেন। চাকরির গ্রেড অনুযায়ী ঋণ দেয়া হবে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সময় ২০ বছর। প্রসঙ্গত, সরকারের নবীন কর্মীরাও যেন একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির মালিক হতে পারেন সেজন্য একটি নীতিমালা করার কথা জানিয়ে গত জুনে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছর থেকেই তা কার্যকর হবে। এ ঋণের জন্য ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে সরল সুদ নেবে। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ (সুদের ওপর সুদ) নেয়া হবে না। তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে ভর্তুকি হিসেবে। শুধু বেসামরিক সরকারী কর্মচারীরা যারা স্থায়ী পদে চাকরি করেন তারাই এই ঋণ পাবেন। সরকারী চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খ-কালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কেউ এই ঋণ পাবেন না। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, গৃহঋণ দিতে সরকারী চাকরিজীবীদের জন্য একটি অভিন্ন আবেদনপত্র তৈরি করা হয়েছে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি স্থায়ীকরণপত্র, বেতনের রসিদ, সম্ভাব্য পেনশন থেকে আয়, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং অন্য ব্যাংকে ঋণ থাকলে সে সম্পর্কিত কাগজ জমা দিতে হবে। ঋণ নেয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে। তবে এ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন বয়সসহ অন্য সব শর্ত গত ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।
×