ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন সিনহা ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন সিনহা ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে। আপীল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সে সময় প্রধান বিচারপতি সিনহার সঙ্গে কেন বসতে চাননি- তা প্রকাশ পেলে আরও দুর্গন্ধ ছড়াবে। তাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে। এদিকে সুপ্রীমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে আগামী ১ অক্টোবর সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সব আইনজীবীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিদেশে বসে যে বই লিখেছেন, তাতে দেশের বিচার বিভাগের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট’ হয়েছে। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিচারপতি সিনহা যা করছেন এটা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উনি নিজেই নষ্ট করছেন।’ এর ব্যাখ্যায় এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি প্রধান বিচারপতি থাকার সময় উনার সঙ্গে যারা বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন, তাদের সম্পর্কে কোন রকম কটূ মন্তব্য করা বা বাজে কথা বলা খুবই অগ্রহণযোগ্য এবং এই কাজটা করে উনি নিজেই বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। সরকারের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টোবর বিদেশে চলে যাওয়ার সময় বিচারপতি সিনহা বলে যান, তিনি অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’। তার ছুটির মেয়াদ শেষে ১১ নবেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। এক বছরের মাথায় বিদেশে বসে বই লিখে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। ‘এ ব্রোকেন ড্রিম : রুল অব ল’ হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শিরোনামে আত্মজীবনীমূলক ওই বইয়ে তিনি দাবি করেছেন, তিনি দেশ ছেড়েছেন ‘হুমকির মুখে’; একই কারণে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই সরকারের আমলে অনেক বিচারপতি কাজ করে গেছেন। এদের কেউ তো সরকারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেননি! উনি তো (এস কে সিনহা) স্পষ্ট করেননি, কেন উনার সঙ্গে উনার সঙ্গী বিচারপতিরা একসঙ্গে বসতে (আপীল বিভাগের এজলাসে) চাননি।’ পদত্যাগ করার পর বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, ওইসব অভিযোগের কারণে আপীল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন। তিনি আরও বলেন, অন্য বিচারপতিরা তার (এস কে সিনহা) সঙ্গে কেন বসতে চাননি, সে কারণগুলো তো তিনি বলেননি। সেগুলো তিনি যদি উল্লেখ করেন, তবে দুর্গন্ধ আরও ছড়াবে। সেগুলোতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।’ অন্য বিচারপতিরা তখন কেন এস কে সিনহার সঙ্গে বসতে চাননি জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমরা যা জেনেছি কাগজ পড়ে জেনেছি। কোন বিচারপতির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলিনি। উনার সঙ্গে অন্য বিচারপতি সহকর্মীরা বসতে অস্বীকৃতি দেখিয়েছেন। আমার মনে হয় না, এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর কোথাও ঘটেছে। সিনহার বইটিতে যদি কোন বর্তমান বিচারপতি সম্পর্কে কোন কথা বলা থাকে এবং তারা যদি মনে করেন, তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ১ অক্টোবর আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন প্রধান বিচারপতি ॥ সুপ্রীমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে আগামী ১ অক্টোবর সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং সব আইনজীবীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মোঃ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা চলমান অবকাশকালীন ছুটির পর প্রথম কার্যদিবস ১ অক্টোবর সোমবার সকালে সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মূল ভবনের ভেতরের লনে এ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এবং আইনজীবীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। উল্লেখ্য, দীর্ঘ দেড় মাস অবকাশের পর আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপ্রীমকোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি অবকাশের পর প্রধান বিচারপতি আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, এ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ সব আইনজীবীদের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাত হয়। গত ১৫ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় মাস সুপ্রীমকোর্টে অবকাশকালীন ছুটি চলছে। তবে এ সময়ে বিশেষ মামলা পরিচালনায় অবকাশকালীন কোর্ট বসেছে।
×