ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিষাক্ত লবণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিষাক্ত লবণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

লবণ মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার এক আবশ্যকীয় উপাদান। ফলে এর বাজার চাহিদা আকাশছোঁয়া। শুধু খাবারেই নয়Ñ কৃষি, শিল্পজাত নানা পণ্য তৈরিতেও লবণের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে খাবারের লবণ আর পণ্য প্রস্তুতকরণের লবণ এক নয়। রান্নায় আমরা যে লবণ ব্যবহার করি তা মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড। আর শিল্পদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতে যে লবণ প্রয়োজন হয় তা সোডিয়াম সালফেট, যা মানবদেহের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয়, প্রাণঘাতীও বটে। অভিযোগ উঠেছে, বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট এখন খাবার লবণ হিসেবে বাজারে নৈমিত্তিকভাবে বিক্রি হচ্ছে। খাবার লবণ সোডিয়াম ক্লোরাইড দেশীয় উৎপাদন পদ্ধতিতে তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে নিয়ে আসা হয়। ফলে এই লবণ বাইরে থেকে আমদানির সুযোগ কম থাকে। কিন্তু খাবার লবণের চাহিদার সঙ্গে লবণ উৎপাদিত জমির সংখ্যা অপ্রতুল থাকায় ঘাটতি পড়ে যায় প্রচুর। সঙ্কট দেখা দিলে আমদানির ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়। সোডিয়াম সালফেট বিদেশ থেকে আনার ব্যাপারে তেমন কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা না থাকায় আমদানি হয়েছে অত্যধিক। কাঁচামাল সঙ্কটে শিল্প-কারখানায় সোডিয়াম সালফেটের ব্যবহার কমে যাওয়ায় তা খাবার লবণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বাজারজাতও করা হচ্ছে। ক্লোরাইডের তুলনায় সালফেটের আমদানি শুল্ক তুলনামূলক কম। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে বিষাক্ত লবণের খালাস আটকে দিয়েছে বন্দর কর্তৃক্ষ। সেই আটক করা লবণ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় যাচাইয়ের লক্ষ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ পরীক্ষা করে জানায়, ৯১% সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং ৭% সোডিয়াম সালফেট পাওয়া গেলেও এই মিশ্রিত লবণ কোনভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়। কারণ এই বিষাক্ত মিশ্রণটি মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ফেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এই বিষাক্ত লবণ প্রাণঘাতী। যেহেতু বিষাক্ত লবণ খাদ্য তালিকায় অবাধে অনুপ্রবেশ করছে, সেই কারণে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা (বিসিক) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সোডিয়াম ক্লোরাইডের আমদানি যাতে আরও বাড়ানো যায়, সে ব্যবস্থা যেন অচিরেই গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে সম্প্রতি চলতি বছর লবণ উৎপাদনের হিসাবও জানতে চেয়েছে। লবণের সঙ্কট পূরণে প্রতি বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টন লবণ অবৈধভাবে আনা হয়। লবণ ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছর যে সব জমিতে চাষ করা হয় সেই উৎপাদন ক্ষেত্রগুলো কমতে থাকে ফি বছর। ফলে চাহিদা তো পূরণ হয়ই না, ঘাটতির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলে। আর এই শূন্যস্থান পূরণ করে বিষাক্ত শিল্প লবণ সোডিয়াম সালফেট। লবণ উৎপাদিত অঞ্চলে বিদ্যুত কেন্দ্র, টার্মিনাল স্থাপন এবং শিল্প পণ্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত লবণের জমি সঙ্কুচিত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য লবণে। ক্রমবর্ধমান চামড়া শিল্প, ড্রাইং, প্রিন্টিং, ডিটারজেন্ট, হোটেল শিল্প এবং ওষুধ শিল্পে, মুড়ি, চানাচুর তৈরিতে লবণের চাহিদা এত ব্যাপক যে চাহিদা মেটানো প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে। সোডিয়াম সালফেটের আমদানির ওপর কোন বিধিনিষেধ না থাকায় এই লবণ আমদানিতে কোন ধরনের আইনগত সমস্যা থাকে না। শুল্কের হার কম থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষাক্ত লবণের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। এই মুহূর্তে এই ক্ষতিকারক লবণের ওপর আমদানির নিয়ন্ত্রণ আইনগতভাবে জোরালো করতে হবে।
×