ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল গুজবের অবসান হোক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল গুজবের অবসান হোক

‘ডিজিটাল’ শব্দটির সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ২০০৮ সালে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার-২০০৮ এ দেয়া প্রতিশ্রুতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ এখন আর শব্দ নয়, বাক্য নয়- বাস্তবেই বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমাদের এই অনন্য গৌরবের অধিকারী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। আজ বাংলাদেশের ৯ কোটির বেশি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ১৫ কোটির বেশি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ৫ কোটি লোক ফেসবুক ব্যবহার করছে। প্রযুক্তির ভাল দিক মানবিক পৃথিবী, মানবিক রাষ্ট্র এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে মানবিকতার চর্চা করতে শেখায় কিন্তু এর কুফল বা খারাপ দিকগুলো ধ্বংস ও বিপর্যয় ডেকে আনে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা, বিস্ময়কর উন্নয়নে অনেকের গাত্রদাহ হচ্ছে। যারা দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ^ চ্যাম্পিয়ন করেছে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাত করেছে এবং যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে চায়নি- সেই অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত জনজীবনে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে সক্রিয় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহার করে। সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে, তবে গুজব বা অপপ্রচার কোনভাবেই কাম্য নয়। অতিসম্প্রতি কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে পুঁজি করে ফেসবুকে যেভাবে ডিজিটাল গুজব প্রচার করা হয়েছে সেই বিষয়টি নিয়েই আমার আজকের লেখা। গত ২৯ জুলাই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুজন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর অকাল মৃত্যুতে এবং ১২জন ছাত্রছাত্রী আহত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা সড়কে নিরাপত্তার জন্য যে সকল দাবি দাওয়া পেশ করেছিল গভীর মমত্ববোধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সকল দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি গুরুত্বের সঙ্গে তা বিবেচনায় নিয়ে পূরণের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজে যান। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য ৫টি বাস প্রদান করেন। কলেজের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। দুর্ঘটনার স্থানে রাস্তা পারাপারের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। নিহত উভয়ের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঘাতক বাস দুটির চালক, হেলপার ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে সংসদে যুগোপযোগী সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮ পাসও করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি দাওয়া সমর্থন করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা ও বিশ^াস রেখে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ঘরে ফিরে যায়। অথচ কুচক্রীমহল কোমলমতি নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের এই কোমল অনুভূতিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করে। এদের অনেকেই ভুয়া ছাত্র সেজে রাতারাতি স্কুল ড্রেস বানিয়ে, পিঠে স্কুলব্যাগ ঝুলিয়ে রাস্তায় নেমে অরাজকতা ও নাশকতা করে। উসকানিদাতাদের মধ্যে বিএনপির একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতার ফোনালাপটি এরকমÑ তিনি একজন তরুণ ব্যারিস্টারকে বলছেন যে, তোমাকে তো কেউ চেনে না, তুমি ছাত্র সেজে আরও লোকজন নিয়ে ঢাকায় গিয়ে নেমে পড়। শুধু তাই নয়, এই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফেসবুকে প্রতিনিয়ত ছবি বা ফটোশপসহ যেসব ডিজিটাল গুজব প্রচার করা হয়েছে, আমি এখানে কয়েকটি উল্লেখ করছি- ডিজিটাল গুজব-১ ৩১ জুলাই, ২০১৮ গুজব: আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমনে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। সঠিক তথ্য: ছবিটি উত্তরা থেকে তোলা। সেনাবাহিনীর এই যানগুলো রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিল। উত্তরায় বিকেলের দিকে ট্রাফিক জ্যামে পড়ে। লিংক : http://goo.gl/2JNg5y ডিজিটাল গুজব-২ ৪ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে, চোখ তুলে নেয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ অফিসে মেয়েদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিনেত্রী নওশাবা ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ান। যার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস পরিদর্শন করে হত্যা, ধর্ষণের খবর গুজব বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয় (যঃঃঢ়://নরঃ.ষু/২ঘউত৩০ঢ)। অভিনেত্রী নওশাবার মতো একই রকম গুজব অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ ফেসবুকে প্রচার করেন। সঠিক তথ্য : গ্রেফতারকৃত অভিনেত্রী নওশাবা পরবর্তীতে গুজব ছড়ানোর কথা স্বীকার করেন ও বলেন তিনি ব্যবহৃত হয়েছেন। এমন গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর করা হয়, রাস্তায় অরাজকতা ও নাশকতা করা হয়। এই নাশকতায় চিরতরে একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বাপ্পীর। লিংক : http://bit.ly/2NfjX7A ডিজিটাল গুজব-৩ ৪ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ৪ আগস্ট তার ভেরিফাইড ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানÑ ক্ষমতাসীনরা ছাত্রদের নির্যাতন করছে। তিনি আলজাজিরা টেলিভিশনে একটি সাক্ষাতকারে অনুরূপ গুজব ছড়ান। সঠিক তথ্য : শহিদুল আলম এর বক্তব্য বানোয়াট, উসকানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক। ডিজিটাল গুজব-৪ ৪ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ধানম-ি জিগাতলায় স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ছাত্র। সঠিক তথ্য : ছবিটি জুলাই ৩১ তারিখে কুমিল্লার চান্দিনার মহিচাইলে ট্রাক চাপায় এক মৃত স্কুল ছাত্রের। নিহত শিহাব মৃধা মাধাইয়া ছাদিম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। লিংক : http://goo.gl/YvbpGD ডিজিটাল গুজব-৫ ৪ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ধানম-ির জিগাতলায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় নিহত কলেজ ছাত্রী। সঠিক তথ্য : ছবিটি আগস্টের ৪ তারিখ গাজীপুর বড়বাড়ির রোড এক্সিডেন্ট এ নিহত মেডিকেল ছাত্রী ফাতেমা আক্তার মীমের। আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত বলে গুজব প্রচার করা হয়েছিল। লিংক : http://goo.gl/NfUaVr ডিজিটাল গুজব-৬ ৪ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে আওয়ামী লীগ অফিসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। সঠিক তথ্য : প্রকৃতপক্ষে ছবিটি জানুয়ারি ৪ তারিখে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের কিশুওয়ারে পাওয়া একজন মহিলার মৃত লাশের ছবি। লিংক : http://archive.is/Ajf1s ডিজিটাল গুজব-৭ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ধানম-িতে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় নিহতদের ছবি। সঠিক তথ্য : ছবিটি জুন ১৯ তারিখে সৈয়দপুরের এক সড়ক দুর্ঘটনার। পিকাপ ভ্যান ও বাসের সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়। লিংক : http://goo.gl/B4hLq3 ডিজিটাল গুজব-৮ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আওয়ামী লীগ অফিসে ধর্ষিত এক ছাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে প্রচার করা হয়। সঠিক তথ্য : ছবিটি ছিল জুলাই ৩০ তারিখে রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে দুর্ঘটনায় আহত একজন ছাত্রীর। সূত্র : ঐ ছাত্রীর বোন। লিংক : http://bit.ly/2QxFYfD ডিজিটাল গুজব-৯ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আওয়ামী লীগ অফিসে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় দুই ছাত্রীকে, লেক থেকে উদ্ধার হওয়া দুই ছাত্রীর লাশ। সঠিক তথ্য : ছবিটি আগস্ট ৮, ২০১৭ তারিখে ময়মনসিংহ মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে তিন ছাত্রীসহ দু’জন পুরুষ নিহত হওয়ার ঘটনার। লিংক : http://archive.is/5PESm ডিজিটাল গুজব-১০ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আওয়ামী লীগ অফিসে ধর্ষণ করে হত্যা করা ফেলে দেয়া ছাত্রীর লাশ। সঠিক তথ্য : ছবিটি এপ্রিল ২৪, ২০১৫ তারিখের। চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীর পাশে এই স্কুলছাত্রীর অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। লিংক : http://bit.ly/2Mx87Ar ডিজিটাল গুজব-১১ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : আওয়ামী লীগ অফিসে ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত স্কুলছাত্রীরা। সঠিক তথ্য : ছবিটি মার্চ ২৭, ২০১৮ তারিখের। মেহেরপুরের হাতিভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩৫ ছাত্রী গণ-হিস্টোরিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। লিংক : http://bit.ly/2xioECy ডিজিটাল গুজব-১২ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ছবিটি ছাত্রলীগের হাতে ধর্ষিত ও নির্যাতিত কলেজ শিক্ষার্থীর বলে প্রচার করা হয়। সঠিক তথ্য : ছবিটি মরক্কোর তারগিস্ত অঞ্চলে গৃহ নির্যাতনের শিকার এক মহিলার। লিংক : http://archive.is/9ypDq ডিজিটাল গুজব-১৩ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব: জিগাতলায় ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থী। সঠিক তথ্য : ছবিটি জুলাই ২০১২ তারিখের। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারী ক্যামব্রিয়ান স্কুল এ্যান্ড কলেজের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। গাড়ি ভাঙচুরকালে আহত হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রী। লিংক : http://bit.ly/2M4YEUP ডিজিটাল গুজব- ১৪ ৫ আগস্ট, ২০১৮ গুজব : ছাত্রলীগের হাতে ধর্ষিত ছাত্রী, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। সঠিক তথ্য : ছবিটি ভারতের। এই কিশোরীর মৃতদেহ কলকাতার সোনারপুর সুভাষগ্রাম স্টেশনের রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়। লিংক : http://bit.ly/2xeuntZ এছাড়াও মাথায়, হাতে ভুয়া ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে ছাত্রলীগের হামলার শিকার বলে গুজব প্রচারকারীর নাটকের লিংক: http://bit.ly/2Nca76i সেফাতউল্লাহ নামের জনৈক ব্যক্তি প্রায়ই ফেসবুক ও ইউটিউবে তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে আপত্তিকর, অশ্লীল, নোংরা ও উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে। এই সকল ডিজিটাল অপরাধের অবসান প্রয়োজন। উল্লেখ্য, প্রতিটি গুজবে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলো আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ। অপশক্তি সবসময় গুজব, ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে। তাদের কোন নৈতিকতা নেই, মানবিকতা নেই, তারা সৃষ্টিকে নয়, ধ্বংসকে গ্রহণ করে। সত্যকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার মতো মূল্যবোধ বা মানসিক শক্তি তাদের নেই। ইতোপূর্বে রামু, নাসিরনগর ও দেশের অন্যান্য স্থানে ডিজিটাল গুজব প্রচার করে রাষ্ট্র ও জনজীবনে অরাজকতা সৃষ্টি করা হয়, কোটাবিরোধী আন্দোলনে একজন ছাত্রকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে ডিজিটাল গুজব প্রচার করে ভয়াবহ নাশকতা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে নির্মম ও ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনাটি এই তো কিছুদিন আগের, পরে ঐ কথিত নিহত ছাত্র নুরু নিজে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় যে আমি মরিনি। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, মাইকে এবং ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে বগুড়া ও সারাদেশে তা-ব ঘটানো হয়Ñ যা মনে হলে এখনো গা শিউরে ওঠে। মক্কা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের বিষয়টিকে সাঈদীর মুক্তির আন্দোলন বলে গুজব প্রচার করা হয়। ’৭৪ সালে বাসন্তিকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় ছাপিয়ে ঘৃণ্য নাটক করা হয়েছিল। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সে সময় একটি শাড়ির চেয়ে জালের মূল্য অনেক অনেক বেশি ছিল। নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশ ভারত হয়ে যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে, শান্তিচুক্তি হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে এই সকল গুজব বা অপ্রপ্রচার বিএনপি নামক দলটি অনবরত করেছে। আমাদের স্বপ্ন, রূপকল্প- ২০২১, রূপকল্প- ২০৪১ আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে চাই। ডিজিটাল গুজব, অপপ্রচার আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জনজীবনের বিরুদ্ধে অরাজকতা, নাশকতা কাম্য নয়। এগুলো প্রতিরোধ করা আবশ্যক। প্রয়োজন ডিজিটাল নিরাপত্তা। ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। তথ্য প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে যাতে কলুষিত করতে না পারে সেই বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল- ২০১৮ পাস করা হয়েছে। আইন মানুষের কল্যাণের জন্য। সময়ের পরিক্রমায় যেমন নতুন আইন প্রণীত হয়, পুরনো আইন যুগোপযোগী করা হয়, তেমনিভাবে অপরাধীরাও নিত্যনতুন অপরাধ সংঘটন করে। আমাদের প্রত্যাশা, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধানে এ আইনটির সঠিক প্রয়োগ হবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আসুন গুজব, অপপ্রচারকে না বলি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রহণ করি। পরিশেষে বলব, ‘যদি তুমি গুজবে কান দাও, তবে তুমি শেষ/যদি তুমি সত্যের সন্ধান কর, তবে তুমি বাংলাদেশ।’ লেখক : আইনজীবী ও সংসদ সদস্য
×