ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে তরুণ নেতারা মাঠে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজশাহীতে তরুণ নেতারা মাঠে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রধান দুটি দলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ দলের মনোনয়ন লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন। রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনেও জমে উঠেছে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই। এ ক্ষেত্রে এবার বর্তমান সংসদ সদস্যদের চেয়ে মাঠে সোচ্চার রয়েছেন তরুণরা। তারাই মূলত মাতাচ্ছেন ভোটের মাঠ। শুরু থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। প্রচার মিছিল, শোডাউনের মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন তারা। রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় একডজনের বেশি তরুণ নেতা এখন ভোটের মাঠ কাঁপাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে সবচেয়ে বেশি তরুণ প্রার্থী মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের আসায়। এ আসনটিতে সবচেয়ে বেশি ভোটের আমেজ বিরাজ করছে। এছাড়া রাজশাহী-৪ (বাগমারা) ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) ও রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন সম্ভাব্য তরুণ নেতারা। রাজশাহী-৫ আসনের এমপি শিল্পপতি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আরও পাঁচ নেতা। তারা এখন ভোটের মাঠে রয়েছেন। সাম্ভাব্য এসব প্রার্থীরা সুযোগ পেলেই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। করছেন গণসংযোগ, মতবিনিময়। এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দুই তরুণ নেতা। এদের একজন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মোঃ ওবায়দুর রহমান ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক আহ্বায়ক আসিফ ইবনে আলম তিতাস। এদের মধ্যে ওবায়দুর রহমান মাঠে সোচ্চার রয়েছেন আগে থেকেই। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং ও গণসংযোগ করছেন তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায়। ওবায়দুর রহমান জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র এলাকার খবির উদ্দিনের ছেলে। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ওবায়দুর রহমান একজন শিল্পপতিও। বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধে গল্প শুনেই জাতির জনকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। এবার মনোনয়নের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী এ নেতা শুরু থেকেই মাঠে সোচ্চার রয়েছেন। দলীয় সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে সাড়া ফেলেছেন তিনি। এ আসনে বর্তমান এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান-উল-হক মাসুদ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মনসুর রহমান ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক আহ্বায়ক আসিফ ইবনে আলম তিতাস। নৌকার দাবিদার হিসেবে তারা পুঠিয়া-দুর্গাপুরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সাঁটিয়েছেন নিজেদের ব্যানার-ফেস্টুন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আবদুল ওয়াদুদ দারা দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দলের মধ্যে বিভেদ প্রকাশ্যে রূপ নিতে শুরু করে। এর ফলে বিগত পৌরসভাসহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী অংশ নেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নেরও অভিযোগ আছে এমপির বিরুদ্ধে। এসব কারণে পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগে এমপিবিরোধী একটি শক্ত বলয় তৈরি হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ওবায়দুর ও তিতাস দুজনেই রয়েছেন সবচেয়ে সক্রিয়। ক্লিন ইমেজের কারণে তৃণমূলের আস্থা অর্জন করতে সফল হয়েছেন তরুণ ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমান ও আসিফ ইবনে আলম তিতাস। তারা এরই মধ্যে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ওবায়দুর রহমান ও আসিফ ইবনে আলমের নামটি বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের কেউ মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জানান। এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে এই আসনটি হাতছাড়া হবে আওয়ামী লীগের। এ কারণে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে জোর দাবি এই আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। এদিকে বহিরাগতদের আসন হিসেবে বদনাম আছে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের। পবা-মোহনপুর আসনটি সৃষ্ট ২০০৮ সালে। সে সময় ওই আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। কিন্তু বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। আর আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের টিকেট পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। ক্ষোভ সামলাতে না পেরে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন মেরাজ মোল্লা। তবে ‘নতুনের জোয়ারে’ প্রথমবারই নির্বাচনী বৈতরণী উতরে একেবারে ‘ঘরের ছেলে’ বনে যান আয়েন উদ্দিন। এবার মেরাজ মোল্লার পাশাপাশি ওই আসনে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু। তারা দু’জনের নৌকার পক্ষে নিয়মিত প্রচারে রয়েছেন। এ আসনেও সমানে সোচ্চার রয়েছেন তরুণ প্রার্থীরা। তাদের পাশাপাশি বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনও সজাগ রয়েছেন মাঠে। বাগমারা উপজেলাকে নিয়ে রাজশাহী-৪ আসন। গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এখানে বিজয়ী হয়েছেন প্রকৌশলী এনামুল হক। দলীয় নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী নির্বাচনেও এ আসনের শক্ত প্রার্থী এনামুল হক। তবে এনামুল হকের বিরোধিতায় মাঠে নেমেছেন বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু এবং তাহেরপুর পৌরসভার দু’বারের মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তারা দু’জনে এক সঙ্গে শক্ত অবস্থানে থেকে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাও মনোনয়ন চাইবেন। ইতোমধ্যে সভা-সমাবেশ, শো-ডাউন ও জনসংযোগে এলাকা মাতাচ্ছেন তারা। এছাড়া রাজশাহী-১ আসনেও ভোটের মাঠে সোচ্চার রয়েছেন জেলার তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী। তিনি নির্বাচনী এলাকা তানোর ও গোদাগাড়ীর মাঠে সোচ্চার রয়েছেন শুরু থেকেই। তবে রাজশাহীর সবকটি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাও সক্রিয় রয়েছেন ভোটের মাঠে।
×