ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়বে

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়বে

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম টু প্লাস টু সংলাপ গত ৬ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইক ম্যাটিস এবং অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারাম সংলাপে অংশ নেন। প্রতিরক্ষা চুক্তি ও জোটের বিষয়গুলোই মূলত আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছিল। আলোচনা শেষে দুই দেশ ‘কমিউনিকেশন কম্প্যাটিবিলিটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট’ (কমকাসা) স্বাক্ষর করে এবং কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা উদ্যোগের সমন্বয় সাধনে সম্মত হয়। তবে দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির উল্লেখ ছিল তা হচ্ছে এক স্বাধীন ও মুক্ত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করা। তা থেকেই এই দুটি দেশের কাছে এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে প্রতিরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ঘোষণা করার পর থেকে ভারতের সমর সম্ভার জোরদার করার জন্য যেসব প্রযুক্তি প্রয়োজন সেগুলোর ওপরই মূল দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছিল। এ জন্য দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। এতে করে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নিরাপত্তার নতুন রোডম্যাপ তৈরির কাজে গতিবেগ সঞ্চারিত হবে। ভারত-মার্কিন টু প্লাস টু সংলাপ নামে পরিচিত বহু স্তরের নিরাপত্তা সহযোগিতার পরিকল্পনা ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে করা হয়েছিল সহযোগিতার এই নতুন ফরম্যাট ব্যাখ্যা করে পূর্বতন মার্কিন পরাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন বলেছিলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দুই প্রান্তে স্থিতিশীলতার দুই স্তম্ভ। এ অঞ্চলে চীনের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছিলেন ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল উত্তরোত্তর শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির অঞ্চলের পরিণত হচ্ছে। এ অঞ্চল যাতে বিশৃঙ্খলা, সংঘাত ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের অঞ্চলে পরিণত না হতে পারে তার জন্য এ দুটি দেশকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। টু প্লাস টু ফরম্যাটকে যুক্ত করার কাজটা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই এক অস্বস্তিকর গাণিতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কারণ এর আগে দু-দু’বার এই সংক্রান্ত বৈঠক স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে তবে তাও আবার হয়েছে কিছু বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে। আলোচনার ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে দু’দেশের কর্মকর্তারা মতপার্থক্য দূর করে প্রত্যাশিত ফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। আলোচনার প্রধানতম বিষয় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব সফল প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কমকাসা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নতুন স্তরে উন্নীত হবে এবং ভারত উন্নত মার্কিন প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম লাভের সুযোগ পাবে। যৌথ ঘোষণায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সংক্রান্ত বক্তব্যে পরিষ্কার দেখা গেছে যে চীনকে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার প্রতি প্রধান হুমকি হিসেবে দেখছে দুটি দেশ। ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রিয়াকলাপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সামুদ্রিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠতর সহযোগিতার দিকে চলে এসেছে। দুটি দেশ এ অঞ্চলের প্রতি তাদের অভিন্ন নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে গভীরতর সহযোগিতার লক্ষ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড ও ভারতীয় নৌবাহিনীর মধ্যে আদান-প্রদান শুরু করতে সম্মত হয়েছে। টু প্লাস টু সংলাপের আরেক উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার প্রশ্নে দু’দেশের সংহতি প্রকাশ। দুই পক্ষ পাকিস্তানকে অন্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনায় তার ভূখ- ব্যবহার করতে না দেয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য আফগান সঙ্কটের পরিবর্তিত গতিপ্রকৃতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষিত সামগ্রিক স্ট্র্যাটেজিও পুনর্বিবেচনার আওতায় আসতে পারে। অন্যদিকে বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার পথে ভারতকে সম্ভবত আঁকাবাঁকা পথ অনুসরণ করতে হবে এবং তা করতে গিয়ে আকেরিকার দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী বন্ধুত্ব এবং এ অঞ্চল ও তার বাইরে ভারতের নিজস্ব স্ট্র্যাটেজিক প্রয়োজনগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। নইলে সব ডিম এক ঝুরিতে রাখতে গেলে শুধু একজন অংশীদারের ওপর অতি নির্ভরশীলতার সৃষ্টি হতে পারে। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে ও অন্যান্য
×