ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন সোশ্যালিস্টরা কতখানি বিপ্লবী

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মার্কিন সোশ্যালিস্টরা কতখানি বিপ্লবী

আমেরিকায় সোশ্যালিস্টদের উত্থান এক নতুন ও নাটকীয় ঘটনা। এবারের মধ্যমেয়াদী নির্বাচনে বেশকিছু সোশ্যালিস্ট নারী ও পুরুষ ডেমোক্র্যাটিক দলের টিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থিতা লাভ করেছেন। আমেরিকার এই সোশ্যালিস্টরা ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা’ (ডিএসএ) নামক একটি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হলেও দল হিসেবে তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ব্যানারে চলে এবং দলের প্রগতিশীল অংশ হিসেবে পরিচিত। এরা শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সঙ্গীত গায় না, উৎপাদন যন্ত্রের ওপর জনগণের মালিকানা দাবি করে না। তবে মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য লড়ে। রিপাবলিকানদের ভাষায় সোশ্যালিস্টরা হচ্ছে ‘দানব’ যাদের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সামনের নবেম্বরে কংগ্রেস নির্বাচনে জেতার জন্য লেলিয়ে দিয়েছে। তথাপি এদের উত্থান পুঁজিবাদের প্রতি যতটা নয় তারচেয়ে বেশি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি অধিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাইহোক আমেরিকায় সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার এমন এক মুহূর্ত চলছে যা সম্ভবত ১৯১২ সালের পর থেকে আর কখনও এমন ছিল না। ১৯১২ সালে সোশ্যালিস্ট প্রার্থী ইউজিন ডেবস্ ৬ শতাংশ পুপলার ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৮২ সালে ডিএসএর প্রতিষ্ঠা এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনÑ এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে দলটির সদস্য সংখ্যা তুলনামূলকভাবে একই সেই ৬ হাজারই থেকেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর এই সদস্য সংখ্যা ৮ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অচিরেই তা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডিএসএর প্রায় সব সদস্য প্রাইমারীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছে। শুধু দুজন বাদে। এরা মিজ ওকাসিও- কর্টেজে ও রাশিদা তুলাইব। ডেট্রয়টের এই দুই প্রার্থী আগামী কংগ্রেসে নির্বাচিত হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। সম্প্রতি গ্যালাপ সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ৫৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাটের সমাজতন্ত্রের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব আছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ মার্কিন সমাজ আদশির্কভাবে নানা ধ্যান-ধারণা, মত ও পথে বিভক্ত। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ মার্কিন রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। ডিএসএর-এর ন্যাশনাল ডিরেক্টর মারিয়া সভার্ট বলেন তার দল পুঁজিবাদকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের সঙ্গে সমাঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে না। তাই বলে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বিপ্লবী কমিউনিজম নয়। গত মে মাসে প্রাইমারীতে জয়ী হওয়া ডিএসএর সদস্য সারা ইনামোরাতো বলেন, ‘পুঁজিবাদ কাজ করছে না। তাই বলে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র অপরিহার্যরূপে পরস্পরের বিপরীত তা আমি মনে করি না। উভয় মতবাদ থেকে ভাল শিক্ষা নেয়ার আছে।’ ২০১৬ এর প্রাইমারীতে বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারাভিযানের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা কতকটা পাদপ্রদীপের আলোয় আসলেও স্যান্ডার্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হলেও তাঁর প্লাটফর্ম হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিতে ভুল করেনি। তাঁরা তত্ত্ব¡গতভাবে পুঁজিবাদকে আঘাত করেননি। তাঁরা তাদের বক্তব্যে পুঁজিবাদকে মৌলিকভাবে অক্ষত রেখে সামাজিক নিরাপত্তার জালকে আরও প্রসারিতও পুনর্বণ্টিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই সোশ্যালিস্টরা নরওয়ে-সুইডেনের মতো দেশগুলোর সমাজকল্যাণ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী যদিও সেই দেশগুলো সমাজতান্ত্রিক দেশ নয়। বরং এরা মুক্ত বাজার অর্থনীতির দেশ যেখানে বিপুল অঙ্কের কর বসিয়ে সেই অর্থ দিয়ে উদার হস্তে জনকল্যাণমূলক সেবা ব্যবস্থা চালু রাখা হচ্ছে। মার্কিন সমাজতন্ত্রীরা যে বিল্পবী সমাজতন্ত্রের অনুসারী নয় তার নিশ্চিততম লক্ষণ হলো তারা দেশের দ্বিদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করতে ইচ্ছুক। মিজ ইনামোরাতো, সামার লি, ওকাসিও-কর্টেস ও রাশিদা তুলাইবÑ এরা সবাই স্যান্ডোর্সের তোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য। স্যান্ডার্স ও ওকাসিও কর্টেজ তো অন্যান্য ডেমোক্র্যাট সদস্যদের জন্য প্রচারাভিযান চালিয়েছেন। ইসারম্যান বলেন, ডিএসএ সদস্যরা ইউরোপীয় নয়, তাঁরা সুনিশ্চিতভাবে বলশেভিক ধরনের বিপ্লবে বিশ্বাস করে না। ডেমোক্র্যাটিক দলে সোশ্যালিস্টদের যেটুকু যা প্রভাব আছে তার কারণে কিছু কিছু মানুষ নার্ভাস বোধ করলেও বেশিরভাগ ভোটারের কাছে তাদের ডেমোক্র্যাট ও সোশ্যাস্টিদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য তেমন কিছুই নেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×