জাহিদুল আলম জয় ॥ সেই ২০০৭ সালে সর্বশেষ ফিফা বর্ষসেরা হয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কাকা। এরপর গত ১০ বছর এই গৌরবময় এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন শুধুই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসি। দু’জনে পাঁচবার করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
অবশেষে দুই সুপারস্টারের দীর্ঘ রাজত্বের অবসান ঘটেছে। কাকার পর দুই তারকার বাইরে এবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও বিশ্বকাপে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্সের কারণেই এ স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। এর আগে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ও উয়েফারও বর্ষসেরা হন মডরিচ। যে কারণে ২০১৮ সালটা তার সোনায় মোড়ানো সাফল্যে ভাস্বর হলো। ব্যক্তিগত শোকেসে তিনি তিনটি মর্যাদার ট্রফি রাখতে পেরেছেন। সোমবার রাতে লন্ডনে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল এ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে এ বছরের সেরা পুরুষ ফুটবলার হিসেবে মডরিচের নাম ঘোষণা করা হয়। এক্ষেত্রে তিনি হারিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ও মোহাম্মদ সালাহকে। আর মেসি তো সেরা তিনেই জায়গা পাননি। সেরা হওয়ার পথে মডরিচ পেয়েছেন ২৯.০৫ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় হওয়া রোনাল্ডো পেয়েছেন ১৯.০৮ শতাংশ আর তৃতীয় হওয়া সালাহ’র ঝুলিতে জমা পড়েছে ১১.২৩ শতাংশ ভোট।
ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে রিয়ালের টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মডরিচ। মাদ্রিদের ক্লাবটির হয়ে গত মৌসুমে উয়েফা সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপাও জিতেন তিনি। আর রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে ফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখেন। টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবে দারুণ খেলেন তিনি, দুটি গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করান ১টি। জিতেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’। জাতীয় দলের কোচ, অধিনায়ক, বিশ্বজুড়ে ফিফা নির্বাচিত সাংবাদিক ও ফিফা ডটকমে নিবন্ধন করা ফুটবলপ্রেমীদের ভোটে বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। ফিফার বর্ষসেরা ও ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর ব্যালন ডি’অর পুরস্কার শুরুতে আলাদাভাবে দেয়া হতো। পরে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছর দুটি পুরস্কার একীভূত হয়। তবে ২০১৬ সাল থেকে আবার আলাদাভাবে দেয়া হচ্ছে পুরস্কার দুটি।
বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন রাশিয়া বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা বেলজিয়ামের থিবো কুর্তোয়া। সেরা কোচ হয়েছেন ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম, সেরা গোলের পুসকাস এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন সালাহ। আর সেরা মহিলা খেলোয়াড় হয়েছেন ব্রাজিলের মার্তা। ক্যারিয়ারের সেরা ব্যক্তিগত অর্জনের পর মডরিচ বলেন, এই এ্যাওয়ার্ড দেখাচ্ছে যে, আমরা সবাই কঠিন পরিশ্রম আর নিবেদন দিয়ে সেরা হতে পারি। সব স্বপ্ন সত্যি হতে পারে। গত মাসের শেষদিকে রোনাল্ডো ও সালাহকে হারিয়েই উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বিশ্বাস, সামনে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আসবে এই দুই জনের সামনে। মডরিচ বলেন, এখানে এই ট্রফির সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক সম্মানের ও দারুণ অনুভূতির। সবার আগে আমি সালাহ ও রোনাল্ডোকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে তোমাদের এই ট্রফির জন্য লড়াই করার আরও সুযোগ থাকবে।
তার মতে সতীর্থদের সহায়তা, কোচের পরামর্শ ছাড়া সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা সম্ভব হতো না। তাইতো সতীর্থ, স্বজনদের পাশাপাশি ভক্তদেরও কৃতজ্ঞতা জানান ক্রোয়েট অধিনায়ক।
তিনি বলেন, এই ট্রফি কেবল আমার একার নয়, এটা আমার রিয়াল মাদ্রিদ আর ক্রোয়েশিয়ার সতীর্থদের। আমার কোচদের ছাড়া আমি এটা জিততে পারতাম না। আমার পরিবার ছাড়া আমি যে খোলোয়াড় তা হতে পারতাম না। ভক্তরা যে সমর্থন যুগিয়েছে ও ভালবাসা দিয়েছে তারজন্য তাদের ধন্যবাদ। এটা আমার জন্য অনেক কিছু। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা অনুষ্ঠানে মেসি ও রোনাল্ডো উপস্থিত না থাকায় আফসোস প্রকাশ করেন। এদিকে ব্যক্তিগতভাবে সেরা হতে না পারলেও টানা ১২ বারের মতো ফিফার বর্ষসেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন মেসি ও রোনাল্ডো।
তবে জায়গা হয়নি নেইমার ও সালাহর। ২০০৭ সাল থেকে ফিফার বর্ষসেরা দলে জায়গা পেয়ে আসছেন আর্জেন্টাইন ও পর্তুগীজ অধিনায়ক। এছাড়া নবমবারের মতো জায়গা পেয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও স্পেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস।
