ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বরাদ্দ কমালে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে ॥ জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বরাদ্দ কমালে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে ॥ জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বরাদ্দ কমানো হলে তা শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে বলে বিশ্বনেতাদের সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি বলেছেন, “শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে খরচ এবং কর্মীর সংখ্যা কমালে তা শান্তি মিশনের কাজে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। শান্তিরক্ষায় সামনের সারিতে যারা কাজ করছে; তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে।” জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে সামনের কাতারে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৬৭ জন জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ১৬৬ জন নারী। ইথিওপিয়া ও রুয়ান্ডার পর বাংলাদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী এখন বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালনের সময় নিহত হয়েছেন। সংঘাতপ্রবণ এলাকার মানুষের জান মাল রক্ষার পাশাপাশি শান্তি ফিরিয়ে আনতে ভূমিকার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ভূমিকা বরাবর প্রশংসা পেয়ে এলেও বাজেট স্বল্পতার কারণে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও তাদের কর্মক্ষমতায় অনেক ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার জাতিসংঘ ও শান্তি মিশনের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে আনার পথে হাঁটছে। গতবছর যুক্তরাষ্ট্র শান্তিরক্ষা মিশনের মোট বাজেটের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ দিতে রাজি হলেও ডিসেম্বরে তা ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার কমানোর ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মঙ্গলবারও জাতিসংঘে তার বক্তৃতায় বলেছেন, শান্তি মিশনের মোট বাজেটের ২৫ শতাংশের বেশি তার দেশ দিতে রাজি নয়। কিন্তু যেসব দেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে, তাদের কথাতেও যে নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের সচিবালয়ের আস্থা রাখা উচিৎ- সে বিষয়টি বিশ্ব নেতাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের উদ্যোগে 'অ্যাকশন ফর পিস কিপিং' শীর্ষক ওই বৈঠকে শান্তি মিশনের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিশ্বের মানুষের মঙ্গলের জন্য। সুতরাং এ কার্যক্রমের মর্যাদা রক্ষায় অবশ্যই ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। “বহু মানুষের জীবনে জাতিসংঘের এই শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আশার আলোকবর্তিকা; তাই এটাকে আমাদের অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষীদের এমন সব জায়গায় পাঠানো হয়; যেখানে অশান্তি বিরাজ করছে। সেখানে তাদের নানা ধরনের অরাজকতা ও হুমকির মোকাবেলা করতে হয়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানের সেনা সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে পাশাপাশি কাজ করে। এসব বিষয় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে কঠিন ও বিপজ্জনক করে তোলে। “এ কারণে শান্তিরক্ষীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। আর সেই দায়িত্ব পালনে তাদের যথেষ্ট কর্তৃত্ব এবং আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত করতে হবে। মোতায়েনের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও আন্তরিকতা বিবেচনায় নিতে হবে। তাদের নিরাপত্তা অবশ্যই বাড়াতে হবে।” জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তোনিও গুতেরেস শান্তি মিশনে শান্তিরক্ষীদের প্রাণহানির উচ্চ হার দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং (এফোরপি) নামের এ উদ্যোগ নেন। শন্তি মিশনে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতিসংঘের এ কার্যক্রমকে আরও বেশি কার্যকর করতে সদস্য রাষ্ট্র, নিরাপত্তা পরিষদ, মিশনে অংশগ্রহণকারী দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোকে নিয়ে একযোগে কাজ করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। এফোরপি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের তাদের কাজের জন্য আরও উপযুক্ত করে তুলবে- এই প্রত্যাশা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিমিশনের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সদস্য দেশগুলোকে তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে যথাযথভাবে। আর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সবসময়ই প্রস্তুত। এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে বাংলাদেশ কখনও ব্যর্থ হয়নি। “শান্তিরক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক শান্তিরক্ষীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তবু দায়িত্ব পালনে আমরা কখনও পিছ পা হইনি। এখন আমরা সম্ভব স্বল্পতম সময়ে আমাদের শান্তিরক্ষী মোতায়েন করতে পারি । যে কোনো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবেলা করার মত প্রশিক্ষণ তাদের দেওয়া হয়। যেখানে তারা যায়, মানুষের হৃদয় ও মন জয় করতেই তারা কাজ করে।” বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের নিরাপদ রাখার সক্ষমতা শান্তিরক্ষীদের থাকতে হবে। প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার কাজটি তাদের করতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে মালিতে শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষায় মাইন প্রতিরোধক যানবাহন সরবরাহ করার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগত আগ্রহে শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথাও তিনি বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা কঙ্গোতে প্রথম নারী হেলিকপ্টার পাইলট পাঠিয়েছি । এটি আমাদের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।” শান্তি মিশনে যৌন হয়রানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
×