ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি

প্রকাশিত: ০২:৪১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ পরিবহন সেক্টরের কাছে জিম্মি

নিজস্ব সংবাদদাতা,পটিয়া ॥ বাড়তি ভাড়া আদায় কোনভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন পরিবহন সেক্টরের কাছে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ জিম্মি রয়েছে। বৃহস্পতিবার এলেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তিন গুন ভাড়া বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। পটিয়া বাস স্টেশন এলাকা থেকে শাহ আমানত তৃতীয় সেতুর উত্তর পারের ভাড়া ২০ টাকা হলেও প্রতিদিন রিজার্ভের অজুহাতে ৪০-৫০টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এদিকে, সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মহা সড়কে অটোরিক্সা সিএনজি ও তিন চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ হলে কাছাকাছির যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে যাত্রী কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন দাবি জানানো হলেও উপজেলা প্রশাসন কিংবা ট্রাফিক পুলিশ এই পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যার কারণে ২০ টাকার পরিবর্তে ৪০-৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে। তবে যাত্রীদের সুবির্ধাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কের পটিয়া পর্যন্ত বিআরটিসির ৪টি দোতলা বাস থাকলেও সন্ধ্যার পর এসব বাস বন্ধ হয়ে যায়। বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিয়মিত বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। পটিয়া ছাড়াও চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী পিএবি সড়কের যাত্রীরা পরিবহন সেক্টরের কাছে যেন জিম্মি। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালালেও বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ অদৃশ্য কারণে বন্ধ হচ্ছে না। যাত্রীদের প্রশ্ন- মহা সড়কের পটিয়ায় বাড়তি ভাড়া আদায় ট্রাফিক কিংবা উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করতে পারবে কি? ট্রাফিক বিভাগ ও যাত্রীদের কাছ থেকে জানা গেছ, বৃহস্পতিবার এলেই বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা যেন ‘চাঁদ’ রাত মনে করেন। নিজেদের ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়ের কারণে যাত্রীরা জিম্মি। কোন যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে নাজেহালও করা হয়। এমনকি মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়েও দেওয়া হয়। অথচ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কের পটিয়াসহ যেসব এলাকায় বাস রয়েছে তাতে বেশির ভাগ গাড়ির ফিটনেস নেই। তাছাড়া বেপোরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটনাও ঘটছে। সেতু ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কঠোর নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে মহা সড়কে তিন চাকার অটোরিক্সা সিএনজি নেই বললেই চলে। প্রতিদিনই হাইওয়ে পুলিশ কিংবা ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিএনজি গাড়ি আটক অব্যাহত রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাস মালিক ও শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নতুন করে শুরু করেছে। মইজ্জ্যারটেক এলাকার মোহাম্মদ ছৈয়দ নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেছেন তিনি পটিয়া সদর থেকে বাসে করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে গেছেন। এইভাবেই প্রত্যেক যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছাড়াও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের কাছ প্রায় সময় শুনা যায়। বাস মালিক সমিতির মহা সচিব আবুল কালাম আজাদের বাড়ি পটিয়া সদরে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি যাত্রী কল্যাণ পরিষদ ও সাধারণ যাত্রীরা ইতোমধ্য অবহিত করেছেন। তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি ট্রাফিক বিভাগকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহা সড়কে চার চাকার লেগুনা নামে যে গাড়ি রয়েছে এসব গাড়ি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের কাছ থেকে বাস শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। বাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। সম্ভবত কিছু কিছু ড্রাইভার মাঝে মধ্যে ৫-১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে নির্দেশনা রয়েছে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা না হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কোন যাত্রী প্রমানস্বরূপ দেখাতে পারলে বাড়তি ভাড়া ফেরতসহ চালকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়টি থানা ও ট্রাফিক বিভাগকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। ট্রাফিক পরিদর্শক (চট্টগ্রাম দক্ষিণ) শাহ মো. আরিফুর রহমান বলেন, মহা সড়কে তিন চাকার অটোরিক্সা সিএনজি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু বাস চালক সিন্ডিকেট করে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ শুনা গেছে। তাছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হলেই বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তিনি বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক পরিবহন সমিতির নেতাদের অবহিত করেছেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা না হলে ট্রাফিক আইনে বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
×