ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আকিল জামান ইনু

ধরণী রক্ষায় মার্টিনেজের যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ৯ অক্টোবর ২০১৮

ধরণী রক্ষায় মার্টিনেজের যুদ্ধ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে, সেপ্টেম্বরের অসময়ে নেমে আসা গরমের বিকেলে; মার্টিনেজ ও তার সঙ্গীরা জড়ো হয়েছিলেন এক সমাবেশে। সিদ্ধান্ত হলো সবাই মিলে মামলা করবেন সরকারের বিরুদ্ধে। অভিযোগÑ পরিবেশ রক্ষায় সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা তাদের জীবন এবং স্বাধীনতাকে ফেলেছেন হুমকির মুখে। সভায় মার্র্টিনেজের স্পষ্ট উচ্চারণ, ‘আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি, যা কিছু আমরা ভালবাসি তা রক্ষায় যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে। আমরা ভালবাসিÑ এই মাটি, পানি, পাহাড়, নদী ও আমাদের বনভূমি।’ ইউজেনের সমাবেশে সমবেতদের উদ্দেশে ষোলো বছরের মার্টিনেজ আরও বলেন, ‘এটি সেই মুহূর্ত, যখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কেমন পৃথিবী রেখে যাব।’ সদ্য তারুণ্যে পা রাখা অথবা পা রাখতে চলা অনেকেই মার্টিনেজের সঙ্গে এক মত হবেন এতে সন্দেহ নেই। পরিবেশ রক্ষায় মার্টিনেজের যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল ৬ বছর বয়স থেকে এবং গত ১২ বছর এই সংগ্রাম চলে আসছে নিরলসভাবে। ৬ বছর বয়সে মার্টিনেজ দেখেন জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর লিয়োনার্দো দ্য ক্যাপ্রিয়ো অভিনীত ডকুমেন্টরি দ্য ইলিভেন্থ আওয়ার। বিষয়টি তাকে এতটা প্রভাবিত করে যে, তিনি এই ইস্যু নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তা প্রথম ছড়িয়ে দেন তার নিজের আমেরিকান আদিবাসী সমাজে। আর হিপ হপ পারফরমার হিসেবে তার জনপ্রিয়তা, গানে পরিবেশ সংরক্ষণে বার্তা তাকে করে তোলে পরিবেশবাদীদের কণ্ঠস্বর। আজ সারা পৃথিবী ঘুরে তিনি বলছেন পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বের কথা, বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। তার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় স্কুল থেকে শুরু করে জাতিসংঘ পর্যন্ত। তবে তিনি সব সময়ই চান তরুণ প্রজন্ম বিষয়টি নিয়ে নিজ থেকে এগিয়ে আসবে, কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একজন নেতার মানে হলো আমার যা কিছু বলার তা পৃথিবী জুড়ে আমার মতো যারা আছেন, ভাবেন তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। তাদেরও অধিকার আছে ভালবাসার কথা বলবার।’ মার্টিনেজ বিশ্বাস করেন এক্টিভিজম মানে কেবল কিছু গরম বক্তৃতা আর উত্তেজক ¯েøাগান নয়। বিষয়টি কাজে প্রমাণ করতে হয়। নিজ এলাকা বোল্ডার, কলোরাডোতে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সম্মত করেছেন প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর অতিরিক্ত কর বসাতে। এ ছাড়াও খোলা স্থানে কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার চেষ্টাতে। এখন তিনি কাজ করছেন আমেরিকা জুড়ে ফ্রাঙ্কিং নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে। যেখানে বৃহৎ শক্তিগুলোর স্বার্থ জড়িত সেক্ষেত্রে এ রকম একটি কঠিন লক্ষ্য অর্জন কতটুকু সম্ভব জানতে চাইলে মার্টিনেজ জানান, সমস্যাটির তলানী পর্যন্ত তিনি ক্ষতিয়ে দেখেছেন এবং তার আছে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা। ইতোমধ্যেই তিনি কলোরোডাতে দাবি তুলেছেন স্কুল এবং হাসপাতালের পাশে ফ্রাঙ্কিং নিষিদ্ধ করার। তার বিশ্বাস এভাবেই পুঁজিবাদী বেনিয়া কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে আনা সম্ভব। তার ভাষায়, ফ্রাঙ্কিং নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় মিছিল করা যতটা সহজ, ততটা সহজ নয় এ দাবি আদায় করা। কাজেই আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে সমাধানের পথ বের করতে হবে। তার সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি এখন আদালতে। ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধ আলোড়ন তুলেছে পৃথিবী জুড়ে পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় কর্মীদের মাঝে। তারা এখন আদালতের সিদ্ধান্ত দেখার অপেক্ষায়। প্রাথমিক শুনানি শেষে ধারণা মিলছে আদালত মার্টিনেজের পক্ষেই পর্যবেক্ষণ দেবেন। তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়, চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে লাগতে পারে লম্বা সময়। বর্তমানে ১৮তে পা রাখা মার্টিনেজের হাতে হয়ত সে সময় আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো পরিবেশ বিপর্যয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়াÑ প্রাচীনা এ পৃথিবীর হাতে সময় আছে কতটা; যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়। এ বার্তাটিই মার্টিনেজ ছড়িয়ে দিতে চান সবখানে।
×