ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘গায়েবি’ মামলার রিটে হাইকোর্টে বিভক্ত আদেশ

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ৯ অক্টোবর ২০১৮

‘গায়েবি’ মামলার রিটে হাইকোর্টে বিভক্ত আদেশ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ কয়েকজন আইনজীবীসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ‘কাল্পনিক’ মামলা করার অভিযোগে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট মামলায় বিভক্ত আদেশ এসেছে। মঙ্গলবার শুনানি শেষে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করলেও অপর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রিট খারিজ করে আদেশ দেন। আইনজীবীরা বলছেন, এ রিট মামলা এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি সুরাহার জন্য একটি একক বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামাল হোসেন ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল হক টুটুল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে আবেদনকারীদের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘অসংখ্য’ মানুষের বিরুদ্ধে করা ‘উদ্দেশ্যমূলক কথিত ‘কল্পিত’ ফৌজদারি মামলা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং এ ধরনের ‘কল্পিত’ মামলা দায়েরে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর দেওয়া রুলে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (নর্থ জোন), রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনারসহ ঢাকা মেট্রাপলিটন এলাকার বিভিন্ন থানার ওসিদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়ে। সেইসঙ্গে ঢাকা মহানগর এলাকায় আবেদনকারীসহ ও অন্যদের বিরুদ্ধে হওয়া কথিত ‘কল্পিত’ মামলাগুলো তদারকি করতে ও অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক। আদেশে বলা হয়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইন অনুসারে মুক্তভাবে তদন্তকাজ পরিচালনা করতে পারবেন। আর পুলিশ মহাপরিদর্শককে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে রিট আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। আদেশে তিনি বলেন, রিট আবেদনকারীরা এসব ফৌজদারি মামলার আসামি। সুতারাং জনস্বার্থে বা সংক্ষুব্ধ হয়ে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট আবেদন করার এখতিয়ার নেই। “এছাড়া এ বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত মানতে হাই কোর্ট বাধ্য। তাই প্রাথমিক শুনানি শেষে এই রিট আবেদন সরাসরি প্রত্যাখান করা হল।” গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার আগে-পরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়, যেগুলোকে ‘গায়েবি’ মামলা বলছেন দলটির নেতারা। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবরের মধ্যে ৪ হাজার ১৪৯টি মামলা হয়েছে বলে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে বিএনপি। এসব মামলায় গাড়ি ভাংচুর, হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ‘কল্পিত’ এসব মামলার হয়রানি বন্ধ ও এ বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির তিন আইনজীবী একটি রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনকারী তিনজন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়া নিজেরাও এ ধরনের কয়েকটির মামলার আসামি। সোমবার আবেদনকারী পক্ষের শুনানির পর মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য শোনে আদালতক। এরপর হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে বিভক্ত আদেশ আসে। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ১১, ১২, ১৩, ১৫ এবং ১৬ তারিখে কতগুলো মামলা হয়েছে। এসব মামলায় খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরীর নামও রয়েছে। “আমি আজ শুনানিতে বলেছি, বিষয়টি হলো ফৌজদারি। এই ফৌজদারির ব্যপারে যে বিধি-বিধান আছে, সে অনুযায়ী মামলায় প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সুতরাং এই মামলাগুলোর ব্যাপারে রিট আবেদন করা চলবে না। এই কথা বলে আমি উচ্চ আদালতের নজির উপস্থাপন করেছি।” শুনানি শেষে দুজন বিচারক দুরকম মতামত দেওয়ায় বিষয়টি এখন প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে তৃতীয় কোনো বিচারকের কাছে পাঠানো হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। জয়নুল আবেদীন বলেন, “যেহেতু প্রিজাইডিং জাজ (নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি) রুল দিয়েছেন, তাই সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী তৃতীয় বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতির আদেশটি কার্যকর থাকবে এবং আদেশ অনুযায়ী পুলিশও তা প্রতিপালন করবে।’ তার এ মতের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “না, এ অদেশ কার্যকর করার কোনো উপায় নাই। তৃতীয় বিচারপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই হবে মামলার আদেশ।
×