ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোকসানা বেগম

বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে শঙ্কায় সাকিব!

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১০ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে শঙ্কায় সাকিব!

সাত বছর আগে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথা মনে আছে। দেশের মাটিতে হয়েছিল বিশ্বকাপের খেলা। অথচ সেই বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। নিজেকে ফিট দাবি করেও লাভ হয়নি। নির্বাচকরা তাকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। তাই দলে রাখেননি। সে কী কান্না ! আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মাশরাফি। এবার ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেও কী আরেকজনের আবেগের বহির্প্রকাশ দেখা যাবে? তিনি কী সাকিব আল হাসান হতে চলেছেন ? কনিষ্ঠা আঙ্গুলের ইনজুরি যে তার বিশ্বকাপ খেলাই ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে ! যতদূর জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে সাকিব জানতে পেরেছেন আঙ্গুলে যে সংক্রমণ আছে, তা নির্মূল হতেই লাগতে পারে ছয় মাস। ছয় মাসের আগে তাই অস্ত্রোপচারের কোন সম্ভাবনা নেই। যদি তাই হয়, তাহলে বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০ মে। শেষ হবে জুলাইয়ের ১৪ তারিখে। বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনও আছে সাত মাস। সাকিবের সংক্রমণ পুরোপুরি শেষ হতেই যদি লাগে ছয় মাস, তাহলে বিশ্বকাপ খেলবেন কিভাবে ? সংক্রমণ শেষ হলে এরপর না সাকিব স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে আছে অস্ত্রোপচারের ভাবনাও। যদি অস্ত্রোপচার নাও লাগে শেষপর্যন্ত তাহলেও তো খেলায় ফিরতে আরও সময় লাগার কথা ! চলতি বছর শুরুতে দেশে হওয়া তিনজাতি সিরিজে বাঁ হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে যে ব্যথা পান সাকিব, সেই আঙ্গুল নিয়ে এখনও ভুগছেন। এমন ভোগাই ভুগছেন, এ আঙ্গুল আর শতভাগ ফিট হওয়া সম্ভব না। আঙ্গুল নিয়ে তাই মহা চিন্তায় আছেন সাকিব। দশ মাসে সাকিবের আঙ্গুলের উন্নতি হওয়ার কথা। সেখানে হয়েছে অবনতি। জানুয়ারিতে তিনজাতি সিরিজের বল ধরে রান আউটের উদ্দেশে থ্র্রো করতে গিয়ে আঙ্গুলে চোট পান। তখনই চারটি সেলাই হয়। এরপর আঙ্গুল ফুলে ওঠে। এরপর খেলেন নিদাহাস ট্রফির শেষ দুটি ম্যাচ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ খেলার পর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সিরিজ খেলেন। আঙ্গুলে ব্যথা নিয়েই খেলেন। ইনজেকশন নিয়ে খেলেন। এরপর এশিয়া কাপ না খেলার পক্ষেই ছিলেন। অস্ত্রোপচার লাগলে, করানোর পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ছিল যে সাকিবকে খেলার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেও বলা হয়। সাকিব বিসিবির কথামতো কাজও করেন। কিন্তু এশিয়া কাপ খেলতে গিয়েই আরও বড় বিপত্তি তৈরি হয়ে যায়। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া যান সাকিব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ গ্রেগ হয়ের শরণাপন্ন হন। ইনফেকশন নাকি কমে যাচ্ছে। যা আশার কথা। কিন্তু সেই ইনফেকশন কমার আগে সাকিব অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে পারবেন না। আবার শেষপর্যন্ত অস্ত্রোপচার ছাড়াও সব ঠিক হওয়া সম্ভব। কিন্তু শতভাগ ঠিক আর হবে না। সাকিবই যেমন বলেছেন, ‘আঙ্গুলটা আর কখনও শতভাগ ঠিক হবে না। কারণ, এটা হচ্ছে হাড্ডিটা যেটা নরম হাড্ডি, এটা আর কখনও জোড়া লাগার সম্ভাবনা নাই। তবে সার্জারিটা হবে এমন যে, ওরা এমন একটা সিচুয়েশনে এনে দিবে, যেন আমি ব্যাট-ট্যাড ভালভাবে ধরতে পারব, ক্রিকেট খেলাটা চালাতে পারব।’ সাকিব একজন ক্রিকেটার। ক্রিকেটই তার ধ্যান-জ্ঞান। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ক্রিকেট ছাড়তে পারবেন না। কোনভাবেই না। তাই সাকিব যতটা বেশি ঠিক হওয়া যায়, ক্রিকেট খেলার মতো ঠিক হয়েই মাঠে নামবেন। সাকিব বলেন, ‘ইনজুরির দিক থেকে এটাই তো আসলে সব থেকে বড়। এর আগে যে সার্জারিটা হয়েছিল ওটা খুব বেশি দিনের না, ওটা প্রথমেই যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট হতো তাহলে অনেক কম সময়ে হয়ে যেত। তবে ওটা আসলে অত বেশি চিন্তার ছিল না। তবে এটা আমার কাছে মনে হয় অত বেশি। একটা জিনিস যে, হাতটা পুরোপুরি তো আর ওইভাবে ঠিক হবে না, কিন্তু ক্রিকেট খেলার মতো ঠিক করতে হবে আঙুলটা।’ ইনফেকশন নিয়ে সাকিবের বিশেষ চিন্তা, ‘আসলে ইনফেকশন আমার সব থেকে বড় টেনশনের জায়গাটা। কারণ, ওটা যতক্ষণ পর্যন্ত না জিরো পার্সেন্টে আসবে, কোন সার্জন হাত দিবে না। কারণ ওখানে হাত দিলে পরে বোনে চলে যাবে আর হাড়ে চলে গেলে পুরো হাত নষ্ট। এখন আমার মেইন পয়েন্ট হচ্ছে কীভাবে ইনফেকশনটা সারানো যায়। অস্ট্রেলিয়ায় আমি ইনফেকশনের ট্রিটমেন্টের জন্যই যাচ্ছি, আর কোন ট্রিটমেন্টের জন্য যাচ্ছি না।’ চিকিৎসকদের মতে, কমপক্ষে তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকবেন সাকিব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনটা হতে পারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে। তবে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) ষষ্ঠ আসরের শুরু“থেকেই খেলার বিষয়ে আশাবাদী সাকিব। ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক তিনি। বলেন, ‘এখন অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি, ওরা যদি বেটার কোন ট্রিটমেন্ট দিতে পারে তাহলে আরও তাড়াতাড়ি হয়ত সারার সম্ভাবনা থাকবে। এখন মূল যেটা হয়েছে, ইনফেকশনটা তো দূর করতে হবে। ওটা চলে গেলেই আসলে বুঝা যাবে কত সময় লাগবে। আর মেইন সার্জারি যেটা করার কথা, ওটা হলে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। সাধারণত ছয় সপ্তাহ লাগে। দুই সপ্তাহ বেশি ধরা হয়। যদি ছয় সপ্তাহ হয় তাহলে বিপিএলের বেশ আগেই ফিট হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’ এ বছর যে আর মাঠে নামা হচ্ছে না সাকিবের, তা নিশ্চিতই বলা চলে। তাতে দলকে ভালভাবেই সামনে জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ভুগতে হবে। তবে কষ্টটা সাকিবেরই সবচেয়ে বেশি। আঙ্গুল যে শতভাগ কখনোই ঠিক হবে না। সাবেক অধিনায়ক, বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান অবশ্য সাকিবকে একজন যোদ্ধা আখ্যা দেয়ার সঙ্গে বলেছেন, ‘ ইনজুরি খেলারই একটা অংশ এটাতে আসলে কিছু করার থাকে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আলাপ আলোচনা করে এশিয়া কাপে খেলেছিল সাকিব। সাকিব একজন যোদ্ধা। যেহেতু আলাপ আলোচনা করে এশিয়া কাপে খেলেছিল কিন্তু পরে সত্যি ওর হাত দেখে আমরাই ভয় পেয়েছিলাম। তারপরও আল্লাহ’র রহমতে সিরিয়াস কিছু হয়নি, আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। যেটা হবে ফিজিওর সঙ্গে আমরা কথা বলব যে আগের অবস্থায় কেন গিয়েছে। সেটা হয়ত আগেই চাইলে সে ক্লিয়ার করে দিতে পারত। ক্রিকেটারদের জন্য সবচেয়ে বেস্ট যে চিকিৎসা সেটা আমরা করার চেষ্টা করব। দেখি অপারেশনের পর কি হয়, তারপর বলতে পারব। আমার কাছে মনে হয়, সাকিব ব্যথা নিয়ে যে পারফর্মেন্স করেছে, সে একজন ফাইটার বলেই পেরেছে।’ সাকিবের এত খারাপ অবস্থা। ফিজিও কী করেছেন? আকরাম জানান, ‘ফিজিওর বিষয়টা আমি বলেছি, আগেও বলেছি, এখনও বলছি। সাকিব যখন দেশে আসবে তখন ওকে নিয়ে ফিজিওর সঙ্গে বসব তখনই বলা যাবে ঘটনাটা কি হয়েছিল।’ সেই ঘটনা জানার আগে সাকিব নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, আঙ্গুল আর শতভাগ ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তা না থাকলেও খেলার মতো অবস্থায় আনার ভাবনায় ছিলেন। তা করতে না আবার সাত মাসের বেশি সময় লেগে যায়। তাহলেই তো সাকিবের বিশ্বকাপ খেলা ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। সাকিব স্বাভাবিকভাবেই তাই আঙ্গুল নিয়ে মহা চিন্তায় আছেন।
×