ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুটবলে জাগরণ, গ্যালারিতে দর্শক

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১০ অক্টোবর ২০১৮

ফুটবলে জাগরণ, গ্যালারিতে দর্শক

সদর উদ্দীন লিমন ॥ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা ফুটবল হঠাৎ করে জেগে উঠেছে। মাঠে ফিরেছে দর্শক। বাংলাদেশের ম্যাচ থাকলে স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভরে যাচ্ছে দর্শকে। অনেকে টিকিট না পেয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরছেন। অনেকে বেশি দামে টিকিট কিনে খেলা দেখছেন। আবার এমন খবরও শুনেছি যে, সিলেটে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশের ম্যাচের টিকিট কিনেও দর্শকদের অতিরিক্ত চাপে স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেনি অনেকে। পরে আয়োজকরা বাধ্য হয়ে দর্শকদের টিকিট ফেরত নিয়ে মূল্যের চারগুণ বেশি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি সময়ে সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। বড় কোন শিরোপা অর্জন করতে না পারলেও অন্তত জয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ইংলিশ কোচ জেমি ডের হাত ধরেই এই সাফল্য আসছে। এশিয়ান গেমস, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। অন্যদিকে, একের পর এক চমক উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। সর্বশেষ ভুটানে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ-১৮ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত ৭ অক্টোবর টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা অর্জন করে বাংলাদেশ। এর আগে গত মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের এএফসি অনুর্ধ-১৬ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। টুর্নামেন্টে ‘বি’ গ্রুপে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারে উঠেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে লাওসকে ১-০ গোলে হারালেও ফিলিপাইন ‘বি’ দলের কাছে ০-১ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালের ম্যাচে আগামী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিন। গত মাসে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত শুরুর পরও শেষমেশ গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচে জয় পেলেও নেপালের বিপক্ষে হেরে সাফ মিশন শেষ হয় স্বাগতিক বাংলাদেশের। সাফে না পারলেও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এবার মাত্র একটি ম্যাচ ঢাকায় রেখেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটে। সেমিফাইনালের ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজারে। আর ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। মূলত মাঠে দর্শক টানার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফে। আর বাফুফে তাদের এই সিদ্ধান্তে সফল। বাংলাদেশে ঢাকার বাইরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করলেই দর্শক হয়। যে প্রমাণ আমরা আগেও বহুবার পেয়েছি। এই তো গত ২৯ আগস্ট নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায় ১-০ গোলে। বাংলাদেশ হারলেও এই ম্যাচে স্টেডিয়াম ছিল দর্শকে ভর্তি। নীলফামারীতে এটি ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ। সেজন্যই দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ একটু বেশি ছিল। এর আগেও আমরা দেখেছি যে, ঢাকার বাইরে যশোর, সিলেট, রাজশাহীতে বাংলাদেশের ম্যাচে গ্যালারি ছিল দর্শকে ভর্তি। বাংলাদেশে ফুটবলে এখন ঢাকায় দর্শক হয় একেবারেই কম। কিন্তু ঢাকার বাইরে ফুটবল হলে স্টেডিয়ামের গ্যালারি থাকে দর্শকে ভর্তি। সিলেটে সেটিই লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের ম্যাচে স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শক এসেছে খেলা দেখতে। অবশ্য ঢাকায় দর্শক হয় না এ কথা বলাটাও ভুল হবে। বাংলাদেশ দল যদি ভাল করে তাহলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। যেটি আমরা দেখেছি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সময়। বাংলাদেশ একটি ম্যাচ জেতার পর পরের ম্যাচ থেকে দর্শকদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। এমনকি টিকিটের স্বল্পতার কারণে অনেকে বেশি দাম দিয়ে টিকিট কিনেও মানুষ খেলা দেখেছে। ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের চতুর্থ আসরে বাংলাদেশ থেকে দুটি দল খেলেছিল। কিন্তু একটি দলও ফাইনাল খেলতে পারেনি। বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ দল বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর সেমিফাইনাল পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এবার সেমিফাইনাল বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠতে পারে কিনা সেটিই দেখার বিষয়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে এবারের আসরটি পঞ্চম। গত চার আসরের মধ্যে বাংলাদেশ মাত্র একবার ফাইনালে খেলেছে। ২০১৫ সালে ফাইনাল ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের আসরে বাংলাদেশ বাদ পড়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকেই। ১৯৯৬-৯৭ সালেও ভাল করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিপক্ষ দলকে পাত্তাই দিচ্ছে না। প্রতিপক্ষদের বড় ব্যবধানে উড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ কোন গোল হজম করছে না। ২০১৯ সালের এএফসি অনুর্ধ-১৬ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দিয়েছে ২৭টি গোল। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েরা কোন গোল হজম করেনি। আবার সাফ অনুর্ধ-১৮ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে মোট চারটি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা ২৪টি গোল করেছে ও মাত্র একটি গোল হজম করেছে। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে ১৭-০ গোলে হারানোর পর নেপালকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। এরপর সেমিফাইনাল ম্যাচে ভুটানকে ৪-০ গোলে ও ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
×