ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনন্দন অপরাজিত নারী ফুটবলারদের

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ১২ অক্টোবর ২০১৮

অভিনন্দন অপরাজিত নারী ফুটবলারদের

অনুর্ধ-১৮ নারী ফুটবলাররা নেপালকে ১-০ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। গত আগস্ট মাসে অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবলাররা ভারতের কাছে পরাজিত হয়ে শিরোপা অর্জনে ব্যর্থ হলেও পুরো টুর্নামেন্টে মারিয়া তহুরাদের প্রত্যয়ী দল দাপটের সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি শুধু গোলের বন্যায় ভাসিয়েও দিয়েছিল। আর অনুর্ধ-১৮ দলের কৃতী খেলোয়াড়রা দেখাল অন্য এক অনন্য অভিষেকের চিত্র। কারণ অনুর্ধ-১৮ দলের এই আসর প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ভুটানে। অভিষেকের স্মরণীয় মুহূর্তে বাঙালী নারীদের অসামান্য কৃতিত্বে সারাদেশসহ স্বাগতিকরাও বিস্ময়ে অভিভূত হয়। কারণ টানা কয়েক ম্যাচে অপরাজিত থাকার কৃতিত্ব দেখালেও বঙ্গ লালনারা চূড়ান্ত খেলায় মুখোমুখি হয়ে হয়তবা পেছনের দিকে ফিরে তাকায়। মাত্র দুই মাস আগে আগস্টে উদীয়মান কিশোরীদের শিরোপা হারানোর দৃশ্য স্মরণ করে। ফাইনালটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল আমাদের মেয়েদের জন্য। একে তো সফরকারী দল, তার ওপর আগের ইতিহাস তেমন সুখকর নয়। অন্য দেশের দর্শকরাও তেমন সহায়ক হয় না। সব মিলিয়ে প্রথম থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী ম্যাচগুলোতে যে পারদর্শিতা দেখিয়ে ছিল তারা চূড়ান্ত খেলায় সেখানে ছন্দপতন ঘটে। মাত্র ১-০ ব্যবধানে শিরোপা অর্জিত হলেও ১টি গোল দিতেও নারী ফুটবলারদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। যেহেতু শিরোপা জেতার লড়াই প্রতিপক্ষ ও আক্রমণাত্মক কিংবা রক্ষণাত্মক সব ধরনের আবহ তৈরি করে। বিরতির আগ পর্যন্ত কোন গোলই কেউ করতে পারেনি। কিন্তু ৪৯ মিনিটে কাক্সিক্ষত গোলটি আসে মনিকা চাকমার দুরন্ত ফ্রি কিকের মধ্য দিয়ে ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিনের অসামান্য পারদর্শিতায়। নেপালী নারী ফুটবলাররাও তাদের আধিপত্য বিস্তারে বিন্দুমাত্র নমনীয় ছিল না। হিমালয় পর্বতের পাদদেশে গড়ে ওঠা এই শক্ত ধাঁচের নেপালী নারীরা তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করলে শেষ অবধি নদীমাতৃক উর্বর পলিমাটির স্নিগ্ধ আবহে তৈরি হওয়া আমাদের মেয়েরা সর্বশেষ শৌর্য প্রয়োগ করে জয়ের মুকুট দখল করে নেয়। আন্তরিক অভিনন্দন বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের। আবারও প্রমাণ করল কোন খেলাই পুরুষের একচেটিয়া অধিকার নয়। কঠিন পিচ, ভারি বল কোনটাকে আজ তোয়াক্কা করে না রমণীয়, কমনীয় চিরায়ত বাঙালী মেয়েরা। ক্রিকেট আর ফুটবলের মতো কঠিন খেলাকেও আজ তারা জয় করেছে। অদম্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়ে নারীরাও সবক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করছে। সমৃদ্ধির স্বর্ণ দুয়ারে বাংলাদেশ। সেখানে দৃপ্ত অভিযাত্রায় অর্ধাংশ এই গোষ্ঠী স্পর্শ কিংবা অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হলে দেশের সার্বিক অগ্রগামিতা দৃশ্যমান হবে না। প্রত্যেক নাগরিকের সম্মিলিত সহযোগিতা, অংশীদারিত্বই শুধু নয় পারদর্শিতার কৃতিত্ব অর্জনও সমস্ত উন্নয়ন সূচকে একান্ত আবশ্যক। সেই লক্ষ্যে অসম সাহসে বাংলাদেশ নিরন্তর সামনের দিকে অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউই থেমে থাকছে না। নারী, পুরুষ সব শ্রেণীর মানুষ যার যার অবস্থানে থেকে নিজের দায়িত্বটুকু যথার্থভাবে পালন করতে পারলে উন্নত বিশ্বকে ধরা কোন ব্যাপারই নয়। আমরা সেই পথেই নিজেদের গন্তব্য স্থির করেছি। না হলে ভাবা যায় কোমলমতি উদীয়মান তরুণীরা ফুটবলের মতো একটি দুরন্ত খেলায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পিছপা হয় না। খেলার ছলে ফুটবলের মতো দামী ঐতিহ্য নিয়ে নমনীয় মেয়েরা ছেলেমানুষিও করে না। বরং ঐতিহ্যিক এই খেলাকে যথার্থ মূল্য দিয়ে নিজেদের মনন, মেধা, শক্তিমত্তাই শুধু নয় সাহস আর দাপট প্রদর্শন করতেও দ্বিধা করে না। ভারি বলকে শক্ত মাটিতে গড়িয়ে যেভাবে বল তাক করার নৈপুণ্য প্রদর্শন করে সেখানে কোনভাবেই মনে আসে না নারীরা শারীরিকভাবে পুরুষের চাইতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং নরম। উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে নারীদের এই অনন্য অগ্রগামিতা দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধির অন্যতম নিয়ামক শক্তি। যে অমিত তেজ আর দুর্দমনীয় মনোবলে নারীরা আজ ঘর থেকে বাইরে পা রেখেছে। ফুটবলের মতো এক কঠিন খেলাকে নিজেদের আয়ত্তেই আনেনি বিদেশের মাটিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্বে সারাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্তও করেছে। এই অপরাজেয় শক্তির মহিমা যেমন নারী ফুটবলারদের পাশাপাশি সারাদেশও এই বিজয় নিশানের পতাকা সম্মিলিতভাবে উপভোগ করছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সারাদেশ আনন্দের সাগরে ভাসছে। এই অপরাজিত দলকে শেখ হাসিনা অভিনন্দন জানিয়ে তাদের কাছ থেকে আরও সাফল্য প্রত্যাশা করেন। ফুটবলের ইতিহাসের এই গৌরবকে আরও বাড়ানোর উৎসাহ দেন। অপরাজিত প্রতিবেদক
×