ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ১২ অক্টোবর ২০১৮

তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না ॥ ফখরুল

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, বহুল আলোচিত ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দলীয় তদন্তকারীর মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। আর সেই মামলার সাজানো রায়ে তারেক রহমানকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। সুতরাং তার (তারেক) পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, মিডিয়ার একাংশ এই রায় প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে মনগড়া কিছু তত্ত্ব ও তথ্য প্রকাশ করে তার সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দলীয় তদন্তকারীর চক্রান্তে সাজানো মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে। এটা জানার পরও কেউ কেউ তাকে দল থেকে পদত্যাগের যে পরামর্শ দিয়েছেন- তাদের কাছে জনগণ প্রশ্ন করতে পারে যে, এত গুম-খুন করার জন্য দায়ী সরকারের পদত্যাগ কি তারা দাবি করেছেন? নিন্ম আদালতের দেয়া রায়কে যখন আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতিফলন ও বিএনপিকে দুর্বল করার অসৎ উদ্দেশ্য বলছি, তখন সেই রায়ের ভিত্তিতে আমাদের নেতা তারেক রহমানের পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা ক্ষমতাবান কারো তুষ্টির জন্য কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো থেকে দায়িত্বশীল মিডিয়া বিরত থাকবে। তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রকাশিত দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকে ‘রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা’ বলে আদালতের পর্যবেক্ষণের যে খবর প্রচারিত হয়েছে- তাতে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বক্তব্যের হুবহু প্রতিফলন দেখে দেশের জনগণের মতো আমরাও বিস্মিত হয়েছি।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, আদালতের পর্যবেক্ষণে বিরোধী দলের প্রতি সরকার ও সরকারি দলের প্রত্যাশিত আচরণ সম্পর্কে যেসব বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে- তা বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের আচরণের ঠিক বিপরীত। আমরা আশা করব, সরকার আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মান্য করবে। বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এস এম এ কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বর্তমান সরকারের আমলে সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, ছাত্রনেতা জাকিরসহ গুম হওয়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কোনো কথা নেই কেন জনগণ তা জানতে চাইতেই পারে। রায়ের পর্যবেক্ষণে কাঙ্খিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে গত ১০ বছরে হাজারো গুম, খুন, গায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করা, হাজার হাজার গায়েবী মামলা দিয়ে লাখ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর ঘরছাড়া করে রাখা, গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করার বিষয়ে কোনো কথা না থাকা রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পারে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালে সংঘটিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের হয় তাহলে বর্তমান সরকারের শাসনামলে পিলখানার বিডিআর সদরদপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, হলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড এবং জঙ্গি হামলায় নিহত বিদেশি কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মকর্তা, বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ইমাম-মোয়াজ্জিন, যাজক, পুরোহিত, ব্লগারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের হত্যাকাণ্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের ওপরই বর্তায়। কিন্তু রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২১ আগস্টের নৃশংস ঘটনার সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন সরকারই মামলা দায়ের করেছে। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে; বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছে এবং সর্বোপরি এই মামলার মূল আসামি মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, তৎকালীন সরকার অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না। কাজেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় হামলা হয়েছে বলে আদালতের যে পর্যবেক্ষণ- তা যুক্তিগ্রাহ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, মুফতি হান্নানের বেআইনি ২য় জবানবন্দী বাদ দিলে তারেক রহমান এবং অন্য অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিকেই এই মামলায় অভিযুক্ত করা যেতো না। যৌক্তিক কারণেই এ কথা বলা যায় যে, প্রকাশ্য আদালতে মুফতি হান্নান যাতে তাকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দীতে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে- এটা বলতে না পারেন সেজন্যই অন্য একটি মামলায় দ্রুততার সাথে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির কোনো উল্লেখ না থাকাও বিস্ময়কর এবং সন্দেহমূলক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, দপ্তর সহ-সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
×