ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার লড়াইয়ে হেরে গেলেন অগ্রবাল

প্রকাশিত: ০০:৩২, ১২ অক্টোবর ২০১৮

গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার লড়াইয়ে হেরে গেলেন অগ্রবাল

অনলাইন ডেস্ক ॥ তাঁর মৃত্যুর পর শুক্রবার টুইটে গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেছেন, ‘‘গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্য জি ডি অগ্রবালজীর লড়াই ভোলা যাবে না। তাঁকে মানুষ মনে রাখবে।’’ অথচ, সেই গঙ্গাকে দূষণমূক্ত করার লক্ষ্যে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৬ বছর বয়সী পরিবেশবিদ অগ্রবালের লেখা তিন-তিনটি চিঠির জবাবই দেননি প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দু’টি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছিলেন অগ্রবাল। কোনওটারই জবাব না পেয়ে শেষ চিঠিতে আর ‘ভাই’ না লিখে শুধুই ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ লিখেছিলেন তিনি। টানা ১১১ দিনের (প্রায় চার মাস) আমরণ অনশনের পর বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরাখণ্ডের হৃষীকেশে ‘এইমস’-এর হাসপাতালে মৃত্যু হয় অগ্রবালের। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো তাঁর শেষ চিঠিতে (৫ অগস্ট, ২০১৮) অগ্রবাল লিখেছিলেন, ‘‘আমার অনুরোধগুলি সরকার না মানলে, আমি অনশন চালিয়ে যাব। আর তার জন্য মরতে হলে মরব।’’ না, এর পরেও ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি)-র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অগ্রবাল (হালে যিনি নাম নিয়েছিলেন স্বামী জ্ঞান স্বরূপ সানন্দ)-এর লেখা ওই লাইন পড়েও, তাঁর চিঠির জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী! গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার দাবি নিয়ে গত চার মাস ধরে হৃষীকেশের কনখলে অনশন করছিলেন। বুধবার রাতে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের পুলিশ তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় হৃষীকেশের এইমস হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার সেখানেই মারা যান পরিবেশবিদ জি ডি অগ্রবাল। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তাঁর প্রথম চিঠিটি অগ্রবাল পাঠিয়েছিলেন এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রায় চার মাস উত্তরের অপেক্ষায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় চিঠিটি অগ্রবাল লিখেছিলেন গত ১৩ জুন। না, তারও জবাব আসেনি। জবাব এল না দেখে গত ২২ জুন থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন পরিবেশবিদ জি ডি অগ্রবাল ওরফে স্বামী জ্ঞান স্বরূপ সানন্দ। তার পর প্রধানমন্ত্রীর উত্তরের অপেক্ষায় কাটান আরও দেড় মাস। না, তখনও জবাব আসেনি। উপায়ান্তর না দেখে অগ্রবাল ফের চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীকে। গত ৫ অগস্ট। তারও জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি প্রধানমন্ত্রী। অগ্রবালকে শুধু একটা চিঠি লিখেছিলেন মোদী সরকারের জলসম্পদ ও ‘গঙ্গা বাঁচাও’ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী নিতিন গডকড়ি। অগ্রবালকে অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দাবি না মানা হলে অগ্রবাল অনশন চালিয়ে যাবেন বলে অগ্রবাল আগেই ঘোষণা করেছিলেন। শেষমেশ পরশু, নিতিন জানান, ওঁর (অগ্রবাল) প্রায় সবকর্টি দাবিই সরকার মেনে নিয়েছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। গঙ্গা বাঁচানোর জন্য খসড়া আইনটি কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার ঠিক এক দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গঙ্গার গতিপথের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশ রক্ষার ন্যূনতম শর্তগুলি মেনে চলতে হবে। ব্যস, ওইটুকুই! তিনটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে কী কী করতে বলেছিলেন অগ্রবাল? গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্য গঙ্গা মহাসভার বানানো খসড়া বিলটিকে তড়িঘড়ি সংসদে আনতে বলেছিলেন অগ্রবাল। বলেছিলেন, বিলের প্রথম অধ্যায়ের প্রথম থেকে নবম অনুচ্ছেদ পর্যন্ত সুপারিশগুলিকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে কার্যকর করতে। অলকানন্দা, ধৌলিগঙ্গা, নন্দাকিনি, পিন্দার ও মন্দাকিনিতে নির্মিয়মান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেছিলেন। বন্ধ করতে বলেছিলেন গাঙ্গেয় অববাহিকায় প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি। বিশেষ করে হরিদ্বার-কুম্ভ ক্ষেত্র সহ গাঙ্গেয় অববাহিকার বেশ কয়েকটি জায়গায় খনন-কাজ বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিলেন অগ্রবাল। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×