ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাল্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের মামুনুর রশীদ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

  মাল্টা চাষে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের মামুনুর রশীদ

রসালো ফল মাল্টা এদেশে অপরিচিত নয়। তবে, এটি যে দেশী ফল নয় এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত। এ দেশে মাল্টার চাষ হতে পারে এমন ধারণাও আগে কেউ করেনি। নিজের জমিতে মাল্টা চাষ করে এ ধারণা পাল্টে দিয়েছেন রংপুর জেলার মিঠাপুকুরের মামুনুর রশীদ। মাল্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন বৃক্ষপ্রেমিক মামুনুর রশীদ। তার সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই এখন মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলে মাল্টার চাষ কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মাল্টা চাষের খবর ছড়িয়ে পড়ায় মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদিপুকুর মৌজার পারঘাট গ্রামে অবস্থিত মামনুরের বাগানে উৎসুক মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে। মাল্টা চাষী মামুনুর জানান, ২ বছর আগে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় দেড় একরের আয়তনের বাগানে ১১২টি মাল্টা গাছ রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানের এক-তৃতীয়াংশ গাছে মাল্টার আশানুরূপ ফলন ধরেছে। আশা করছেন অক্টোবর মাসের শেষে বাগানের উৎপাদিত মাল্টা বাজারজাত করার মাধ্যমে ভাল টাকা আয় করতে পাবরেন। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তার প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে বিভিন্ন সাথী ফসল আবাদ করে ব্যয় হওয়া টাকা তুলতে সক্ষম হয়েছেন।স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন ফলের বাগান করাসহ বৃক্ষরোপণ করা পছন্দ করতেন। এমনকি বিদ্যালয়ে টিফিন না খেয়ে ওই টাকা দিয়ে বিভিন্ন ফলের গাছ কিনে রোপণ করতেন তিনি। এই আকর্ষণ থেকে পরবর্তীতে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা করেও কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মাল্টা চাষের আগেও তার আমের বাগান উপজেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মামুনুর বলেন, ‘২০১৬ সালের ৬ জুন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বাগান করার প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হই। বাগানে বারি জাতের মাল্টা গাছ আছে ১১২টি। চারা রোপণের পর থেকে সময়মতো কীটনাশক প্রয়োগসহ আমি নিজে সবসময় বাগানে সময় দিতাম। কখনও নিজে সময় না পেলে শ্রমিক নিয়ে সাধ্যমতো যতœ নিতে ভুল করতাম না। ফলে এক বছরের মধ্যে অনেক গাছে ফুল আসে। কিন্তু গাছের ভবিষ্যত ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ফুলগুলো ছিঁড়ে ফেলি।’ বর্তমানে প্রায় ৪০টি গাছে ফলন এসেছে। অধিকাংশ মাল্টা আর্কষণীয় রাখতে এবং ক্ষতিকর পোকা থেকে দূরে রাখতে চাইনিজ ব্যাগিং দিয়ে ঢেকে রেখেছি। ২ বছরে বাগানে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা বিভিন্ন সাথী ফসল থেকে আয় হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, মাল্টার আবাদের পাশাপাশি ওই জমি থেকে ২বারে মরিচ চাষ করে আয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, আলু থেকে আয় হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা, পিঁয়াজ থেকে আয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা,করলা থেকে আয় হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা এবং লাউ গাছ থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে। লাউ থেকে আরও আয় আশা করেছেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি মাল্টার সায়ন (ডাল কলমের জন্য) বিক্রি করে প্রায় ৬ হাজার টাকা আয় করেছেন। দিন যত যাচ্ছে নার্সারি মালিকেরা সায়ন সংগ্রহের জন্য তার সঙ্গে দেখা করছেন। তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা প্রায় তার বাগানে আসেন সরেজমিনে মাল্টার চাষ দেখার জন্য। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন এবং হর্টিকালচার সেন্টারের সহায়তায় ২০১৬ সালের ৬ জুন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাল্টা ফলের বাগান হয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলায় বাগান আছে ৯টি। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন এলাকা, বদরগঞ্জ এবং গংগাচড়া উপজেলায় সীমিত আকারে মাল্টার আবাদ শুরু হয়েছে। রংপুর অঞ্চলের জমি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী বলে কৃষি বিভাগ প্রমাণ করেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. সরওয়ারুল আলম বলেন, মিশ্র বাগানের মাধ্যমে এবং শুধু মাল্টার বাগান করার জন্য কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মাল্টা চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা মাল্টা বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। -আব্দুর রউফ সরকার, রংপুর থেকে
×