ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাপ্রধান সম্পর্কে ডাঃ জাফরুল্লাহর মিথ্যাচার

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৩ অক্টোবর ২০১৮

  সেনাপ্রধান সম্পর্কে ডাঃ জাফরুল্লাহর মিথ্যাচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের পরদিন টিভি টকশোতে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে স্মরণকালের ভয়াবহ আজগুবি মিথ্যা তথ্য হাজির করেছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সময় টেলিভিশনের টকশোতে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেয়া মিথ্যা বক্তব্য ঘিরে সারাদেশে তোলাপাড় চলছে। সেনাসদর দফতর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের মধ্যে এমন বক্তব্যের জেরে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। খোদ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে এমন বক্তব্যে রীতিমতো বিস্ময় ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ৯ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত দশটায় বেসরকারী নিউজ চ্যানেল সময় টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ শিরোনামের টকশোতে পেশাগত জীবনে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী ও চৌকস সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে মিথ্যাচার করে আবারও নতুন বির্তকে জড়িয়ে পড়েন ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। টকশোতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্মরণকালের সবচেয়ে আজগুবি তথ্য হাজির করেন। টকশোতে আর্জেস গ্রেনেড প্রসঙ্গে কথা উঠলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের জিওসি বা কমাড্যান্ট ছিলেন। সে সময় চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ব্যাপক সংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাবারুদ চুরি বা হারিয়ে বা বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আজিজ আহমেদের কোর্ট মার্শালও হয়েছিল। এমন বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনাসদর। প্রতিবাদে বলা হয়েছে, টকশোতে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মন্তব্য ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমাড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। তিনি সেপ্টেম্বর ২০১০ থেকে জুন ২০১১ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। জুন ২০১১ থেকে মে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরে ৬ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার এবং মে ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১২ পর্যন্ত কুমিল্লায় ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। টকশোতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে সময়ের কথা বলেছেন, সেই বর্ণিত সময়ে চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোন সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি। প্রতিবাদে আরও বলা হয়েছে, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওই বক্তব্য সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়। শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বরাত দিয়ে বিডিনিউজ তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে বলেছে, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ভুল ছিল। অস্ত্রগোলাবারুদ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় কোর্ট মার্শাল না হয়ে কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল। সেনাসদরের প্রতিবাদের পর সময় টিভি প্রতিবাদলিপিতে দুঃখ প্রকাশ করে। টেলিভিশনের তরফ থেকে বলা হয়, তাদের ওই আলোচনা অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বলে কোন আলোচক ভুল কিছু বললেও তা এড়ানোর সুযোগ ছিল না। টেলিভিশনের আলোচনায় যারা অংশ নেন, বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের আরও দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ জানানো হয় সময় টিভির পক্ষ থেকে। এ ঘটনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ একদিনে তৈরি হননি। যোগ্যতা, মেধা-শ্রম-ঘামে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ইউনিটে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই সার্বিক দিক বিচার বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে যোগ্য হিসেবেই তাকে সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। সেনাপ্রধান সম্পর্কে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেয়া বক্তব্য বিশেষ কোন উদ্দেশে দেয়া। এমন বক্তব্য সেনাবাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সংহতি ও একতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারলেও কোন কোন মানুষের মধ্যে হয়তো কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা মনে করেন, রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের পর বিডিআর শৃঙ্খলাহীন হয়ে পড়লে বাহিনীর পুনর্গঠন জরুরী হয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুনাম ফিরিয়ে এনে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে জেনারেল আজিজ আহমেদের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। বিজিবির প্রতিটি সদস্যের কাছে এখনও তিনি খুবই জনপ্রিয়। সূত্র বলছে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সময়ের পালাবদলে তিনিও নিজেকে বদলে ফেলেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালের আগস্টে খালেদা জিয়ার সাড়ে ৩ হাজার শব্দের চিঠি লিখে প্রথম বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ডাঃ জাফরুল্লাহ। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পলিসিমেকার’ এবং বিএনপির প্রভাবশালী ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ হিসেবেও আলোচিত তিনি।
×