ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেধাবী প্রজন্ম সমৃদ্ধ অর্থনীতির সহায়ক

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

মেধাবী প্রজন্ম সমৃদ্ধ অর্থনীতির সহায়ক

মেধাবী ভবিষ্যত প্রজন্ম গঠনে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে এই পোল্ট্রি শিল্প। এ খাত সংশ্লিষ্টদের নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকার ফলে দেশ এখন মুরগির ডিম ও মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এমনকি দেশের ডিম ও মাংসের শতভাগ চাহিদাপূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে রফতানির সম্ভাবনাও। জানা গেছে, ২০০৫ সালের আগে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ডিম বিদেশে রফতানি হতো। কিন্তু ২০০৭ ও ২০০৯ সালে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ায় পোলট্রি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসে। বার্ড ফ্লু আঘাত হানায় ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এ্যানিমেল হেলথের (ওআইই) শর্তের কারণে পোল্ট্রির রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ধকল কাটিয়ে আবারও বাংলাদেশ থেকে ডিম রফতানির স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিম উৎপাদন হয় কম-বেশি ৩ কোটি ৮০ লাখ। আমরা যদি গড়ে ৭ টাকা করে একটি ডিমের দাম ধরি তাহলে ডিমকে কেন্দ্র করে দৈনিক ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং মাসে ৮০৯ কোটি এবং বছরে ৯ হাজার ৭০৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়। পোল্ট্রি এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামারে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ। আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। এখন বাংলাদেশে ৭টি গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফার্ম আছে। প্যারেন্টস্টক বা পিএস ফার্মের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হতো প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। বছরে উৎপাদন ছিল প্রায় ৬৩৯ কোটি। মাথাপিছু খাওয়া হতো প্রায় ৪১টি। ২০১৫ সালে ডিম দিনে উৎপাদন হতো প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ। বছরে উৎপাদন ছিল প্রায় ৭১২ কোটি। মাথাপিছু খাওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫টি। ২০১৬ সালে দিনে উৎপাদন হয় প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৮২১ কোটি। বর্তমানে মাথাপিছু খাওয়া হয় প্রায় ৫১টি। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দৈনিক উৎপাদন হবে প্রায় ৪ কোটি ৫ লাখ ডিম। আর তখন মাথাপিছু কনজাম্পশন প্রায় ৮৬টিতে। বিপিআইসিসি সূত্রে জানা গেছে, আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। এখন বাংলাদেশে গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফার্ম আছে। প্যারেন্টস্টক বা পিএস ফার্মের সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। আশার খবর হচ্ছে এখন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আধুনিক হ্যাচারিগুলোতে যান্ত্রিক উপায়ে সপ্তাহে এক কোটি ১০ লাখেরও বেশি ডিম ফোটানো হয়। মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। খাবার ও পানি সরবরাহ, ডিম সংগ্রহ সবকিছু স্বয়ংক্রিয় উপায়ে করা হয়। ফলে ভোক্তারা সহজেই স্বাস্থ্যকর-জীবাণুমুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস পাচ্ছেন। পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে ছয়টি পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৮০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। গত তিন দশকে তা দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প খাতে রূপ নিয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, সুস্থ থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বছরে ডিম খায় গড়ে মাত্র ৪৫-৫০টি। তবে আশার খবর হলো ডিম শুধু পুষ্টি উপাদেয় খাবার হিসেবে অসুখ অসুস্থতায় অথবা অতিথি আপ্যায়নে নয়- প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিমের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়েছে। পিতা-মাতারা সন্তানদের সুস্বাস্থ্য ও মেধাবিকাশের জন্য ডিম দিচ্ছেন নিত্যদিন। নিজেদের সুস্থতায় সকালের নাস্তায় ডিম খাচ্ছেন অনেকে। ডিনারে বা লাঞ্চেও ডিমের মুখরোচক রন্ধনশৈলী জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বয়স্ক ও সন্তানসম্ভবা মায়েদেরও ডিম খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এভাবে দেশের মানুষের মাঝে ডিম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সন্তানের স্কুল টিফিনে ডিম দিয়ে তৈরি রকমারি নাস্তা প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে সরকারের স্কুল ফিডিংয়ে ডিম অন্তর্ভুক্ত করলে ডিমের ব্যবহার ও চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ করতে পারে।
×