ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ

তামাশার রাজনীতি ও কামাল হোসেন

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

 তামাশার রাজনীতি ও কামাল হোসেন

অজয় দাশগুপ্ত ॥ ড. কামাল হোসেন ও ডাঃ বি চৌধুরী আর মিলতে পারলেন না। মিলনের ভান করলেও শেষ অবধি তাদের বিচ্ছেদই হলো। এ কারণেই বলা হয় বংশ অতীত আর বর্তমান মিলিয়ে সম্পর্ক ঠিক করতে হয়। বি চৌধুরী সাহেব হয়ত ভুলে গিয়েছিলেন যে যারা নব্য খ্রিস্টান তারা পোপের চেয়েও নিজেকে বড় খ্রিস্টান মনে করেন। ড. কামাল সম্প্রতি আসল চেহারায় বেরিয়ে আসলেন। ফলে তাঁর দালালি আর বিশ্বাসঘাতকতার চমকটা বেশি হবে। বিএনপি হাঁটু ভাঙা দলে পরিণত হয়েছে বলে তাঁর কাঁধে ভর রেখেই উঠে দাঁড়াতে চাইবে। সেখানে বি চৌধুরী তাদের বাতিল মাল। পুরনো নেতা পুরনো ধাওয়া-খাওয়া রাষ্ট্রপতি। সে জায়গায় আগ্রহ কম হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না? শুরুতে আমরা জাতির কাছে নতুন কিছু করে দেখানোর জন্য মরিয়া এসব নেতা ও তাদের কর্মকান্ড একটু বুঝে নেই। বেশি দিনের না কালকের ঘটনাই দেখুন একবার- দিনভর টানাপড়েনের পর যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে, যিনি গত কয়েক মাস ধরে কামালের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর বিকেলে ড. কামালের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে বি চৌধুরীর বাড়িতে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্টের জন্য গণফোরাম সভাপতিকেই দায়ী করা হয়। বি চৌধুরীসহ বিকল্প ধারার নেতারা যখন বেইলি রোডে ড. কামালের বাড়ির ফটকে ছিলেন, তখন মতিঝিলে নিজের পেশাগত চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে বৈঠকে ছিলেন কামাল। বাড়ির ফটকে থেকে ফেরার সময় বিকল্পধারার মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।’ জাতীয় প্রেসক্লাবে কামাল, মান্না, রবদের সংবাদ সম্মেলনের আধা ঘণ্টার মধ্যে বি চৌধুরীর বাড়িতে আরেক সংবাদ সম্মেলনে মাহী বলেন, ঐক্যের জন্য তারা অনেক ছাড় দিলেও বার বার বাধা পেয়েছেন। ঐক্য গঠনের প্রতিটি পদে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মাহী। গত বছরের এপ্রিল মাসে বি চৌধুরীর বিকল্পধারা, রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। বি চৌধুরী হন জোটের চেয়ারম্যান, মান্না হন সদস্যসচিব। শুরুতে আবদুল কাদের সিদ্দিকী এই জোটে থাকলেও পরে সরে যান। ওই যে রাষ্ট্রপতি কথাটা সেখানেই যত গ্যান্জাম। একটাই পদ। সে মুলা ঝুলিয়ে বিচারপতি এস কে সিনহাকে বশে আনার পর বেচারা দেশ ছেড়ে আমেরিকা গিয়ে আশ্রয় চাইতে চাইতে মুখে ফেনা উঠছে তার। বি চৌধুরীকে এই মুলা ঝুলালেও তিনি এর স্বাদ-বিস্বাদ দুই-ই জানেন। তাঁকে মুলা গেলানো একটু কঠিন বৈকি। তিনি নিশ্চয়ই রেললাইন ধরে পালিয়ে যাবার ঘটনা ভোলেননি। তাঁকে নতুন করে তারেক বা খালেদা জিয়াকে চেনানোরও দরকার নেই। এদিক থেকে ড. কামাল তলে তলে যাই করুক প্রকাশ্যে তিনি এখন বিএনপির নতুন পার্টনার। এই নতুন পার্টনারের জন্য আবেগ দরদ আর রাষ্ট্রপতির মুলাটার রং একটু অধিক বৈকি। আর একটা কারণও অস্বীকার করা যাবে না। এক চেয়ারে দুজন বসার যখন জায়গা নেই তারা একে অন্যকে ল্যাং মারবেন এটাই নিয়ম। সে নিয়মে বি চৌধুরী ল্যাং খেয়ে এই জোট জোট খেলায় আপাতত পিছু হটলেন কি-না সেটা বুঝতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে আমাদের। যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত এই জোটের ভবিষ্যত ভাল কিছু না। বিএনপিকে বৈতরণী পার করানো আর ব্যক্তিগত রাগ আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য যারা এখানে নাম লিখিয়ে নেতা হয়েছেন তাদের জনগণ খুব ভাল চেনে। আ স ম রব. মান্না বা ড. কামাল কেউই মূলত বিশ্বস্ত নন। আমি এক শ’ পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি এরপর যিনি বের হবেন তার নাম আ স ম রব। এবং সে নিষ্ক্রমণ হবে সাংঘাতিক। নেতা থেকে দালালি, দালালি থকে মন্ত্রী, মন্ত্রী থেকে রাগী এক হতাশ মানুষে পরিণত এই ভদ্রলোক যেদিন বেরুবেন সেদিনই শুনবেন নানা গুজব আর গল্প। একটু সবুরের দরকার এই যা। মান্না মিয়া তো অলরেডি আর একবার অডিও টেপ বন্দী। ফলে এই জোটের ভবিষ্যত কি তা বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। একটা বিষয় বলতে চাই, আমাদের ইতিহাসের এই কলঙ্ক বা দুঃসময় কি কোনদিন শেষ হবে না? খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া অন্যায়ের বলছি না। কিন্তু তাঁর মুক্তি চাইতে গিয়ে তাঁর দলের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগার থেকে একসঙ্গে ফিরে আসা মানুষটি যা করছেন তার নাম বিশ্বাসঘাতকতা। ড. কামাল আমাদের যৌবনে জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে নেতা হতে চেয়েছিলেন। আমরা দেখেছি তাঁকে সামনে রেখে গণঐক্যজোট করে সামরিক শাসনের আন্দোলনে তিনি কিভাবে লেজ তুলে পালাতেন। তখনও তাঁকে রাষ্ট্রপতি বানানোর চিন্তা করা হয়েছিল অথচ ঢাকার লোকাল মাস্তান প্রয়াত আবুল হাসনাতের ধমকেই তিনি চলে গিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে। রহস্যময় ড. কামাল হোসেন মাঝখানে বাম নেতাদের নেতা হয়েছিলেন। লজ্জা আর কাকে বলে। বামাতী নামে পরিচিত এরা নাকি ত্যাগী। এরা সবাই মিলে গণফোরাম নামের যে গণফোঁড়া তৈরি করে তাঁকে নেতা বানিয়েছিলেন তারা আজ কি বলবেন? ভেবে খারাপ লাগছে অচিরেই ড. কামাল হোসেন বলবেন মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আর তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছিল বিএনপি। পাকি বিএনপি জামায়াতি আর বিদেশী লবিং আমাদের আর কত বায়স্কোপ দেখাবে কে জানে। এটা নিশ্চিত করে বলি এই জোট টিকুক আর না টিকুক ভাল হোক আর মন্দ হোক ড. কামাল হোসেনের বারোটা বেজে গেছে। একটু চোখ মেলে তাকালেই বুঝতে পারতেন কাদের সিদ্দিকী কিংবা বি চৌধুরী কেউ দায় নেয়নি। যে মোহে যে উস্কানিতে তিনি এই কাজ করলেন তার পরিণাম একটাই, আঁস্তাকুড়ে নিপতিত হয়। হায় হোসেন। হায় হোসেন। কামাল সাহেব ইতিহাস আপনাকে মার্জনা করবে না জনাব। শতকরা আশি ভাগ মানুষ কাঁঠাল পাতা চিবায় না। তারা দেখেন আর মুখ লুকিয়ে হাসেন। বাংলাদেশ এখন যে জায়গায় সেখান থেকে তাকে সামনে নিয়ে যেতে হলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। তাঁরা এও বোঝে নেত্রী আসলে মানুষ চেনেন। সেই কবে তিনি ড. কামাল হোসেনকে চিনে নিয়েছিলেন। আজ যার স্বরূপ প্রকাশিত। এই জোটের কি হবে সেটা বোঝার জন্য কোন গণকের কাছে যাবার প্রয়োজন নেই। ভরাডুবির হাত থেকে বিএনপিকে বাঁচানোর পরিবর্তে এরাই নিয়ে যাবে অতলে। নয় নয় করেও তাদের জনসমর্থন আর তাদের জন্য মানুষের যে টুকু ভাললাগা সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসা ড. কামাল হোসেনের মতো নেতারা কি করবেন সবাই বোঝেন। বোঝে না রাজনীতি। সমানের নির্বাচনে তাই একটাই এজেন্ডা, মানুষ কি এই দেশ ও জাতিকে স্বার্থপর কিছু নেতা নামধারী মানুষের হাতে ছেড়ে দেবে, না তারা আরও একবার উন্নয়নের ধারায় নৌকাকে এগিয়ে দেবে নতুন কোন বন্দরে। শেখ হাসিনা আগেই বলেছিলেন এসব জোটের পেছনে আছে মদদ আর বিশ্বাসঘাতকতা। সেটাই আবার প্রমাণিত হলো মাত্র। এই জোটের এখনই যা হাল কিছুদিনের ভেতরই ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলে পালাবেন তারা। সেটা দেখার দিন খুব বেশি দূরে বলে মনে হচ্ছে না।
×