ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পদ্মায় ইলিশ শিকার

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

মাদারীপুরে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পদ্মায় ইলিশ শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রতিদিন রাতে ও দিনে-দুপুরে পদ্মায় ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। এ সব ইলিশ পানির দামে বিক্রি হচ্ছে নদীর পাড়ে ও স্থানীয় হাট-বাজারে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নির্বিঘ্নে যাতে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে, সেজন্য ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও থেমে নেই ইলিশ শিকার। দেদারছে ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। একাধিক সুত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর অংশে পদ্মাচরের দুর্গম এলাকা সংলগ্ন পদ্মা নদীতে অনেকটা গোপনেই জেলেরা ব্যস্ত থাকে ইলিশ শিকারে। আবার প্রকাশ্য বাজারে বিক্রি করতে না পারায় খুবই সস্তায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে নদীর পারে বসে। স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের বাজার দাম কেজিতে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা; সেই ইলিশ এখন বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন‘শ টাকা দরে। এতো সস্তায় ইলিশ পেয়ে স্থানীয় দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভিড় করছে পদ্মার পাড়ে। ক্রেতারা ব্যাগ বোঝাই করে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালানো হয় । তবে দুর্গম অঞ্চল প্রায় সময়ই অভিযানের বাইরে থেকে যায়। জেলেরা কৌশলে গভীর রাতে ও খুব ভোরে পদ্মার বিভিন্ন এলাকায় ইলিশ শিকার করে থাকে। তারা ইলিশের জাল নদীতে ফেলে কৌশলে জাল নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পানিতে লুকিয়ে রেখে মাছ শিকার করে। শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও বন্দরখোলা এলাকার চর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করছে। চরাঞ্চলের এই পদ্মার পাড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি হয় এই ইলিশ। চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও বন্দরখোলা ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই ব্যাগ হাতে পদ্মার পাড়ে নারী-পুরুষের ভিড়। রয়েছে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও। ইলিশ কিনতে আসা কিশোর রবিউল জানায়, ‘খুব ভোরে পদ্মা পাড়ে সস্তায় ইলিশ পাওয়া যায়। এই খবর শুনে অনেক দূর থেকে মাছ কিনতে এসেছি। দিনমজুর বাবার পক্ষে অন্যান্য সময়ে বেশি দাম দিয়ে ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না। তাই সস্তায় একটু বড় ইলিশ কিনতে কষ্ট করে এই দুর্গম চরে এসেছি।’ সালমা বেগম উপজেলার কাছাকাছি এলাকায় তার বাড়ি। মানুষের মুখে শুনে তিনি এসেছেন মাছ কিনতে। সঙ্গে একটি চটের ব্যাগ। অনেক কম দামে প্রায় ১০ কেজি ইলিশ কিনেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মাছ ধরা এখন নিষেধ। কিন্তু জেলেরা তো থেমে নেই। আর দাম কম পেয়ে শত শত মানুষ মাছ কিনছে। মাছ না ধরলে তো কিনতে আসতাম না। তাছাড়া আমি না কিনলেও তো বিক্রি থেমে থাকছে না।’ ব্যাগ ভরে ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এক ক্রেতা। পদ্মায় মাছ শিকার করা জেলেরা বেশির ভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল, নৌকা কিনে পদ্মায় মাছ ধরেন তারা। ফলে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতেই হচ্ছে। তাছাড়া সংসারের খরচ তো আর থেমে নেই। অপর এক জেলে বলেন, ‘আমি প্রথম দিকে এ সময় মাছ ধরতে যেতাম না। গত বছরও ধরিনি। কিন্তু অন্যরা তো ঠিকই ধরেছে। তারা মাছ বিক্রি করে টাকাও কামাচ্ছে। তাই এবার আমিও মাছ ধরতে নেমেছি। তবে দিনে একবারই পদ্মায় জাল ফেলি। তবে সতর্ক থাকতে হয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার।’ ’শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম শামসুজ্জামান (দায়িত্ব প্রাপ্ত) বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে। দিনের পুরোটা সময়ই আমরা পদ্মায় নজর রাখছি। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করতে চেষ্টা করছি। তারপরও সাধারণ মানুষের ভিড় পদ্মার পাড়ে লেগেই থাকে। মাছ ধরা বন্ধের প্রথম দিন থেকেই আমরা অভিযান চালিয়ে আসছি। জেলেদের আটক, মাছ জব্দ এবং জাল ধ্বংস কার্যক্রম চলছে।’
×