ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরে নিকাহ রেজিষ্টারদের মাধ্যমে চলছে বাল্য বিয়ে

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

মাদারীপুরে নিকাহ রেজিষ্টারদের মাধ্যমে চলছে বাল্য বিয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে জেলার রাজৈরে নিকাহ রেজিষ্টাররা বাল্য বিয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজৈর পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টাররা গোপনে এসব কাজ করে থাকেন। বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়ে এক নিকাহ রেজিষ্টারের সহকারি আলী আহম্মেদ হাতে নাতে ধরা পড়েন। এ ছাড়াও নিকাহ রেজিষ্টার নিয়োগেও রয়েছে নানা অনিয়ম। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরের লোকও এ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। অনেকে নিজের এলাকার বাইরে থেকে অফিস খুলে বসেছেন। রবিবার রাতে উপজেলার টেকেরহাট বন্দর সংলগ্ন ঘোষালকান্দি গ্রামে বাল্য বিয়ের কাবিন করাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আলী আহম্মদ নামে এক ব্যক্তি। পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় আটক আলী আহম্মদ। আলী আহম্মদ রাজৈর পৌরসভার নিকাহ রেজিষ্টার আবদুস সোবাহানের সহকারি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে রেজিষ্ট্রশনের কাজ চালিয়ে আসছেন। সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের এক চিঠির মাধ্যমে জানা গেছে, ‘সহকারী দিয়ে বিয়ে নিবন্ধন বন্ধ এবং বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১৯ ধারা অনুযায়ী সম্পাদিত বিবাহ ব্যতীত অন্য কোন বিবাহের সময় পাত্রের বয়স ২১ ও পাত্রীর বয়স ১৮ হতে হবে।’ কিন্তু এসব আইনকে উপেক্ষা করে কিছু কিছু নিকাহ রেজিষ্টার অতি লোভের প্রলোভনে পড়ে নিজে বা সহকারি দিয়ে বাল্য বিবাহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনই আরো একটি বাল্য বিবাহের কাবিনের নকল থেকে জানা গেল, আবদুস সোবহান রাজৈর পৌর এলাকার নিকাহ রেজিষ্টার হয়েও তার সহকারি জাহাঙ্গীর মিয়ার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলার গোহালা ইউনিয়নে বাল্য বিবাহের কাবিন করিয়েছেন। গত জুলাই মাসে হওয়া এ বাল্য বিবাহের সময় পাত্র জাকারিয়া শেখের জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ০১/০৪/১৯৯৭ইং। কিন্তু জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী জাকারিয়ার জন্ম তারিখ ০১/০১/২০০০ইং। পাত্রীর বয়স দেখানো হয়েছে ০১/০৪/২০০০ইং। এছাড়াও অধিকাংশ রেজিষ্টার স্বাক্ষর করা বই চড়া দামে সহকারিদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। ফলে সহকারিরা নিজেদের ইচ্ছামত বিবাহের রেজিষ্ট্রেশনের কাজ চালিয়ে থাকেন। নিকাহ রেজিষ্টার আবদুস সোবাহান বলেন, ‘উল্লেখিত বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি আমার সহকারিকে এমন বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করতে নিষেধ করেছি।’ রাজৈর উপজেলা নিকাহ রেজিষ্টার সমিতির সেক্রেটারী এমদাদুল হক বলেন, ‘সরকারী আইন সবার মানা উচিত। কেউ বাল্য বিয়ে করালে তার শাস্তি হওয়া উচিত।’ রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত নিকাহ রেজিষ্টারের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ আইন মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে।’
×