ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আহত ১৮

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

গাজীপুরে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, আহত ১৮

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সোমবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ও দরজা-জানালার কাঁচসহ কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েকদফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ৩১ রাউন্ড সর্টগানের গুলি ও ২২ রাউন্ড টিয়ার সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় পুলিশের এসআইসহ অন্ততঃ ১৮ জন আহত হয়েছে। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. আমজাদ হোসেন, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের লক্ষীপুরা এলাকার ইন্ট্রামেক্স নামের পোশাক কারখানায় কর্মরত স্টাফদের পাঁচ মাসের এবং শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ওই পাওনা পরিশোধের একাধিক তারিখ দিলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন রবিবার (১৪ অক্টোবর) পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এদিন তা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রবিবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। ওইদিন তারা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ও দরজা-জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার জের ধরে শ্রমিকরা দ্বিতীয়দিনের মতো সোমবার সকালে কারখানায় গিয়ে তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করতে থাকে। তাদের সঙ্গে কারখানার কর্মচারীরাও যোগ দেয়। এসময় তারা কারখানায় ভাংচুর করে। পরে বিকেল তিনটার দিকে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানায় আসেন। এসময় পুলিশের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনাদি আগামী ২৪ অক্টোবর পরিশোধের ঘোষণা দেন। কিন্তু আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারীরা ওই ঘোষণা প্রত্যাখাণ করে সোমবারের মধ্যে পরিশোধের দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরতরা পুলিশ ও কারখানার মালিকের ওপর চড়াও হয়। এসময় আন্দেলনরতদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে ও পুনঃরায় কারখানা ভাংচুর করতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনরতরা কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর সড়কে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরতদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর সড়কে চলাচলরত কয়েকটি গাড়ির কাঁচও ভাংচুর করেছে। একপর্যায়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ বিকেলে সর্টগানের ৩১ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার সেল ২২ রাউন্ড ছুড়ে আন্দোলনরতদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জিএমপি’র গাজীপুর সদর থানার এসআই বশির আহমেদসহ অন্ততঃ ১৮ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গাজীপুর সদর থানার এসআই বশির আহমেদ ও কারখনার কোয়ালিটি কন্ট্রোলার আব্দুল আলিম এবং লাঠিপেটায় আহত কারখানার প্যাকিংম্যান মারফত আলী (২৫), আয়রনম্যান মোবারক হোসেন (৩০) শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মকবুল হোসেন জানান, গাজীপুর শিল্প পুলিশ সর্টগানের ৩১ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার সেল ২২ রাউন্ড ছুড়ে ওই কারখানার উত্তেজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কারখানার কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর মো. আমান উল্লাহ ও শ্রমিক শহিদুল ইসলাম জানান, কারখানার স্টাফদের যাদের বেতন ১৫-২৫হাজার টাকা তাদের পাঁচ মাস, যাদের বেতন ২৫-৪০হাজার তাদের বেতন ৬মাস এবং যাদের বেতন তারও উপরে তাদের সাত মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকদের পাওনাদি পূর্ব নির্ধারিত গত ১০ তারিখে পরিশোধের কথা থাকলেও পরিশোধ করেনি। পরবর্তীতে কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও তা পরিশোধ করেনি। এতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার স্টাফরাও (কর্মচারী) একাত্মতা প্রকাশ করেছে আন্দোলনে যোগ দেয়।
×