ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম নগরীর চার আসনে প্রচারে এগিয়ে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

চট্টগ্রাম নগরীর চার আসনে প্রচারে এগিয়ে আওয়ামী লীগ

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন ততই সরগরম হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্নভাবে ইতোপূর্বে প্রচার চালিয়ে এখন রীতিমত মাঠে নেমে পড়েছে। তবে প্রচার দৌড়ে অন্যান্য দলের চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এগিয়ে। অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির পক্ষে প্রার্থীদের তৎপরতাও লক্ষণীয়। অবশ্য তাদের জোটগত বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। উল্লেখ্য চট্টগ্রাম ও জেলা মিলে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক জেলা তিনটি। অর্থাৎ মহানগরী , উত্তর ও দক্ষিণ। মহানগরীতে আসন সংখ্যা চার। এরমধ্যে তিন উপজেলার কিছু অংশ মহানগরীর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। গত নির্বাচনে মহানগরীর কিছু অংশ সীতাকু-ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। মহানগরীর এই চার আসনে প্রতিটি দলে মনোনয়ন প্রত্যাশী বহু। তবে বর্তমানে সরকারী দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে গত নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারাও পুনরায় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে একঝাঁক নতুন মুখ মনোনয়ন পেতে উদগ্রীব। এরা বিভিন্নভাবে লবিং এবং এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত হলফ করে বলা যাচ্ছে না কোন আসনে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। এ ঘটনা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ছোটখাট প্রতিটি দলে কাজ করছে। দশম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ১২ প্রার্থী আওয়ামী লীগে এবং অপর চারজনের মধ্যে ২ প্রার্থী জাতীয় পার্টি, ১ জাসদ এবং ১ তরিকত ফেডারেশন থেকে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল বেশ কঠিন বলেই প্রতীয়মান। কেননা, ইতোমধ্যে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এক হয়ে জোট করার প্রক্রিয়া সমাপ্তির পথে। আবার শুরুতেই এ ধরনের জোট গঠন নিয়ে বিরোধও সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিরোধীদলগুলোর অবস্থান কি হতে যাচ্ছে তা এখনও অস্পষ্ট। ফলে সেসব দলের প্রার্থীদের প্রার্থিতা এখনও সুনিশ্চিত নয়। তাই অপেক্ষাকৃতভাবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নড়াচড়া এখন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলে চিত্র হবে এক আর অন্যান্যদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে গেলে চিত্র হবে ভিন্ন। তবে যেহেতু জামায়াত নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচন করার কোন সুযোগ পাচ্ছে না সেক্ষেত্রে তারা বিএনপি সমর্থিতদের সঙ্গে থেকে নির্বাচনী প্রচার যে সচেষ্ট থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে মহানগরীর চারটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য হলেন জাসদের মাঈন উদ্দিন খান বাদল। এছাড়া চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু। চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে আওয়ামী লীগের ডাঃ আফসারুল আমিন, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ রয়েছেন। বর্তমান এসব সংসদ সদস্য সকলেই পুনরায় নির্বাচনে মনোনয়ন লাভে ব্যাপক আগ্রহী। এর পাশাপাশি একক বা জোটগত যেভাবেই হোক নতুন মুখরাও মাঠে নেমে গেছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন। হাইকমান্ডের কাছে লবিং করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়নের টিকেট কে বা কার ভাগ্যে জুটবে তা নিজেরাও নিশ্চিত নন। এমনিতর পরিবেশে চট্টগ্রাম মহানগরীর চারটি আসন ও এর বাইরে জেলার ১২টি আসনে অনুরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিটি সংসদীয় আসন এলাকায় মুখ্য আলোচনার বিষয় আগামী সংসদ নির্বাচন। কারও মতে প্রার্থী পরিবর্তনের কথা আসছে। আবার কারও কার মতে আগের প্রার্থীদের পুনঃমনোনয়ন প্রদানের দাবি আসছে। সব মিলিয়ে সরব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মনোনয়ন লাভে আগ্রহী নতুন মুখরা পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে উল্লাসমুখর করে রেখেছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবারও প্রার্থিতা কেমন হবে তা নির্ভর করছে জোট মহাজোটের ওপর। তবে দলীয়ভাবে নির্বাচনী প্রচার এরমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এলাকায় উন্নয়ন কর্মকা- পরিদর্শনের পাশাপাশি ভোট চাইছেন। চট্টগ্রাম-৮ আসনে মনোনয়ন পেতে চান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনিও কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সভা সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনুরূপভাবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামও এ আসনে মনোনয়ন লাভে আগ্রহী। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম-৯ আসনের জন্যও তার প্রচেষ্টা রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে তার নাম ঘোষিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতায় আসনটি জাপা নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয়। কোতোয়ালী আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীপুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর নামও আলোচিত হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি এবার নির্বাচনে খুব বেশি আগ্রহী নন। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এছাড়া বর্তমান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসপি এ আসন থেকেই ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১০ম সংসদ নির্বাচনে জোটগত সমঝোতার কারণে তিনি বাদ পড়েন। এবারও তার আগ্রহ রয়েছে বলে আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১০ আসনের বর্তমান এমপি ডাঃ আফসারুল আমিন। এবারও তিনি জোরালো প্রার্থী। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এম মঞ্জুর আলমের আগ্রহ রয়েছে এ আসনে। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায় এবং পাশাপাশি আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার নামটি আলোচনায় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ আসনে মঞ্জুর আলমের চমক আসলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। চট্টগ্রাম-১১ আসনে বর্তমান এমপি এমএ লতিফ পুনঃ প্রার্থিতার জন্য ব্যাপকভাবে তৎপর। তবে নিজ দলের পক্ষে এ আসনে অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। নবম সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর বাদ পড়ে যান। এবার তিনি আটঘাঁট বেধে নেমেছেন মনোনয়ন লাভের জন্য। তবে অন্তরায় হচ্ছে তার নিজ বাড়ি এই আসনে নয়। তবে তিনি ওই আসনে মনোনয়ন লাভে আগ্রহী। এসব আসনে বিএনপির বহু প্রার্থীর নাম আলোচিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে ৯ম সংসদ নির্বাচনে এরশাদ উল্লাহ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানের অনুপস্থিতিতে। এবার কেন্দ্রীয় এ নেতা আবার ফিরেছেন এবং সক্রিয় হয়েছেন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন শিল্পপতি শামসুল আলম। ঋণ খেলাপীসহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে তিনি বিএনপি রাজনীতিতে অনেকটা নিস্ক্রিয়। এবার এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান দলের নগর শাখার সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এবার এ আসনে তাকেই দলের একক প্রার্থী হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ৯ম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে নির্বাচন করে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় এ আসনে অন্য কোন নেতা মনোনয়ন লাভের আশাও করছেন না। ফলে তাকেই এ আসনে একক প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×