ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পূজার ঢাকে পড়ল কাঠি... মহাসপ্তমী ও কুমারী পূজা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

পূজার ঢাকে পড়ল কাঠি... মহাসপ্তমী ও কুমারী পূজা আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পূজার ঢাকে পড়ল কাঠি। দিকে দিকে এখন দেবীর বন্দনা। দেবী দুর্গার আগমনে চারদিকে চলছে আনন্দ আয়োজন। ম-পে ম-পে এখন আনন্দময়ীর আগমনী স্তুতি। থিমের অভিনবত্ব থেকে রকমারি আলোর সাজÑ গোটা দেশ এখন বারোয়ারি শারদোৎসবে মাতোয়ারা। তবে নিয়ম-নিষ্ঠার ফাঁকি নেই এতটুকু। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের অগ্রভাগে সোমবার ষষ্ঠী পূজা এবং সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস বেশ ভালই কেটেছে। ঘট পূজা শেষে আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমীতে শুরু হবে মূর্তি পূজা। চক্ষুদান করা হবে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার। খুলে যাবে দশপ্রহরণধারিণী ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক। আর এই ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সোমবার থেকে সূচিত হয়েছে পাঁচ দিনের শারদোৎসব, দুর্গা পূজা। খ—গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশূল হস্তে শক্তিরূপেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে ম-পে ম-পে ঠাঁই নিয়েছেন। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ ও উলুধ্বনি আর ভক্তকুলের আবাহনের মন্ত্রোচ্চারণে দেবী দুর্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমন ঘটেছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, মন্দিরে মন্দিরে ধূপ-ধুনোয় ভক্তদের নৃত্য আরতি, আর ঢাক-ঢোল, কাঁসর-মন্দিরার পাশাপাশি মাইকের আওয়াজে এখন মাতোয়ারা সারাদেশের সকল পূজাম-প। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত এখন চারদিক। ভক্তদের পূজা গ্রহণের জন্য দুর্গা দেবীর মর্ত্যে আগমনের পর সোমবার ষষ্ঠী তিথিতে ম-পে ম-পে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার অধিষ্ঠান হয়। সকাল নয়টা ২৫ মিনিটের মধ্যে ছিল ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেয়া হয় ষষ্ঠী পূজা। দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য করা হয় বন্দনা পূজা। সায়ংকালে দুর্গা দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস ছাড়াও সব ম-পে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় মন্দিরে মন্দিরে প্রার্থনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শারদোৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমী। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। এর পর সকালে বেল, ধান, কলা, মান, জয়ন্তীসহ নয়টি উদ্ভিদের সমন্বয়ে দেবী দুর্গার নয়টি রূপ একত্রে করে নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা হবে। পূজাশেষে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন থাকবে। রাতে হবে আরতি। এভাবে উৎসব চলবে আগামী শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত। এভাবে কড়া নিরাপত্তায় দেবীর আগমনে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পর্বের চাঞ্চল্য ও মুখরতার আবহে সারাদেশে শুরু হয়েছে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। নানা আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে পূজা ম-পগুলো। প্রতিটি মন্দির সেজেছে আপন সৌন্দর্যে। থিমের অভিনবত্ব আর রকমারি আলোকসজ্জার সাজে সাজানো হয়েছে একেকটি পূজাম-প। হিন্দুদের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষের যোগ দেয়ায় দুর্গোৎসব রূপ নিয়েছে সর্বজনীনতায়। সারাদেশের সকল পূজাম-পে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ, উলুধ্বনিতে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন জানান দিচ্ছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে এখন মাতোয়ারা গোটা দেশের পূজাম-প। ধর্ম ও সংস্কৃতি ভিন্ন হলেও এটা যে সর্বজনীন তা শারদীয় দুর্গা পূজা এলে সহজে বোঝা যায়। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও শারদীয় দুর্গা পূজায় আনন্দের অন্ত নেই। মাইকে মাইকে ভেসে ওঠে কীর্তন কিংবা পুরনো দিনের গানের সুর। ‘আজি শঙ্খে মঙ্গলগাও জননী এসেছে দ্বারে’ কিংবা ‘জাগো দুর্গা, জাগো দশভুজা জগজ্জননী মা’- এই আহ্বান এখন আকাশে-বাতাসে। জ্ঞান-কর্ম ও নিদ্রার তিন গুণের আঁধারে দেবী মহামায়াকে বন্দনা করতে ভক্তপ্রাণে যেন আকুতির শেষ নেই। গ্রামের কোথাও পূজা উপলক্ষে চলছে রামায়ণ, অষ্টক, কবিগান ও যাত্রাগান। বিচিত্র পসরা সাজিয়ে বসেছে মেলা। নাড়ু, মুড়কি, খৈ-বাতাসা, কদমাসহ নানা জাতের মিষ্টির সমারোহ প্রতিটি বাড়িতে। যার যতটুকু সাধ্য উৎসবের আনন্দ তার ততখানিই। দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় সাজে এবার সজ্জিত করা হয়েছে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বনানী মাঠের পূজাম-প। ম-পসহ পূরা প্রাঙ্গণ সাজানো হয়েছে বাহারি সাজে। মহাষষ্ঠী উপলক্ষে পূজাম-পে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে ম-পের শুভ উদ্বোধন করেন। এসময় আগমনী নৃত্য এবং মঙ্গল আরতি পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লিকেন, এশিয়া ইউরোপ পলিটিক্যাল ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান ড. নলিনি তাভিসিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ ও গুলশান ক্লাবের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এছাড়া কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও কলাবাগান সর্বজনীন পূজাম-প সাজানো হয়েছে বর্ণিল ও আধুনিক নির্মাণশৈলী দিয়ে। গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজাম-প, ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের পূজাম-প, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘ (সসকস) বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত পুরান ঢাকার অলিগলিতে নির্মিত পূজাম-পগুলো তাক লাগানো সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে দুর্গা পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
×