ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টে প্রতিবেদন

রাজীবের হাত হারানোর ঘটনায় শমরিতা হাসপাতালও দায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

রাজীবের হাত হারানোর ঘটনায় শমরিতা হাসপাতালও দায়ী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই বাসের প্রতিযোগিতায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের হাত হারিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় দুই বাসের চালকের পাশাপাশি শমরিতা হাসপাতালের অবহেলার দায় রয়েছে জানিয়ে, হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগামী ১৪ নবেম্বর দিন ধার্য করেছে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। গত ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজীবের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে আপীল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টকে দুর্ঘটনার দায় নিরূপণে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ প্রকৗশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এ্যাকসিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান, সিভিল এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল, জব্দকৃত বাস, ভিকটিমের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এর আগে সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে চালকদের ট্রিপ ভিত্তিক গণপরিবহন চালানোর বিষয়টি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কমিটি ১৮ দফা সুপারিশ পেশ করেছে। প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মাঝে পড়ে কীভাবে রাজীব হাত হারিয়েছেন সেই বিষয়টি এতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের ওই চালকদের ভারি যানবাহন চালানোর লাইসেন্স ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের চালককে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজীবের মৃত্যুর জন্য শমরিতা হাসপাতালের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এদিকে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আগামী ১৪ নবেম্বর থেকে রুলের শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া যে প্রতিবেদন কমিটি দাখিল করেছেন সেই প্রতিবেদনের কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব যে মারা গেছে। তার কোন দায় তারা পায়নি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে উভয় চালক অর্থাৎ বিআরটিসি ও স্বজন পরিহন দুই বাসের চালককের সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স ছিল না। অর্থাৎ বড় গাড়ি চালানোর যে লাইসেন্স থাকার দরকার সেটি ছিল না। তাদের হালকা যানবাহন চালনার লাইসেন্স ছিল। কমিটির প্রতিবেদনে আরেকটি বিষয় হচ্ছে শমরিতা হাসপাতালকেও দায়ী করেছে। তারা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারেনি। তাদের কিছু অবহেলা রয়েছে। এই কমিটি জরিমানার পাশাপাশি সামগ্রিক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আনার জন্য কিছু সাধারণ পরামর্শ দিয়েছে প্রতিবেদনে। চূড়ান্ত রুল শুনানিতে এইসব বিষয় আসবে।
×