ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শারদীয় নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ‘মেরাজ ফকিরের মা’

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

শারদীয় নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ‘মেরাজ ফকিরের মা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গোটা শহরজুড়েই বইছে উৎসবের আমেজ। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা দেবীর আগমনে বইছে আনন্দের বারতা। উৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও সম্প্রীতির সুরে দুর্গোৎসবেরর আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নিচ্ছে সবাই মিলে। নানা আয়োজনে রাঙিয়ে তোলা হচ্ছে উৎসবকে। আনন্দ আয়োজনের সেই রেশ ধরে রাজধানীতে শুরু হলো শারদীয় নাট্যোৎসব। ‘নারী শক্তির বিকাশ সভ্যতার প্রকাশ’ প্রতিপাদ্যে সোমবার থেকে রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দীঘিরপাড়ে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয়। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত উৎসবটির আয়োজন করছে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির পূজা কমিটি। কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সোমবার শুরু হয় এ নাট্যোৎসব। প্রথম দিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় থিয়েটারের নাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’। আবদুল্লাহ আল মামুনের রচনা ও নির্দেশনায় প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, ত্রপা মজুমদার, মজিবর রহমান জুয়েল, তানজুম আরা পল্লী, মারুফ কবির, সাইফ জোয়ারদার, আব্দুল কাদের, তোফা হোসেন প্রমুখ। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, আলো বিবির সন্তান মেরাজ ফকির ধর্ম ব্যবসায়ীদের একজন। সংসারের সবাইকে ধর্মীয় গোড়ামির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে বদ্ধপরিকর। এমনকি তার জন্মদাত্রী মাতাও এর বাইরে নয়। পলাশপুর গ্রামের গেদা ফকিরের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে চলতে থাকে বিবাদ। ধর্মকে পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে এক অন্ধকারে নিয়ে যেতে থাকে তারা। গেদা ফকিরের আস্তানায় মেয়ের খোঁজে হাজির হয় অসুস্থ ধীরেন্দ্রলাল। তার কাছ থেকে গেদা ফকির মেরাজ ফকিরের জন্ম পরিচয় জানতে পেরে, এক সুযোগ নেয়। মেরাজ ফকিরের মা একজন হিন্দু ঘরের সন্তান। যাত্রা দলের মালিক ধীরেন্দ্রলালের মেয়ে আলোর সঙ্গে ৩৯ বছর আগে মুসলমান ধর্মমতে বিয়ে হয় মেরাজের বাবা মোজাহের ম-লের। নাম হয় আলো বিবি। একজন হিন্দুর ঘরের মেয়ের পেটে মেরাজের জন্ম জানতে পেরে সে মাকে খুন করতে যায়। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এভাবেই নাটকের কাহিনী আবর্তিত হয়। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশ অপেরা মঞ্চায়ন করবে যাত্রাপালা ‘সতী করুণাময়ী’। কাল বুধবার আছে মঞ্চস্থ হবে দুটি নাটক। সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকা নান্দনিকের নাটক ‘নড়বড়ে বউ’ এবং রাত নয়টায় মঞ্চস্থ হবে স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বিবেকানন্দ থিয়েটার ‘বিসর্জন’ নাটক এবং শুক্রবার শেষ দিন সংস্কার নাট্যদল মঞ্চস্থ করবে ‘বশীকরণ’ নাটকটি। উৎসব প্রসঙ্গে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির কমিটির সভাপতি ও শারদীয় নাট্যোৎসবের আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে শারদীয় দুর্গা উৎসব উপলক্ষে নাট্যোৎসব হয়ে আসছে। একসময় ‘ভক্ত গিরিশ’, ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’, ‘মহারাজা হরিশ্চন্দ্র’, ‘রাম-সীতা’র মতো পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক নাটক হতো। ২০১৬ সাল থেকে নানা স্বাদের নাটক নিয়ে এ উৎসব হচ্ছে। কত্থক ও সেতারের যুগলবন্দী সন্ধ্যা ॥ ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (আইজিসিসি) আয়োজনে সোমবার অনুষ্ঠিত হলো কত্থক নৃত্য ও সেতার বাদনের যুগলবন্দী সন্ধ্যা। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেতারে সুর তুলে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন এবাদুল হক সৈকত। এবাদুল হক ভারতে সেতার বাদনে উচ্চতর পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে এসে সেতারবাদনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। অপর শিল্পী মোঃ মাসুম হোসেন কত্থক নৃত্যে ছড়ান মুগ্ধতা। তিনি ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর নৃত্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ভারতের স্বনামধন্য নৃত্যগুরুর কাছে। দেশে ফিরে তিনি শাস্ত্রীয় নৃত্যের চর্চা পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপ্তি ॥ শেষ হলো গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ আয়োজিত গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব। গত ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এগারো দিনব্যাপী উৎসটির শেষ দিন ছিল সোমবার। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যসচিব আবদুল মালেক। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন কেরামত মওলা, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ্। সূচনা বক্তব্য রাখেন গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের সদস্য সচিব আকতারুজ্জামান। সমাপনী দিনে মুক্তমঞ্চে মূকাভিনয় পরিবেশন করে মাইম আর্ট ও মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশ্বজিৎ রায়। জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চস্থ করে ‘মর্ষকাম’। আনিকা মাহিন একার রচনায় এর নির্দেশনায় ছিলেন রোকেয়া রফিক বেবী। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে ভিশন থিয়েটার মঞ্চস্থ করে ‘নৈশভোজ’। মনোজ মিত্রের রচনায় এর নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম শাহরিয়ার সিক্ত। স্টুডিও থিয়েটার হলে রঙ্গপীঠ মঞ্চস্থ করে ‘মহেশ’। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন গোলাম জিলানী।
×