ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কার ঐক্য কিসের ঐক্য

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

কার ঐক্য কিসের ঐক্য

পিঠা ভাগাভাগি নিয়ে বানরের ঐক্য সাময়িক বৈকি! অবশ্য এ গল্প অনেক পুরনো। কিন্তু তার রূপায়ণ মানবজাতিতে বর্তেছে। অবশ্য সব মানব নয়, কতিপয়। এই মানবেরা পরস্পরবিরোধিতা থেকে হালুয়া-রুটির লোভে একসঙ্গে মিলিত হয়ে ভাগাভাগির কালে মারদাঙ্গাতে লিপ্ত হতেও কসুর করে না। বড় আর ছোট তরফের মধ্যে ঐক্য অনেকটা ‘বড়র পিরিতি বালির বাঁধের মতো।’ তাই ভেঙ্গে যেতে পারে ঝুরঝুর করে। বিলীন হয়ে যেতে পারে নদীগর্ভে প্রচ- ঢেউয়ের আলোড়নে। স্বীকৃত সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদী, খুনী, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীর মধ্যে ঐক্য মানেই ‘জ্বালাওপোড়াও’ আর পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত মানুষ হত্যা শুধু নয়, জঙ্গীদের গুপ্ত হত্যা, আত্মঘাতী বোমা হামলা, নাশকতা, নৃশংসতা, নির্মমতা, অরাজকতার বিস্তার ঘটানো। এসবের চর্চা দিয়েই এরা পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে। এদের সঙ্গে জনবিচ্ছিন্ন এবং গণধিকৃতরাও শামিল হয়েছে পিঠেপুলির ভাগটুকু যদি মেলেÑ সেই ভরসায়। পথ হারানোরা নয়া পথের সন্ধান করছে বলে যতই হাঁক-ডাক দিক না কেন, স্বরূপে তারা হারাধনের দশটি ছেলে যেন। পথে পথে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলেও কেউ এগিয়ে এসে জানতে চাইবে না, খোকাবাবু তার বাড়িঘর, সাকিন, মৌজা, ঠিকুজির খোঁজ জানে কিনা। পিতৃমাতৃহারা অনাথদের আশা-ভরসা এতিমখানায় ঠাঁই পাওয়া। রাজনৈতিক এতিমরা অবশেষে ঠাঁই নিয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, খুনী, রাজাকার-আলবদর পুনর্বাসনকারী, যুদ্ধাপরাধীদের স্বজন ও স্বাধীনতাবিরোধীদের লালনকারী দলের বক্ষে। যদি পায় কোনভাবে রক্ষে। তদুপরি পিছপা হয় না আলবদর-রাজাকারের সঙ্গে সখ্যে। ক্ষমতার মসনদ বুঝি তাদের ডাকে, যে কোন মূল্যে নিতে হবে দখল। তাই উন্মাদনার অতল জলে অবগাহন করে স্বপ্ন দেখে ও দেখায়। জনগণ যদি আদর যতœ সোহাগে তাদের খাটিয়ায় শুভ্র কাপড়ে মুড়িয়ে কাঁধে করে নিয়ে যায় গোরস্তানে নয়, সিংহাসনে। গদিতে আসীন হওয়ার জন্য তাই জামায়াত, জঙ্গী, ধর্মান্ধ, যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী, খুনীরা হয়ে যায় নিরপরাধী। সুতরাং তাদের বাহুলগ্ন হয়ে একাকার হওয়ার জন্য কী উদগ্রীব। অথচ তাদের অনেকের পায়ের নিচে নেই মাটি। দাঁড়াবার জায়গা মেলে না বলেই সামরিক জান্তা শাসকের সৃষ্ট চেতনা ও আদর্শের কাছে নিজেকে বলি বা আত্মদানে কসুর করে না, ডাকসাইটে বলে পরিচিতজনরাও। অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এই এতিম ও তাদের অনুসারীদের জীবনে। একালের রাজনৈতিক এতিমরা অক্ষমের মতো আর্তনাদ শেষে লীন হয়ে যায় গ্রেনেড মেরে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যাকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের দলে। এসব কলঙ্কময় রাজনীতিকের সঙ্গে গণবিচ্ছিন্ন এতিমরা একাত্ম হয়েছে কানামাছি খেলার জন্য নয়, বরং স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাকিস্তানী মানসিকতাজাত থেকে। সাত ও এগারো দফা ঘোষণা করা যত সহজ, তা কার্যকর করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা তত সুকঠিন। একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণকারীর জন্য যুদ্ধাপরাধী বা স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে একাত্ম হওয়া কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয় যদিও। তাই তারা ক্ষমতাসীন সরকারকে অপসারণে ঐক্যবদ্ধ হতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়নি। এই ঐক্য জনগণের ঐক্য নয়। বরং সামরিক ছাউনিতে জন্ম নেয়া রাজাকার পুনর্বাসনকারী সামরিক জান্তা শাসকের সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার কণ্ঠ মুখোশধারীদের ঐক্যÑ যারা দেশকে পশ্চাতে টেনে নিতে চায়। যে কারণে দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্তদের রাজবন্দী অভিধা দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করে না। হাওয়া ভবনের হাওয়ায় বেড়ে ওঠা দুর্নীতিগ্রস্ত, সন্ত্রাসের গডফাদারদের রাজনৈতিক বৈধতাদানের এক দুরাচারী কৌশল। বিএনপি তথা জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ জামায়াতকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে যারা মাঠে নেমেছেন মুক্তিযুদ্ধের আবরণে-আভরণে, তাদের দ্বিচারিতার নমুনা এই ঐক্য। কে কার সঙ্গে কিসের ঐক্য করছে তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে এত দিন। জনগণের নামে যেসব বাক্য উদগারিত হোক না কেন, তা আসলে গণবিরোধী গণদুশমনদের নাশকতার পথে ধাবিত হবারই নামান্তর। এসব ঐক্য মূলত ষড়যন্ত্রের। জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে সামান্য পথও হেঁটে যাওয়া তাদের জন্য দুষ্কর প্রায়। গণরোষে এরা পতিত হবেই, ইতিহাস তাই বলে।
×