ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু নেতা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে ॥ গার্মেন্টস শিল্পে ন্যূনতম মজুরি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

কিছু নেতা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে ॥ গার্মেন্টস শিল্পে ন্যূনতম মজুরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কিছু শ্রমিক নেতা ও এনজিও ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। মালিক-শ্রমিক সব পক্ষ বিষয়টি মেনে নিয়েছে। কিন্তু মুষ্টিমেয় শ্রমিক নেতা ও এনজিও এ বিষয়ে শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে গার্মেন্টস খাতকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সোমবার রাজধানীর কাওরানবাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে ‘পোশাক শিল্পের ন্যূনতম মজুরি ও বর্তমান পরিস্থিতি’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একটি শ্রমিক সংগঠনের নাম উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন নামে একটি সংগঠন আংশিক সত্য, বিকৃত ও ভুল তথ্য সংবলিত একটি প্রচারপত্র জনসাধারণের মাঝে বিলি করছে। সংগঠনটি তাদের প্রচারপত্রে বলছে, নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। তারা ১৯৯৪ ও ২০০৬ সালের মূল মজুরির তুলনা করছে, কিন্তু কৌশলে তারা ২০১৩ সালের মজুরির বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তারা আরও বলছে, সপ্তম গ্রেডে শ্রমিকের হার মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ। অথচ এই গ্রেডের শ্রমিদের প্রকৃত হার হচ্ছে ২০ শতাংশ, যা সিপিডি পরিচালিত ‘আরএমজি স্টাডিতেও’ উঠে এসেছে। আর নতুন মজুরি কাঠামোতে মূল মজুরির পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাও যে বৃদ্ধি পেয়েছে তা আজ আর কারও অজানা নয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি স্পর্শকাতর শিল্পখাত সম্পর্কে এ ধরনের ভুল ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করার উদ্দেশ্য কি? এই ঔদ্ধত্য তারা কোথায় পেল, তা আমরা জানতে চাই। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ৪ বছর ধরে গার্মেন্টস শিল্পে একটি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। যার জন্য আমরা আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দন পাচ্ছি। তবে অনেকেই আমাদের এই উন্নতিতে খুশি হতে পারছেন না। তারা এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যে কোনভাবেই বিঘিœত করতে চান। তিনি বলেন, এ শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনরা। লাখ লাখ শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বে। আর কোন কারণে এ বিশাল শ্রমগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের অন্য খাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার মতো কোন খাত এখন পর্যন্ত দেশে গড়ে ওঠেনি। আর এতে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্থনীতির নেই। বিজিএমইএ সভাপতি কিছু তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ন্যূনতম মজুরি প্রদানে আমাদের সক্ষমতা হলো ৭ হাজার টাকা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ৮ হাজার টাকা মেনে নিয়েছি। যদিও এই মজুরি বাস্তবায়ন আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ২০১৩ সালেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা নি¤œতম মজুরি ৫,৩০০ টাকা মেনে নিয়েছিলাম। তার আগে ২০১০ সালে নি¤œতম মজুরি নির্ধারণ করেছিলাম ৩,০০০ টাকা। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পোশাক শিল্পের মজুরি বৃদ্ধির হার ৩৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তারপরও তথাকথিত শ্রমিক নেতারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ খাতকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কারখানা সংস্কার, মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ২০১৪-১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে প্রায় ১২শ’ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। তাই নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করা গার্মেন্টস শিল্পের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিদেশী ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছেন। আশা করছি, বিদেশী ক্রেতারাও তাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন। শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এখন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে উৎপাদনশীলতা বাড়ান। এই শিল্পকে টিকে থাকতে সহায়তা করুন। শিল্প ভাল থাকলে আপনারাও ভাল থাকবেন। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৪ হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ২০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৩৫০ টাকা, খাদ্য ভাতা ৯০০ টাকা। এদিকে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছিল সরকার। সেই হারেই এখন বেতন পাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে নতুন মজুরি কাঠামো বস্তাবায়ন শুরু হবে। বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত সব গার্মেন্টস কারখানা যাতে এই মজুরি বাস্তবায়ন করে সে ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে কারখানাগুলো মনিটরিং করা হবে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি।
×