মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শিবিরগুলোতে সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী। মূলত পুরনো যে ৩২ সহস্র্রাধিক রোহিঙ্গা শরণাথীর মর্যাদা পেয়ে বছরের পর বছর বাংলাদেশে অবস্থান করছে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন করে পালিয়ে আসা সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী গ্রুপের বহু সদস্য। এরাই শিবিরগুলোতে নানামুখী অরাজকতায় লিপ্ত রয়েছে। ইতোপূর্বে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। এবার ঘটেছে ডাকাতির চেষ্টা। ডাকাত গ্যাংও যে সক্রিয় হচ্ছে তা লক্ষণীয়। গত শনিবার রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে দিবালোকে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ডাকাতির একটি প্রচেষ্টা চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে দুই রোহিঙ্গা। গ্রেফতার হয়েছে অপর দুই রোহিঙ্গা। টেকনাফের হ্নীলানয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরের বি-ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু রিদওয়ান বলেছেন, ডাকাতদের গুলিবর্ষণের ঘটনা জেনে পুলিশ সদস্যরা সেখানে হাজির হওয়ার পর ডাকাতরা পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানা গেছে, একটি কাপড়ের দোকানে লুটের চেষ্টা চালায়। প্রথমে দোকান অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মালিক আবু বকর ও তার পুত্র মোঃ ইউসুফকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ও সন্নিহিত এলাকার আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গারা এগিয়ে আসে। খবর পেয়ে পুলিশও অকুস্থলে পৌঁছায়। ডাকাতরা পালিয়ে গেলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবুল কালাম ও আনোয়ার সাদেক নামের দুই রোহিঙ্গা মাঝিকে গ্রেফতার করা হয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে অরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় দেয়ায় সন্ত্রাসী গ্রুপের বহু সদস্য আশ্রয় নিয়েছে শিবিরগুলোতে। যা স্থানীয়দের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
উখিয়া টেকনাফের যেসব স্থানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে, সেখানে কোন ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। আছে পাহাড় লাগোয়া অজস্র্র মেঠোপথ। বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা যে আস্তানা গেড়েছে সেগুলো পাহাড়ী এলাকায়। রাতে আশ্রয় শিবিরে ঢুকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবার গুটির মতো ব্যবহার করে যাচ্ছে। বিশেষ করে চালাচ্ছে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা। গভীর রাতে আশ্রয় শিবিরের খোলামেলা স্থানে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা যুবকদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মোট কথায় পুরনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নির্দেশেই অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও যত্রতত্র যাতায়াত, আয়-রোজগার এবং ইচ্ছেমতো বসবাস করতে পারছে বলে উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবির ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চাইছে না। উল্লেখ্য, শরণার্থী আইন অনুসারে যে দেশে বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় গ্রহণ করবে, সে দেশের আইন অনুসারে তাদের বসবাস করতে হবে। ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতি ব্যতিরেকে আশ্রয় শিবির ত্যাগ করে কোথাও যাওয়া যাবে না। ত্রাণ ব্যতীত ব্যবসা, বাড়তি আয়ের কোন সুযোগ নেই। এমনকি আশ্রিতরা নিজ দেশের মুদ্রাও সঙ্গে রাখার কোন সুযোগ নেই। আশ্রিতরা স্থানীয়দের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আরও উল্লেখ্য, উখিয়া টেকনাফে অরক্ষিত আশ্রয় শিবিরে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের কোন বালাই নেই। রোহিঙ্গারা যেখানে ইচ্ছে কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছে শিবির ত্যাগ করে। দেদারছে কামাই করছে এ দেশীয় অর্থ। সরকার রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সম্পন্ন হলে অবশিষ্টদের নিরাপত্তা বেস্টনির অভ্যন্তরে রাখার বাধ্যবাধকতা বহাল করতে হবে। এছাড়াও প্রতিমাসে নিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গাদের গণনা করার নিয়ম বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণনায় যেসব রোহিঙ্গাদের পাওয়া যাবে না তাদের রেশনপ্রাপ্তি থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া অন্যান্য নিয়ম-কানুন কার্যকর করা হলে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আইনশৃঙ্খলাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতব্যক্ত করেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সাল থেকে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত প্রায় ২৭ বছরে এদের পরিবারে জন্ম নিয়েছে আরও প্রায় ৩০ হাজার। এদের নতুন জন্ম নেওয়ারা নিবন্ধিত নয়। পুরনো এসব রোহিঙ্গারা এ দীর্ঘ সময়ে এ দেশীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। সঙ্গত কারণে দাবি ওঠেছে প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রথমে পুরনোদের হস্তান্তর অতি জরুরী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: