ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মীরসরাইয়ে নৌকার কাণ্ডারি হতে চান মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

মীরসরাইয়ে নৌকার কাণ্ডারি হতে চান মোশাররফ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাজধানী থেকে সড়কপথে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই। সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-১। দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোন এবং দৃষ্টিনন্দন লেক-ঝর্ণার জন্য এখন বেশ পরিচিত উপজেলা মীরসরাই। সাগরপারে ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোন, যেখানে কর্মসংস্থানের টার্গেট অন্তত ১০ লাখ মানুষের। বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরও আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই ইকোনমিক জোন। মীরসরাইয়ে এমন চেহারা এর আগের সংসদ নির্বাচনে ছিল না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকায় এ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা এবং অনুসারীদের দৌড়ঝাঁপ সঙ্গত কারণেই বেশি। অপরদিকে, বিএনপিতে উল্টো চিত্র। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলটির তৃণমূল পর্যায়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে গভীর হতাশা। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও আড়মোড়া ভেঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টাও তেমন দৃশ্যমান নয়। তাই বলে বড় দল বলে কথা। নৌকা-ধানের শীষ মানেই জমজমাট এক নির্বাচনী লড়াই। চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। মীরসরাই বলতে তার নামটিই সবার আগে আসে। কঠিন সময়েও এই নেতা ছিলেন উত্তর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কা-ারি। বার বার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, দুদফায় পেয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে হিসেবে দেখলে তার বয়স হয়েছে। তারপরও মনোনয়ন দাবিদার হিসেবে তিনিই এক নম্বরে থাকছেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। মোশাররফ অনুসারীদের বদ্ধমূল বিশ্বাস, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাদের নেতাই মনোনয়ন লাভ করবেন। তবে এক্ষেত্রে বয়স একটা ফ্যাক্টর। পাশাপাশি এসেছে নতুন নেতৃত্বও। শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ যদি মনোনয়ন না পান, তাহলে মীরসরাইয়ে কে হতে পারেন নৌকার মাঝি-তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আলোচনা। চট্টগ্রাম-১ আসনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পর যিনি সর্বাধিক আলোচিত, তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ গিয়াস উদ্দিন। তৃণমূলে এ নেতার রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। সব সময়ই তাকে পাশে পেয়ে থাকেন ভোটাররা। শুধু নির্বাচন নয়, সারাবছরই তিনি থাকেন গণসংযোগে। বিশেষ করে দল-মত নির্বিশেষে দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা এবং মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া দলীয় নেতাকর্মীদের সহায়তায় তিনি উদারহস্ত। সে কারণে তিনি নেতা ও ব্যক্তি হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরসঙ্গীও হয়েছেন। বিষয়টিকে গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে দেখছেন কর্মী সমর্থক ও অনুসারীরা। এ প্রসঙ্গে মোঃ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন দীর্ঘ সময়ের বিশ্বস্ত কর্মী। সব সময় রাজপথে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে মূল্যায়ন করে তার সফরসঙ্গী করেছেন, তা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। জনগণের পাশে ছিলাম, জনগণ আমার পাশে আছে। মনোনয়ন পেলে অবশ্যই মীরসরাইয়ের ভোটাররা বিপুল ভোটে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন। মীরসরাইয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে এর বাইরে যিনি আলোচনায় রয়েছেন তিনি হলেন গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুত্র প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান রুহেল। ক’বছর ধরে তিনি রাজনৈতিক কর্মকা-ে রয়েছেন। মোশাররফ অনুসারীদের দ্বিতীয় পছন্দ এই রুহেল। বয়স কিংবা কোন কারণে যদি মোশাররফ হোসেন নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে রুহেলই নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হবেন, এমনই আশা অনুসারীদের। তবে এক্ষেত্রে আপত্তি গিয়াস উদ্দিন অনুসারীদের। তাদের বক্তব্য হলো- ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আবারও মনোনয়ন পেলে আপত্তি নেই। তবে তার অনুপস্থিতিতে উত্তরাধিকার হিসেবে রুহেলকে ভোটাররা মেনে নেবে না।
×