ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্ছেদেও ঠেকানো যাচ্ছে না

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে হাজারো পরিবার

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে হাজারো পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে গত প্রায় ৫ দিন ধরে কখনও টিপটিপ আবার কখনও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে কাটা পাহাড়গুলোর মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় ধসের আশঙ্কা করছিল জেলা প্রশাসন। ফলে পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের পক্ষ থেকে দফায় দফায় মাইকিংও করা হয় গত ৫দিন ধরে। এমনকি ৩ দফায় উচ্ছেদ অভিযানও করা হয় নগরীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকায়। তিন দিনের অভিযানে প্রায় ৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয় ওয়াসার টাঙ্কির পাহাড়, রেলের পাহাড় ও জিলাপি পাহাড় থেকে। অভিযানে বা মাইকিংয়ের পর সরে আসলেও পরক্ষণে আবারও অবস্থান নেয়ায় শনিবার গভীর রাতে মা-মেয়ে ও নাতনিসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে পাহাড়ের মাটি ও দেয়াল ধসের কারণে। অভিযোগ রয়েছে, মাইকিং কিংবা অভিযান করে কোন লাভ হচ্ছে না কারণ এদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন না করা গেলে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে না। খোদ পরিবেশ অধিদফতরের ১০০ গজের মধ্যেই হিসাবরক্ষকের ভাড়া বাসার সামনেই অভিনব কায়দায় পাহাড় কেটে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করাচ্ছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র শিক্ষক মিজানুর রহমান। মোটা অঙ্কে পরিবেশ অধিদফতরকে ম্যানেজ করেই পাহাড় কাটা ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে অবৈধ ভবন নির্মাণ করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। পরিবেশ ভবনের সামনে পাহাড় কেটে ৫তলা ভবন তৈরি করেছে আব্দুল মালেক সওদাগর। এছাড়াও প্ল্যানিং কমিশনের অফিস প্রধান সায়েদুজ্জামান আকবরশাহ মাজারের পাশেই পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে ও কাঁচাঘর নির্মাণ করে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। এদিকে এই পাহাড়ের পশ্চিম দিকের একটি অংশ কেটে ফেলার কারণে পূর্ব দিকে থাকা পিডিবির খুলশী সাব-স্টেশন ঝঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। চট্টগ্রামের ১৩টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসে সহায়তা করছে পুলিশ প্রশাসনসহ ওয়াসা, বিদ্যুত ও কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষের অসাধুরা। তবে পাহাড়ে ফাটল দেখা দিলেও ভূমিদস্যুরা ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ ও হতদরিদ্র মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ বসবাসকারীদের। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মতিঝর্ণার ওয়াসার টাঙ্কির পাহাড়, রেলের পাহাড়, আকবরশাহর পাহাড়, ফিরোজশাহর ঝিলের পাহাড় ও বায়েজীদের মিয়ার পাহাড় এলাকায় মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে অভিযান টিম। শনিবার ৪ জনের মৃত্যুর পর মৃত্যু আতঙ্কে পাহড়বাসীরা ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ মাটির বস্তা দিয়ে আবাসগৃহ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়বাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার ঘূর্ণিঝড় তিতলি ও সাগরে নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় মাটি ধসের ঘটনা ঘটে কাটা পাহাড়গুলোতে। গত ৫দিনে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের মাটি অনেকটা নরম হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পাহাড়ের চূড়ায় গর্ত করে পাহাড়খেকোরা কৌশলে পাহাড় কাটার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর লালখান বাজার ও মতিঝর্ণা এলাকা থেকে প্রায় ৬’শর বেশি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে, আকবরশাহ হাউজিং সোসাইটি, নাছিরাঘোনা, সুন্দরীর পাহাড় মিলে প্রায় ২শ’ পরিবার, টাইগার পাসের বাটালি হিল, এবকখানের পাহাড়ে রয়েছে শতাধিক পরিবার, বায়েজীদের রৌফাবাদের মিয়ার পাহাড়ে রয়েছে প্রায় ৭৫ পরিবার, আকবরশাহর রেলের পাহাড়ে রয়েছে প্রায় অর্ধশত পরিবার।
×