ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুর রেলপথ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

পদ্মা সেতুর রেলপথ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগের যুগান্তকারী নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। দেশবাসীর জন্য এটি উদ্দীপনামূলক খবর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এর সার্বিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ ও মূল সেতুর দৃশ্যমান অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। দেশবাসী অবগত আছেন বিশ্বব্যাংকের ঋণ নিয়ে যমুনা সেতু নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু দেশের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি গর্বিত হওয়ার মতো সন্তোষজনক খবর। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। প্রথম বাজেটে ২৯০ কোটি ডলারের মধ্যে ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু কোন অর্থ ছাড় করার আগেই ২০১২ সালে হঠাৎ করেই ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। বলা হয় কানাডার এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে ঘুষ নেয়ার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বিষয়ে কানাডার আদালতে একটি মামলা হয়। কানাডার আদালত শেষ পর্যন্ত রায় দেয় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং কষ্টকল্পিত। এদিকে বিশ্বব্যাংক চুক্তি স্থগিত করলেও অর্থায়নে ফিরে আসার জন্য তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রীকে সরানোসহ একের পর এক শর্ত দিতে থাকে। শর্ত মানতে প্রথমে সরকার কিছু অনীহা দেখালেও পরে সেতু নির্মাণের স্বার্থে অনেক শর্তই মেনে নেয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। অর্থায়নে তারা আর ফিরে আসেনি। বিশ্বব্যাংক যখন সেতু নিয়ে টালবাহানা করছে সে সময় বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যের পক্ষে দেশে একটি মহল সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করতে থাকে। এ অবস্থায় বছর দুয়েক পার করে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার প্রত্যয়ী ঘোষণা দেয়। ফলে দেশের উন্নয়ন দেখলে যাদের কষ্ট হয় তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হলে রেলপথে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। আর ঢাকা থেকে যশোর যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। বর্তমানের চেয়ে দূরত্ব কমবে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার পথ। পদ্মা সেতুর উপর সম্পূর্ণ আলাদা রেলসেতু নির্মাণের মাধ্যমেই দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের আশা পূরণে সরকারও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণ বঙ্গের যশোর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এ রেলপথটি সম্পন্ন হলে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত দূরত্ব হবে মাত্র ১৬৬.৩৩ কিলোমিটার। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাত নম্বর খুঁটিতে পাইল স্থাপনের কাজ শুরুর মধ্য দিয়ে মূল সেতুর কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটিতে স্প্যান বসবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল প্রকৌশলীরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক হলেও এ প্রকল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের দেশের অনেক প্রকৌশলী ও কর্মী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের বড় প্রকল্প আমাদের প্রকৌশলীরাই সম্পন্ন করতে পারবেন। এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি দেখে দেশের জনগণের মনোবল আরও বাড়বে। এটি আরও বড় কাজে সাফল্যের প্রেরণা জোগাবে। বর্তমান জনকল্যাণকামী সরকারের সাহসী, স্বাবলম্বী ও সুশোভন একটি স্থায়ী কাজের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই পদ্মা সেতু।
×