ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

দুর্নীতিবাজদের সমর্থক হয় আইনজীবী!

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

দুর্নীতিবাজদের সমর্থক হয় আইনজীবী!

আমার প্রশ্ন- এসকে সিনহার দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর যখন সিনিয়র আইনজীবীরা তাঁর বেঞ্চে বসতে অস্বীকার করেন, তখন ‘ঐক্য প্রক্রিয়া’ নামক নতুন জোটের প্রখ্যাত আইনজীবীকে কোন মন্তব্য করতে কেন দেখা যায়নি? অথচ এতদিন পর, এস. কে. সিনহার দুর্নীতির বিষয়টি বেমালুম ছেপে গিয়ে বলা হলো- সরকার নাকি তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে! তিনি যদি সৎ, ন্যায়পরায়ণ থাকতেন, তাহলে যে সরকার মুক্তিযুদ্ধের মৌলনীতি, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রমাণ ও সম্মান করতে একজন সংখ্যালঘুকে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিয়ে নিজে সম্মানিত হয়েছিল, সে সরকার কেন তাদের দ্বারা নিয়োজিত একজন সৎ, ন্যায়পরায়ণ বিচারপতিকে সরিয়ে দেবে? দেশত্যাগে বাধ্য করা তো দূর স্থান! এ প্রসঙ্গে না বলে পারছি না, যখন প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হয়ে তাতে নিয়োগের জন্য দু’জনের নাম আলোচিত হচ্ছে, তখন আমার মতো দেবার একটি সুযোগ এসেছিল। আমি বলেছিলাম, এখনই আমাদের অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এবং সংখ্যালঘুরা যাতে সব ধর্মের মানুষের করা মুক্তিযুুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল, সে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে, প্রসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির পদগুলোতে উপযুক্ত যোগ্য সংখ্যালঘু ব্যক্তি থাকে তাঁকে দ্রুত নিয়োগ দেয়া সরকারের উচিত হবে। এতে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাÑআদর্শ বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে। আইনজীবীকে বলব, এই প্রেক্ষাপটে, এই ভাবনার প্রেক্ষিতে এস কে সিনহাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তিনি উল্টো শেখ হাসিনা, আমাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের মুখে চপেটাঘাত করেছেন এবং আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ! যা হোক, আমার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, আপনি কি পৃথিবীর আর কোন দেশে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত ব্যক্তিদের নির্লজ্জভাবে তার নিজ দল বা অন্য দলকে সমর্থন করতে দেখেছেন। আজ তো আমরা দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মালয়েশিয়া, জাপান, ব্রাজিল থেকে শুরু করে অনেক দেশে প্রসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, এমনকি সম্প্রতি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হতে দেখছি! কিন্তু এটা দেখছি না যে তাদের দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীরা সেই সব দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের মুক্তি দাবি করছে! কেন এই পার্থক্য? উল্লেখ্য, ড. বদরুদ্দোজা মুক্তিযুদ্ধে যাননি। তার বাবা গিয়েছিলেন! প্রখ্যাত আইনজীবীও মুক্তিযুদ্ধে যাননি। আমরা অনেকেই নানা কারণে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। কিন্তু, কথা হলো, আমরা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ছিলাম, থাকব নিশ্চয় কেননা এই দেশের স্বাধীনতা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে যা আমরা পরাধীন অবস্থায় পাওয়ার স্বপ্নও দেখিনি। আমরা যুদ্ধাপরাধী পক্ষ অথবা যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তিদাতা, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মুক্তিদাতা, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের সমর্থক কখনও হতে পারে কি? যদি হয়, তাহলে আমরা কি এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করছি না? আপনারা কি ভেবে, বুঝে, এই দুই চরম দুর্নীতিবাজের, ২১ আগস্টের খুনের, পেট্রোল বোমা ব্যবহারকারী হত্যাকারী নেত্রী ও তার পুত্রের নেত্রীত্ব মেনে তাদের দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন? তাহলে, এটা কি প্রমাণ হচ্ছে না আপনারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছেন? আপনারা মুক্তিযুদ্ধপন্থী মহাজোটের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে নেমেছেন? বড় কথা হলো, আইনীভাবে প্রমাণিত, দ-িত, দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারীদের মুক্তি দাবি করছেন কোন আইনে? পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আছে কি যে দেশটি স্বাধীন হয়ে তার স্বাধীনতার বিরোধীদের সরকারে বসিয়েছে? আমাদের দুর্ভাগ্য, মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে আইএসআই-এর গুপ্তচরটি স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের পরিচালক এবং দেশের শ্রেষ্ঠ বীরসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে মাত্র নতুন বঙ্গবন্ধু সরকারের শাসনের সাড়ে তিন বছরের মাথায়! তিনিই তো এগারো হাজার গ্রেফতার হওয়া বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেয়, ধর্মভিত্তিক জামায়াতের রাজনীতির চর্চার সুযোগ করে দেয় সংবিধান কাটা ছেঁড়া করে! সেই ইনডেমনিটি বিল জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের পথ বন্ধ করে রাখে! সে কে? সেইতো নিজের অবস্থান নিজেই দিনের আলোর মতো প্রকাশ করেছে সে যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধু খুনীদের পক্ষের লোক! এখন তো ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট গঠন করতে গিয়ে কত অদ্ভুত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করছে! শুনে ভাবছি, খালেদা, তারেক এবার মহানন্দে বগল বাজাচ্ছে। কেননা পৃথিবীর যে কোন দেশে সে দেশের যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ সমর্থন করলে দ-িত হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখন এক ধরনের মুক্তিযোদ্ধার মুখে শোনা যাচ্ছে, ‘বিএনপির’ সঙ্গে তাদের জোট, ‘বিএনপি’ কাদেরকে সঙ্গে নিচ্ছে, তা নাকি তাদের দেখার বিষয় নয়! কয়েকদিন আগে এককালের মুক্তিযোদ্ধা ‘খলিফা’ বলেছিলেন জামায়াতকে নিয়ে জোট করলে সে জোটে তারা থাকবে না! আমাদের দুঃখ আদালতে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় দ-িত খালেদা জিয়া ও তারেকের পাশে, এস কে সিনহার পাশে দাঁড়াতে দেখি খ্যাতনামা আইনজীবীকে! খালেদা জিয়া বহু অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী, এমনকি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জিয়ার ‘গো এহেড’ অবস্থান গ্রহণ করেছিল। নতুবা সে প্রধানমন্ত্রী হয়ে এত ঘটনা পরিকল্পনা হচ্ছে, যাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা বাহিনী, এনএসআই, ডিজিএফআই জড়িত হয়েছিল, পুত্র তারেক পরিকল্পনা করেছিল তা না জানা অসম্ভব ব্যাপার। বরং সে হামলার ঘটনা ধামাচাপা দেবার চেষ্টাই করেছে জজ মিয়া ইত্যাদি নাটক সাজিয়ে। ভেবেছিলাম খ্যাতনামা আইনজীবী দেশের সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যখন কর্মসূচী গ্রহণ করেন, তখন ২১ আগস্টের মামলায় খালেদা জিয়াকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আসামী করার দাবিটি তুলবে! তাছাড়া, খালেদা বিপুল সম্পদ, তারেকের লন্ডনে বিলাসী আয়ের উৎস অনুসন্ধান করার দাবি তুলতেন! অথচ তারা খালেদার মুক্তি দাবি করে খালেদাকে দেশের আইনের উর্ধে স্থাপন করেছেন! এই দাবি কি আইনÑ সুশাসন পরিপন্থী নয়? সুসজ্জিত, মেকাপ করা মুখ, রং করা ফোলা চুলের খালেদা জিয়া অসুস্থ- এটা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে না। তবু, তার অসুস্থতার অতিরঞ্জিত বক্তব্য তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতাদের মুখে ভাঙ্গা রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে! অথচ ব্যক্তিগত চাকরানী নিয়ে এক রানীর মতো সে তার সব রকম সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। এই বয়সে যে যে রোগ হওয়ার কথা, ডায়বেটিস, হাড়ের ব্যথা ইত্যাদি যে মানুষের সাধারণ রোগ, এইসবের চিকিৎসা সে দীর্ঘদিন ধরে নিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির এপিঠÑওপিঠÑ একথা জিয়া যেমন প্রমাণ করেছে, তেমনি খালেদা জিয়া, তারেক রহমানও তা দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছে, এখনও করছে। ওরা জামায়াত-শিবিরকে শুধু আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তা নয়, ওরাই সবরকম জঙ্গীদেরও জন্মদাতা ও আশ্রয়দাতা- এটাও প্রমাণ হয়েছে। সুতরাং খালেদা-তারেকের রাজনৈতিক পুনর্জীবন জঙ্গীদের প্রসার ঘটিয়ে বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গীরা এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করবে- এটা বলা বাহুল্য! সেটাই কি খালেদা, তারেকপন্থী বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিকরা চাচ্ছেন? এটা আশ্চর্য নয় কি- দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ নেত্রীর সরকারের এত সফলতা সত্ত্বেও উক্ত জামায়াতÑমাতা ক্ষমতায় এসে আপনাদের ছুঁড়ে ফেলে দেশের সবরকম উন্নয়ন ধ্বংস করে দিতে বিন্দুমাত্র দেরি করবে না। তার পাশেই আপনারা দাঁড়াবেন? সফল নেত্রীর পাশে দাঁড়াবেন না? আশঙ্কা হয়Ñ ১. এরা রাজনৈতিক প্রতিযোগীকে নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে নয়, হত্যা করে নির্মূল করা জামায়াতের, খালেদা, তারেকের প্রিয় পন্থাকে ব্যবহার করে টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হবে স্থানীয়ভাবে সক্রিয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। ২. একটি বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে, নির্বাচনের দিনে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্যান্য কিছু ভোট কেন্দ্রের ল্যাপটপও, সে জন্য পাশাপাশি ম্যানুয়ালি ভোটের হিসাব রাখা দরকার হবে। ৩. গুজবকে ব্যবহার করা হতে পারে নির্বাচন ভন্ডুল করার উদ্দেশ্য যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলছি, শত শত ফেসবুক একাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হলো- ‘ হত্যাসহ আতঙ্কিত হওয়ার মতো গুজব’। গুজবগুলো এতই শঙ্কিত হওয়ার মতো যে, তখন নির্বাচন কমিশনসহ সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়বে, অনেক রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসার ভীত হয়ে চলে যাবে, হিন্দু ও সংখ্যালঘু ভোটাররা প্রাণ বাঁচাতে এলাকা ত্যাগ করবে, ব্যালট পেপারে জামায়াত-বিএনপির গুণ্ডারা সিল মেরে বাক্স ভরবে। সুতরাং শুধু ভোট কেন্দ্র পাহারা নয়, ফেসবুক, ইন্টারনেট, পাহারা দিতে হবে এবং হ্যাকিং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার দ্রুত যে কোন গুজবের সত্যতা বের করে ইন্টারনেটে প্রচার করতে হবে। সুতরাং এই নির্বাচনে নানামুখী অপতৎপরতা রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধপন্থী প্রযুক্তিবিদদের যথার্থ পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×