ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণদের একা হতে দেবেন না

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

প্রবীণদের একা হতে দেবেন না

মানুষের বয়স যত বাড়ে মানুষ ততই নিঃসঙ্গ হয়। একাকিত্ব মানুষকে গ্রাস করে। আগেকার যৌথ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে এখন আর খুব বেশি অবশিষ্ট নেই। মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। শিক্ষিত ছেলেমেয়ে চাকরির কারণে গ্রাম ছেড়ে শহরে স্থায়ী হচ্ছে। যারা পারছে বৃদ্ধ মা-বাবাকে সঙ্গে রাখছে। যদিও এ সংখ্যা নগণ্য। অনেক ছেলেমেয়ের সামর্থ্য নাই পিতা-মাতাকে শহরে নিয়ে রাখার মতো। আর রাখতে পারলেও তা যে স্বাস্থ্যসম্মত এমনটিও নয়। প্রবীণরা অবসর নেয়ার পর গ্রামে চলে যেতে চান। সেখানে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই থাকে। শৈশবের অনেক স্মৃতি উঁকি দেয়। অতীত স্মৃতি মানুষকে হাসায়-কাঁদায়। গ্রামে যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা কোনটি উন্নত নয়, তারপরও তাঁরা সেখানে থাকতে চান। আপনজনের মুখ দেখলে অনেক ভালও লাগে। সে মায়া ছেড়ে আসতে পারে না অনেক মা-বাবা। আর গ্রামে যারা স্থায়ী তাঁরাও শহরে আসতে চান না। পানির মাছ ডাঙ্গায় নিলে যা হয়, গ্রামের মানুষ শহরে গেলেও তাই করে। মোটকথা বাস্তবতার ধাক্কায় সন্তান হারাচ্ছে মাতা-পিতাকে। আর মাতা-পিতা হারাচ্ছে সন্তানকে। কেউ কেউ বয়স্ক পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে রাখছে। যা কারও কাম্য হতে পারে না। আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা একদিকে আনন্দের হলেও অন্যদিকে দুঃখের, বেদনার। কারণ এটাই আমাদের প্যারামিটার। এটা বিদেশের জন্য কোন জটিল বিষয় না হলেও আমাদের জন্য অনেক বড় ফাটল। এখানকার সমাজ ব্যবস্থা এভাবেই চলে আসছে অনাদিকাল থেকে। এ দুয়ের চাপে আমাদের প্রবীণরা প্রায় একাকি জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের প্রতি সদয় হতে হবে আমাদের সবাইকে। অনেক সময় পুত্রবধূদের বিরক্তির কারণও হয় এ মানুষগুলো। যতটা সম্ভব পরিবারের সব সদস্যকে মানবিক আচরণে অভ্যস্ত করতে হবে। কারণ এটা প্রত্যেক জীবনের অনিবার্য পরিণতি! রাষ্ট্রও তাঁদের প্রতি সদয় হতে পারে। যেমন প্রবীণদের জন্য আইডি কার্ড চালু করা। বাস-ট্রেন-লঞ্চে সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থাসহ হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা রাখা। সর্বোপরি সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা। বর্তমান সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করে প্রবীণদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। এজন্য সরকারপ্রধান ধন্যবাদ পেতে পারে। বর্তমান আমাদের গড় আয়ু ৭২ হলেও ৬০-এ ধরা হয় প্রবীণ। প্রবীণদের পরের সময়গুলো খুব কষ্টে কাটে। মরণব্যাধি রোগ-শোক থাকলে তো জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। তখন জীবনের ভার বইতে না পেরে স্বেচ্ছামৃত্যু কামনা করে আমাদের মা-বাবারা। অবহেলা-অভাব তো আছেই! যা আমাদের সমাজে স্বীকৃত নয়, ধর্মানুশাসনও বেশ কড়া। তাই নিজেদের জীবনের অন্তিম পরিণতির কথা মনে রেখে প্রত্যেকে যেন মা-বাবাকে নিজেদের পাশে রাখে এবং একটি মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির চেষ্টা যেন অব্যাহত রাখে। জয় হোক মানুষের। ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম থেকে
×