ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাই প্রবীণের অধিকার

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

চাই প্রবীণের অধিকার

জীবনের বসন্ত পেরিয়ে গেলে নেমে আসে প্রবীণকাল। এক সময় যে মানুষটি সংসারের হাল ধরেছিল, যার উপর নির্ভর ছিল সবাই, যে ছিল পরিবারের সর্বেসর্বা, সময়ের ব্যবধানে সে হয় কর্মহীন অক্ষম একজন প্রবীণ মানুষ। কেউ কখনও বুড়ো হতে চায় না। কিন্তু জীবনের নিয়মে মানুষ এক সময় বুড়ো বা প্রবীণ হয়ে যায়। সাধারণত কারও বয়স ষাট বছর কিংবা এর বেশি হলে তাকে প্রবীণ বলা হয়। আমাদের আশপাশে অনেক সংসারে বুড়ো মানুষ রয়েছে। এদের শারীরিক শক্তি কমে যায়। দুর্বল হয়ে পড়ে। লাঠি ভর দিয়ে চলতে হয়। উপার্জন করতে পারে না। অপরদিকে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। এক সময়ের টগবগে তাজা তরুণ জীবনের অন্তিম বেলাভূমে এসে নিথর অসহায় হয়ে পড়ে। প্রবীণ ব্যক্তি চলাফেরা, উঠাবসা, খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। অনেকেই প্রবীণদেরকে গুরুত্ব দেয় না। এড়িয়ে চলে। সংসারের বোঝা মনে করে। অবহেলা করে। খোঁজখবর নেন না। ভরণপোষণ, সেবাযতœ ও চিকিৎসা করেন না। কর্কশ ব্যবহার ও বিদ্রƒপ করেন। আবার অনেকে প্রতারণা করে প্রবীণের অন্ধের যষ্টিটুকু কেড়ে নেন। ফলে প্রবীণ ব্যক্তি সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ে। তার দীর্ঘশ্বাস বেড়ে যায়। দুর্ভাগ্যের শ্রাবণ শর্বরী যেন আর ফুরায় না! যা কখনই কাম্য নয়। শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে মানুষের জীবনধারা পরিবর্তনের কারণে এবং সমাজ ও পরিবারে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দরিদ্রতা, হীন্মন্যতা ও পারিবারিক ভাঙ্গনের কারণে প্রবীণরা বিরূপ প্রভাবের শিকার হন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে বার্ধক্যের অসহায়ত্বকে সঙ্গে নিয়ে জীবিকার সন্ধ্যানে প্রবীণকে যেতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে অথবা ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে- এ সমাজ, সংসার ও দেশ প্রবীণদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ যৌবনে মেধা, শ্রম, ত্যাগ ও অর্থ দিয়ে এ প্রবীণ ব্যক্তিরা ভূমিকা রেখেছিল। তবে এখনও প্রবীণদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে তারা তাদের বুদ্ধি, পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের উন্নয়ন কর্মকা-ে সহায়তা করতে পারেন এবং সঠিক ও সুন্দর পথ দেখাতে পারেন। তাই বলা যায়- প্রবীণরাও আমাদের মানব সম্পদ। প্রবীণদের প্রতি আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব রয়েছে। এদের মূল্যায়ন করা উচিত। আমাদের প্রতি এদের হক বা অধিকার আছে। এদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। সমাজ বা রাষ্ট্রে বিভিন্ন অধিকার যেমন- নারী অধিকার, শিশু অধিকার, শ্রম অধিকার ইত্যাদি অধিকারের মতো প্রবীণ অধিকার থাকা দরকার। প্রবীণ অধিকার আদায় ও বাস্তবায়নের প্রতি আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। প্রবীণের পাশে থাকা এবং সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক কর্তব্য। মা-বাবা তথা প্রবীণদের প্রতি সব সময় সহনশীল থাকতে হবে। তাদের সঙ্গে ন¤্র ভদ্র ব্যবহার করতে হবে। তাদের কোন প্রকার কষ্ট দেয়া যাবে না। তাদের প্রতি সবসময় সুনজর রাখতে হবে। অসুখ-বিসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হবে। তাদের সেবাযতœ ও খেদমত করতে হবে। তাদের মতামতের প্রাধান্য দিতে হবে। লালমোহন, ভোলা থেকে
×