ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আনিসুর রহমান

প্রবীণের প্রতি দায়িত্ব

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

প্রবীণের প্রতি দায়িত্ব

আমাদের জীবনটা শৈশব, বাল্য, কৈশোর, যৌবন পৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য- এই ছয়টি ধাপ নিয়ে গঠিত। যে কোন মানুষ যদি বেঁচে থাকে তাহলে এই ছয়টি স্তর পার হয়ে এক সময় প্রকৃতির নিয়মে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। সাধারণত মানুষ প্রকৃতির নিয়েম ৬০ (ষাট) বছর বয়স অতিক্রান্ত করলে প্রবীণের স্তরে চলতে শুরু করে। আর ওই সময় থেকে মানুষের শরীরের শক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। শুধু দেহের শক্তি নয় মানসিক শক্তিও দিনে দিনে হ্রাস পায়। যে ব্যক্তি সংসারের পুত্র-কন্যা-পরিজনের জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করতেন। সেই ব্যক্তি নিয়তির নিয়মে শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা হারিয়ে প্রবীণ হয়ে যান। প্রবীণ মানে জ্ঞানী। প্রবীণ মানে বিচক্ষণ। আবার এই প্রবীণ জীবনটা বড় কষ্টের। প্রবীণদের শরীরে শক্তি না থাকায় তারা সংসারের কোন কাজ করতে পারেন না। আয়-রোজগার তাদের থাকে না। এ বয়সটা থেকে মানুষ অসহায়ের দিকে এগিয়ে যায়। প্রবীণরা সংসারের অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ঠিক এই সময়টিতে প্রবীণরা উপযুক্ত সেবা-যত্ন না পেলে বেশি দিন পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে পারে না। প্রয়োজনীয় সেবা না পেলে রোগে-শোকে পতিত হয় এবং পাশাপাশি মানসিকভাবেও ভেঙ্গে পড়েন। এই সময়ে আমরা তাদের উপযুক্ত সেবা ও যত্ন দিয়ে প্রবীণের মাঝ থেকে সমস্ত হতাশা উজাড় করে দেব। আমাদের মনে থাকতে হবে যে বাবা-মা, যে দাদা-দাদি একদিন কত কষ্ট করে, কত আদর-যত্ন করে আমাদের মানুষ করেছেন। রোগে-শোকে তারা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের প্রতিপালন করেছেন। আমাদের কোন কষ্ট তাঁরা দেননি। আমাদের জন্য সারাক্ষণ প্রবীণরা চিন্তাভাবনা করেছেন। প্রবীণদের মাথায় চিন্তা ছিল কীভাবে ছোটদের বড় করা যায়, আদর্শ মানুষ করা যায় সার্বিক ক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়ে তোলা যায়। এই সমস্ত সুন্দর ও সৎ চিন্তাই তাদের মাথায় ছিল। সন্তানদের সামান্য কষ্টে বাবা-মা বিচলিত হয়ে পড়তেন। অস্থির হয়ে পড়তেন তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত। এসব কথা চিন্তা-ভাবনা করে আমাদের মহান দায়িত্ব হলো প্রবীণদের সেবা করা। প্রবীণ বলতে শুধু আমরা আমাদের মা, বাবা-দাদা-দাদিকেই শুধু বুঝব না। আমাদের পরিবারের বাইরে যারা প্রবীণ রয়েছেন তাদেরও বুঝিয়ে থাকব। সব প্রবীণের প্রতি আমরা সেবার হাত বাড়িয়ে দেব। প্রবীণের খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা সেবায় আমরা যত্ন সহকারে খোঁজ নেব। শুধু তাদের খাওয়া-দাওয়া নয় মানসিক দিক হতে তারা যাতে সুস্থ থাকেন এ বিষয়েও আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ছোটবেলায় প্রবীণরা যে ভালবাসা ও আদর-যত্ন করেছিলেন এমনি ভালবাসা, আদর-যত্ন প্রবীণদের দিতে হবে। বাবা-মা ছোটবেলায় যেভাবে নানা আদর মাখা গল্প শুনিয়ে আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করতেন একইভাবে সন্তানের উচিত হবে পিতা-মাতার মুখে হাসি ফোটানো তারা যাতে কোন কারণে মনে কষ্ট না পায় সেদিকে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখব। আমাদের সংসার জীবনের সঙ্গে প্রবীণদের সম্পৃক্ত রাখব। এমন ব্যবহার আমরা কখনই করব না তারা নিজেকে অসহায় মনে করেন। বিচ্ছিন্ন মনে করেন। শুধু বাড়ির প্রবীণ নন, প্রতিবেশীর প্রবীণদের একইভাবে সেবা-শুশ্রƒষা করব। বিমাতাসুলভ আচরণ করব না। এ কথা চির সত্য যে, আমরা প্রকৃতির নিয়মে একদিন প্রবীণ হব। আমরা যদি প্রবীণের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি, প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন না করি তাহলে একদিন এর প্রতিফল আমরা পাব। কয়া গোলাহাট, সৈয়দপুর থেকে
×