ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জান্নাতুন আরা আহমেদ

বদলে যাওয়া মূল্যবোধ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১৮ অক্টোবর ২০১৮

বদলে যাওয়া মূল্যবোধ

বর্তমান পৃথিবীতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ায় মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে (বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর)। ফলে বেড়েছে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা। প্রায় প্রতিটি পরিবারে প্রবীণ সদস্য আছেন। কিন্তু নানা কারণে পরিবারে তারা যথাযোগ্য যত্ন বা মর্যাদা পান না। যে মানুষটি একদা কর্ম-চঞ্চল ও উপার্জনক্ষম ছিলেন, যিনি তার কর্ম-জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে, স্নেহ, ভালবাসায় আর ঐকান্তিক চেষ্টায় যে সন্তানকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেন, সময়ের ব্যবধানে সেই সন্তানই তাকে পরিবারের বোঝা মনে করে, অনাদর-অবহেলায় দূরে ঠেলে দেয়। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক (বিপতœীক) জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে একটি বহুতল ভবন তৈরি করে ছেলেমেয়ের নামে লিখে দেন। পরবর্তীকালে ছেলেমেয়েরা তাকে আশ্রয় দিতে গড়িমসি করে। একপর্যায়ে পিতার দায়িত্ব একজন আরেকজনের ওপর চাপাতে চেষ্টা করে। ফলে তাকে তার জীবন ধারণের জন্য এ বাড়ি-ও বাড়ি ঘুরতে হয়। হয়ত তার শেষ পর্যন্ত আশ্রয় হবে ‘বৃদ্ধাশ্রমে’। এই ব্যবস্থা সেই পিতার জন্য কতখানি কষ্টের তা ছেলেমেয়েরা কেউ বুঝতেই পারল না। এর কারণ কি? সময়ের বিবর্তনে মানুষের জীবনের মূল্যবোধ বদলে গেছে। মানুষের কর্মব্যস্ততাও অনেকাংশে দায়ী। ফলে পিতা-মাতার খোঁজখবর নেয়ার ও তাদের সঙ্গ দেয়ার সময় ঠিকমতো করে উঠতে পারে না। এখানে একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রবীণদের সমস্যা তুলনামূলকভাবে গ্রামে কম, শহরে বেশি। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও, প্রবীণদের প্রতি তাদের সন্তানরা অনেক বেশি সহানুভূতিশীল ও কর্তব্যপরায়ণ। শহরের মানুষরা পার্থিব জীবনের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকে বলে, পিতা-মাতার প্রতি খেয়ালটুকু ঠিকমতো রাখতে পারে না। কি করণীয়? প্রবীণদের প্রতি প্রাথমিক কর্তব্য তাদের পরিবারকেই নিতে হবে। প্রবীণরা তাদের পরিবারদের মধ্যেই থাকতে চান। পরে সমাজের কর্তব্য। তবে আমাদের দেশে সমাজকে সেভাবে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। বিদেশে সমাজ এগিয়ে এসেছে প্রবীণদের কল্যাণের জন্য। শেষে আসে সরকার। সুখের বিষয় বর্তমান সরকার প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সরকারের কিছু প্রচেষ্টা আছে তাদের প্রতি যেমন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, সরকারী চাকরিজীবীদের চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি। পরিবারের সবার প্রতি আমার আবেদন, তারা যেন সব সময় প্রবীণদের পাশে থাকেন। মনে রাখতে হবে তারাও একদিন প্রবীণ হবে তাই আমাদের উচিত তাদের ভালবাসা আর সেবা দেয়া। অর্থও প্রয়োজন কিন্তু ‘কড়ি দিয়ে সব কেনা যায় না।’ আমার দুটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব : (১) প্রবীণদের (৬৫-এর ওপরে) কেনা সঞ্চয় পত্রের সুদ কমানো যাবে না। (২) প্রবীণদের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো যাতায়াতে (ট্রেন/বাস) কনসেশন দেয়া। মিরপুর, ঢাকা থেকে
×